বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
‘খবরদার! বিদেশী কোন ছেলের কাছে বিয়ে বসবা না’ - স্কুল ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ছাগলনাইয়া থানার ওসি এম এম মুর্শেদ এমন উপদেশের ভিডিও ফেইসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। সেই ঝড়ে বক্তব্যের একদিনের মাথায় দুঃখ প্রকাশ করলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
গতকাল বুধবার বিছাছড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও মোবাইলের অপব্যবহার রোধ আয়োজিত জনসচেতনতামুলক
সভায় বক্তব্যের এক পর্যায়ে ছাগলনাইয়া থানার ওসি এম এম মুর্শেদ বলেন, ‘খবরদার! বিদেশী কোন ছেলের কাছে বিয়ে বসবা না। ঠিক আছে। হাইসো না। আমার
কথাটা শোন। কারণ তারা তোমাকে কাজের মানুষ হিসেবে ট্রিট করে। তোমাকে সে বিয়ে করে চলে গেলো, তিন বছর পরে আসবে। তোমার শশুর শাশুড়ি তোমাকে
ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে দেখা গেলো ..... আমরা রেগুলার এটা ফেইস করতেছি। তার চেয়ে তুমি একটা দেশে কাজ করে, এই ধরনের একটা ছেলেরে বেছে নেবা। সুখে
থাকবা, ভালো থাকবা। ঠিক আছে। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে একটু বুদ্ধি বেশি। তো তোমরা এই জিনিসগুলো মাথায় রাখবা। মা বাবাকে বুঝাবা। একান্ত যদি মানতে না চায়, ৯৯৯ একটা নাম্বার আছে। ওই নাম্বারে ফোন দিবা।’
ওসির এই বক্তব্যের ভিডিও ফেইসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পরে ফেইসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। সোহেল রানা মিলকি তার ফেইসবুকে লিখেন, ঐ পুলিশকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, নইলে প্রবাসীরা বিদেশে বাংলাদেশী এ্যাম্বাসি ঘেরাও করবে।
ইজ্জত আলী লিখেন, প্রবাসী যত সংগঠন আছে যত দেশে, তাদের সবার উচিৎ তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করা, দূতাবাস ঘেরাও করা, আল্টিমেটাম দেয়া, যতক্ষণ ক্ষমা চাইবে না, কর্তৃপক্ষ শাস্তি নিশ্চিত করবে না, প্রবাসীরা রেমিটেন্স সরকারি পথে পাঠান বন্ধ করে দিবে, স্টাইক চলবে। এই পুলিশ প্রবাসীদের পদে পদে বিমান বন্দর থেকে শুরু করে পাসপোর্ট অফিস সব জায়গাতে প্রবাসীদের হেয় করে।
মোহাম্মদ জলিল লিখেন, অত্যন্ত দুঃখজনক আমি বলব পুলিশ কর্মকর্তা উনি এইভাবে না বললেও পারতেন। কারণ হলো প্রবাসীরা কিন্তু দুঃখের ব্যথা বেদনা এমনি কিন্তু তাদের জীবন শেষ। তারপরে আবার কিছুদিন পর পর একটা করে নতুন নতুন ব্যথা বিদেশীদেরকে দেওয়া কোন যৌক্তিকতা নেই। একদিক দিয়ে বলে বিদেশিদের টাকায় দেশের চাকা সচল থাকে এবং ইনি বিদেশীদেরকে দিয়ে আবার এমন আপত্তিকর কথা কাকে বলে, যা মেনে নেওয়া যায় না। যাই হোক যারা প্রবাসীদেরকে নিয়ে এ পর্যন্ত যত আপত্তিকর কথাবার্তা বলেছেন। সকলের কাছে অনুরোধ করব, আমরা আর ব্যথা সইতে পারছি না। দয়া করে আমাদেরকে আর নতুন করে কোন ব্যথা দিবেন না সকলকে আল্লাহ হেদায়েত করুক।
মুরাদ পারভেজ কমেন্টে বলেন, আপনার গায়ের পোশাকের টাকাটা কোথায় থেকে আসে জানেন? প্রবাসিদের রেমিটেন্সের টাকা থেকে। আপনার পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য যে বেতন টা পান, সেই টাকাটা কোথায় থেকে আসে জানেন? প্রবাসীদের রেমিটেন্সের টাকা থেকে। আপনি চলাফেরার জন্য সরকার থেকে যে গাড়িটা পেয়েছেন সেই গাড়িটা কেনা হয়েছে কোন টাকা দিয়ে জানেন, প্রবাসীদের রেমিটেন্সের টাকা দিয়ে। আপনি ভাব নিয়ে যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলেন সেই রাস্তাটা বানানো হয়েছে কার টাকা দিয়ে জানেন? প্রবাসীদের রেমিটেন্সের টাকা দিয়ে। তাহলে আপনি যাদের টাকায় খান, যাদের টাকায় পরেন, যাদের টাকায় ভাব নিয়ে চলাফেরা করেন তাদের সম্পর্কে এইরকম একটা কথা বলতে কি বুকটা একবারও কাঁপলোনা? মনে রাখবেন প্রবাসীরা যদি একমাস টাকা পাঠনো বন্ধ করে দেয় আপনার মত পুলিশদের পরিবার চলবে না। আর এগুলো আপনি বুঝবেনই বা কি করে আপনি তো সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন নাই, তাই বুঝার জ্ঞানটাও অর্জন করতে পারেন নাই। যেটা আপনার কথার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।
এদিকে নেটিজেনদের এই তোপের মুখে আজ বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় ওসি এম এম মুর্শেদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার বক্তব্যকালে বাল্যবিবাহ রোধ সংক্রান্ত বক্তব্য প্রদান করা হয়। ছাগলনাইয়া প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। অত্র এলাকায় প্রায়শঃ দেখা যায় যে, অভিবাবকরা তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের প্রবাসী পাত্র পেলেই জোর করে তাদেরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দিয়ে থাকে, যাহা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং বাল্য বিবাহ। আমি যাতে কোন অবস্থাতেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন মেয়ে ১৮ বছরে নীচে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহে রাজি না হয়, সেজন্য তাদেরকে সচেতন করি। আমি এখানে আমার বক্তব্যে প্রবাসী ভাইদের খাটো করে তাদের মনে কষ্ট দিয়ে কোন বক্তব্য প্রদান করি নাই। কারণ প্রত্যেক পরিবারে প্রবাসী আছে, এমনকি আমার পরিবারেও আছে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে এদেশের উন্নতি হচ্ছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা তাদের কাছে ঋণী। আমি শুধু মাত্র কোন অবস্থাতে যাতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েরা প্রবাসী পাত্র পেলেও বিয়েতে রাজি না হয়। কারণ একটি ভুলের জন্য তাকে সারা জীবন কষ্ট করতে হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে বিবাহ করে সন্তান প্রসবের সময় সন্তান ও মায়ের মৃত্যু ঘটে, যা আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। আমি এব্যাপারে ছাত্রীদের সতর্ক করার জন্য, সচেতন করার জন্য এবং শিক্ষকদের এব্যাপারে ভুমিকা রাখার জন্য আমি আমার বক্তব্য প্রদান করি। আমি কোন প্রবাসীকে মনে কষ্ট দেয়ার জন্য বা তাদেরকে ছোট করার জন্য কোন বক্তব্য প্রদান করি নাই। আমরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভিডিওর জন্য যদি কেউ মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।