চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
শেষ
তবে এক মজলিস অপর মজলিস অপেক্ষা উত্তম। এক মজলিসে দোয়া করা হচ্ছে। এই দোয়া আল্লাহ কবুল করতে পারেন আবার কবুল করতে নাও পারেন। অপর মজলিসে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, এরাই উত্তম। এই বলে রাসূল (সা.) ইলমে দ্বীন শিক্ষার মজলিসে বসে গেলেন। (দারেমী)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন- “রাতের কিছু সময় ইলমে দ্বীন সম্পর্কে আলোচনা করা পূর্ণ রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করা অপেক্ষা উত্তম। (দারেমী)।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত অন্য এক খানা হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- “একজন আলেম শয়তানের পক্ষে হাজার হাজার আবিদ অপেক্ষাও উত্তম অর্থাৎ শয়তান কর্তৃক হাজার হাজার আবিদকে পথভ্রষ্ট করা সম্ভব হলেও একজন আলেমকে সেই শয়তান কখনও পথভ্রষ্ট করতে পারবে না (তিরমীজি ও ইবনে মাজাহ)। হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- “যে ইলমে দ্বীন অনুসন্ধানে বের হয়েছে সে মূলত আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছে, যে পর্যন্ত না সে প্রত্যাবর্তন করে” (তিরমীজি ও দারেমী)। ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দানের অশেষ গুরুত্ব বিষয়ক আরো কয়েক খানা হাদীস নিম্নে উপস্থাপন করা হল:-
১. হযরত আয়শা রা. বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-“আল্লাহপাক আমার কাছে ওহী পাঠিয়েছেন, যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন শিক্ষার উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করবে, তার জন্য আমি জান্নাতের পথ সহজ করে দিব এবং যে ব্যক্তির দুই চক্ষু আমি নিয়ে গিয়েছি তাকে তার পরিবর্তে আমি জান্নাত দান করব। ইবাদত অধিক হওয়া অপেক্ষা ইলম অধিক হওয়া উত্তম। দ্বীনের আসল হচ্ছে সন্দেহের জিনিস থেকে বেঁচে থাকা (বায়হাকী)। ২। হযরত হাসান বসরী (রা.) বর্ণিত হাদীসে আছে- রাসূল (সা.) কে বনি ইসরাঈলের দুজন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। এদের একজন ছিলেন আলেম যিনি শুধু ফরজ নামাজ আদায় করতেন এবং লোকদের ইলম শিক্ষা দান করতেন। অপর ব্যক্তি যিনি সারাদিন রোজা রেখে কাটাতেন এবং সারারাত্রি নামাজে থাকতেন, এদের মধ্যে শ্রেষ্ট কে? রাসূল (সা.) জবাবে বললেন- যে সারাদিন রোজা রাখে এবং সারারাত নামাজে কাটায় সেই আবিদ অপেক্ষা যে আলেম শুধু ফরজ নামাজ আদায় করেন এবং লোকদেরকে দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেন সেই আলেম শ্রেষ্ট । যেমন আমার ন্যায় রাসূলের ফজিলত তোমাদের একজন সাধারণ লোকের উপর” (দারেমী)।
৩. হযরত মুআবিয়া (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- “আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে ‘ইলমে দ্বীন’ দান করেন এবং আমি শুধু মাত্র বণ্টনকারী, আর আল্লাহই দান করেন” (বুখারী-মুসলিম)। ৪. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘মানুষ মারা যাবার পর সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়- তবে তিনটি আমলের সওয়াব জারি থাকে- ১. সদকায়ে জারিয়া। ২. উপকারী ইলম। ৩. নেক সন্তান- যে তার জন্য দোয়া করে” (মুসলিম)। ৫. হযরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) বর্ণিত হাদীসে আছে- “রাসূল (সা.) এর দরবারে দুজন লোক সম্পর্কে আলোচনা করা হল। এদের একজন আবিদ অপরজন আলেম। রাসূল (সা.) বললেন- আবিদের উপর আলেমের ফজিলত যথা- আমার ফজিলত তোমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির উপর।
অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন- আল্লাহপাক, তাঁর ফেরেস্তাগণ, আসমান-জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি পিপীলিকা তার গর্তে আর মাছ- যে ব্যক্তি মানুষকে ইলম শিক্ষা দেয় তার জন্য দোয়া করে”। (তিরমীজি)।
৬. হযরত সাখবারা আজদী (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করবে তার জন্য তা তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে” (তিরমীজি ও দারেমী)। ৭. হযরত হাসান বসরী (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- “ইলম অর্জন অবস্থায় যার মৃত্যু হবে জান্নাতে তার ও নবীদের মধ্যে মাত্র এক ধাপের পার্থক্য থাকবে (দারেমী)।
মানব জীবনে ইলমে দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ইলমে দ্বীন মানুষকে সৎ ও মহৎ করে তোলে। সুশীল সমাজ গড়ে তোলার একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে ইলমে দ্বীন। সেই ইলমে দ্বীনের ফজিলত বর্ণনা করে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই ইলমে দ্বীন অন্বেষনকারী, পিতা-মাতার অনুগত সন্তান এবং স্বামীর অনুগত স্ত্রী বিনা হিসাবে নবীগণের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। অন্য হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই ফেরেস্তাগণ ইলমে দ্বীন অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য তাদের পায়ের নীচে তাদের ডানা সমূহ বিছিয়ে দেন”। ইলমে দ্বীন অন্বেষণকারী বা একজন আলেমের শান ও মহিমা বর্ণনা করে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- “একজন আলেম বা তালিবুল ইলম যখন কোন গ্রামের উপর দিয়ে গমন করেন তখন আল্লাহপাক সেই আলেম বা তালিবুল ইলিমের সম্মানে সেই গ্রামের মুর্দাদের কবরের আজাব চল্লিশ দিনের জন্য উঠিয়ে নেন”। নবী (সা.) অন্য একখানা হাদীসে ইরশাদ করেন-“যে ব্যক্তি একজন তালিবুল ইলম বা ইলমে দ্বীন অন্বেষনকারীকে সম্মান করলো সে যেন সত্তরজন নবীকে সম্মান করলো।
সন্ত্রাস ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ইলমে দ্বীন। ইলমে দ্বীন ব্যতীত মানবাত্মার বিকাশ সাধন সম্ভব নয়। দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও মুক্তি লাভের লক্ষ্যে ইলমে দ্বীন শিক্ষায় এগিয়ে আসা আমাদের সকলের উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।