নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দুই পরস্থ হল বৃষ্টি, ম্যাচ নামিয়ে আনা হলো ১৯ ওভারে। উইকেট খুব বোলিং সহায়ক ছিল না। তবে কন্ডিশন এ দিন সৃষ্টি করেছিল একটু ভিন্ন আবহ। বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হয় ১৫ মিনিট দেরিতে। আকাশ ছিল মেঘলা, বাতাস শীতল। শঙ্কা ছিল আরও বৃষ্টির। চিটাগং অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম টস জিতে তবু বেছে নেন ব্যাটিং। ১ ওভার পরই নামে বৃষ্টি। আধ ঘণ্টা পর খেলা আবার শুরু হয় ম্যাচ ১ ওভার কমিয়ে। চিটাগং বিপদে পড়ে খেলা শুরু হওয়া মাত্রই। আর তাতে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে রান জোয়ারের মাঝেই দেখা গেল উল্টো স্রোত। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারল না চিটাগং ভাইকিংসের ব্যাটিং, থামল ১১৬ রানে। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় তামিমের ফিফটিতে ১৪ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে তরী ভেড়ায় ইমরুলের দল। নিজ শহরের মাঠে চিটাগং হারল টানা তিন ম্যাচ। ঢাকায় ৭ ম্যাচে ৬ জয় নিয়ে চট্টগামে এসে সেই দলটিই বন্দী হারের বৃত্তে। ১০ ম্যাচে ৭ জয়ে কুমিল্লা আপাতত উঠে গেল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।
গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই ধুঁকেছে চিটাগংয়ে ব্যাটিং লাইনআপ। শুরুটা করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। নিজের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলটি দিলেন ওয়াইড। পরের বলে কোনমতে ঠেকিয়ে দেন সাদমান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরের বলেই এলবির ফাঁদে পড়ে পথ ধরতে হয় প্যাভিলিয়নের। ওই ওভারেরই শেষ বলে ইয়াসির আলীকে এভিন লুইসের তালুবন্দী করান এই পেসার। দুজনের কেউই দেখা পান নি রানের।
পরের আঘাতটা আরো বড়। দলের নির্ভরতার প্রতীক মুশফিককে ফিরিয়ে চিটাগংয়ের বিপদে বাড়ান আগের দিনের হাটট্রিকম্যান ওয়াহাব রিয়াজ। এই পাকিস্তানী পেসারের বলে মাত্র ৬ রান করে উইকেটের পিছনে এনামুল হক বিজয়ের হাতে ধরা পড়েন ভাইকিংস অধিনায়ক। মেহেদী হাসান নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই তুলে নেন নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। এবার লং লেগে দারুণ এক ক্যাচে এই আফগানকে তালুবন্দী করেন সাইফউদ্দিন। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান দুই ছক্কায় করেন ১৩ রান।
ক্যামেরন ডেলপোর্টও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি কুমিল্লা নিয়নন্ত্রিত বোলিংয়ে। এবার শিকারি শহীদ আফ্রিদী। ৬ রান করা এই প্রোটিয়াকে শামসুর রহমান শুভর কাচে পরিণত করেন পাকিস্তানী সাবেক অলরাউন্ডার। নিজের পরের ওভারে এসে দারুণ এক গুগলিতে সিকান্দার রাজাকে (৫) বোল্ড করেন বুমবুম তারকা।
বাকিদের আসা যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রাখা মোহাম্মদ শাহজাদ ছিলেন অবিচল। নিজের স্বভাবসূলভ মারমুখী না হয়ে ধীর বাটিংই কাল হল শেষ পর্যন্ত। ছটফট করে রানআউটের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ৩৫ বলে ৩৩ রান করে। এই আফগান ব্যাটিং দানবের চার ছক্কাও অবাক করার মত, দুই চারের বীপরিতে ছক্কা হাঁকিয়েছেন মাত্র একটি!
এরপরই দলকে দিশা দেখাতে থাকেন মোসাদ্দেক হোসেন। সঙ্গী আর বলের ওভাবে ফিফটি না পেলেও ২৫ বলে তিনটি করে চার-ঝক্কায় খেলেছেন অপরাজিত ৪৫ রানের ঝড়ো ইনিংস। দলও পায় একশোর্ধ ইনিংস (১১৬)। স্বাগতিক শিবিরে ধ্বস নামাতে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন, ওয়াহাব রিয়াজ ও শহীদ আফ্রিদী।
ফিল্ডিংয়ের সময় পায়ে টান পড়ায় ব্যাটিংয়ে নামেননি আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এভিন লুইস। জিততে তবু সমস্যা হয়নি, ১৬.৪ ওভারেই জয়ের বন্দরে তরী ভেড়ায় কুমিল্লা। তবে সাবধানী পথচলার শুরতেই হোঁচট খায় ব্যার্থতার বলয়ে থাকা এনামুল হক বিজয়রে উইকেট পতনে। দীর্ঘকায় খালেদ আহমেদের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পিছনে শাহজাদের গ্লাভসবন্দী হবার আগে করতে পারেন মাত্র ৮ রান।
সেই দুশ্চিন্ত ব্যাট হাতে ঝেটিয়ে বিদায় করেন তামিম ইকবাল। অপরাজিত ঝলমলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন চট্টগ্রামের এই লোকাল বয়। জাতীয় দলের তারকা ওপেনারের ৫১ বলের ধৈর্য্যশীল ইনিংসটি ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় মোড়ানো। এবারের আসরের দ্বিতীয় ফিফটির পথে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম ছুঁয়েছেন ৫ হাজার টি-টোয়েন্টি রানের মাইলফলক।
আবু জায়েদের বলে সিকান্দার রাজার হাতে তালুবন্দী হবার আগে ২২ বলে ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পথে শামসুর হাঁকিয়েছেন ৩টি চার ও দুটি ছক্কা। ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেন নি ইমরুল কায়েস। জায়েদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেবার আগে ৮ রান করেন কুমিল্লা অধিনায়ক। বাকিটা পথ থিসারা পেরেরাকে নিয়ে নির্বিঘেœ কাটিয়ে দেন তামিম। ‘চিটাগং ডার্বি’ হিতে নেয় কুমিল্লা। পেরেরার অপরাজিত ৭ বলে ১০ রানের ইনিংসেও আছে একটি ছক্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং ভাইকিংস : ১৯ ওভারে ১১৬/৮ (শাহজাদ ৩৩, সাদমান ০, ইয়াসির ০, মুশফিক ১৩, নাজিবউল্লাহ ১৩, দেলপোর্ত ৬, রাজা ৫, মোসাদ্দেক ৪৩*, নাঈম ৪, আবু জায়েদ ০*; আবু হায়দার ৩-০-২১-০, সাইফ ৪-০-২৩-২, ওয়াহাব ৪-০-২৩-২, মেহেদি ২-০-১৭-১, আফ্রিদি ৪-০-১০-২, থিসারা ২-০-২২-০)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৬.৪ ওভারে ১১৭/৩ (তামিম ৫৪*, এনামুল ৮, শামসুর ৩৬, ইমরুল ৮, থিসারা ১০*; আবু জায়েদ ৪-০-২৫-২, নাঈম ৪-০-২৬-০, খালেদ ৩.৪-০-২৫-১, মোসাদ্দেক ২-০-১৪-০, দেলপোর্ত ২-০-১৯-০, রাজা ১-০-৮-০)।
ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : শহীদ আফ্রিদী (কুমিল্লা)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।