Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুঃখ প্রকাশের মতো কিছুই দেখছেন না মাশরাফি

প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : গত রোববার রাতে রিভিউ আপীলে জিতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারকে ফিরিয়ে দেয়ায় মাশরাফিদের উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেক কিছুই হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের উৎসবের ধরনটা হয়নি পছন্দ জস বাটলারের। ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে মেজাজ হারিয়ে তেড়ে গেছেন বাংলাদেশ ফিল্ডারদের দিকে। তাক্ষণিকভাবে তাকে নিবৃত্ত করেও ঘটনাটি সেখানে শেষ হয়নি। ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতে যেয়ে বেন স্টোকসের ঔদ্ধত্য আচরন দেখতে হয়েছে তামীমকে। ৩৪ রানে ম্যাচ জিতে সারা দেশে যখন চলছে উৎসব, তখন আইসিসি’র আচরণ বিধিভঙ্গের দায়ে মাশরাফিও সাব্বিরের ম্যাচ ফি’র ২৫ শতাংশ কর্তন করেছে ম্যাচ রেফারি। মাঠে অশোভন আচরণের জন্য বাটলারকে করেছেন তিরস্কার। মাশরাফি, সাব্বিরকে ১টি করে ডি মেরিট পয়েন্ট যোগ করে দিয়েছে আইসিসি। তবে ম্যাচ রেফারির এমন বিচারের পরও ওই ঘটনার রেশ রয়ে গেছে। চট্টগ্রামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ সামনে রেখে যেখানে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দূর্ভাবনার কারণ হওয়ার কথা দল দু’টির, সেখানে ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বড় ইস্যু রোববারের ওই ঘটনা !
ওই ঘটনা ভুলে সিরিজের শেষ ম্যাচের দিকে মনোযোগ দিতে চান মাশরাফিÑ‘উইকেট পাওয়ার পর আমরা স্রেফ সেলিব্রেট করছিলাম, ব্যাপারটা এভাবে দেখাই ভাল। এবং এই ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবেই নেয়া উচিত। উইকেট পেলে সব দলই উদযাপন করে। ম্যাচ রেফারি হয়তবা ভেবেছেন উৎসব উদযাপন কোড অব কন্ডাক্টের মধ্যে থাকেনি। এসব বাদ দিয়ে আমরা কালকের (আজ) ম্যাচে মন দিচ্ছি।’ সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ওই ঘটনা ক্রিকেটারদের মনোসংযোগে বিঘœ ঘটাতে পারে, তা মনে করছেন না মাশরাফি- ‘টেনশন, হতে পারে। তবে আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করব স্বাভাবিক থাকতে, ক্রিকেটে মন দিতে। সবকিছুর ওপরে ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। চেষ্টা করব মাঠের খেলা ঠিকমত খেলতে। প্রতিটি ম্যাচের মতোই শুরু করতে চাই। মাঠে তেমন কিছু হবে না, এমনটাই আশা করছি। আশা করছি ভালো একটি ম্যাচ হবে।’
ওই ঘটনায় ম্যাচ রেফারির শুনানীর মুখে পড়তে হয়নি মাশরাফি, কিংবা সাব্বিরকে। তবে উদযাপন মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় যে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটাদের বিপক্ষে, তাতে দুঃখ প্রকাশের কিছুই দেখছেন না বাংলাদেশ অধিনায়কÑ‘সত্যি বলতে কি, আমরা কোনো ভুল করিনি। এখানে স্যরি বলার কিছু নেই। আমরা স্রেফ উদযাপন করেছি। তাই প্রকাশ কার কিছু নেই। যা হয়েছে, তা ম্যাচ রেফারি দেখেছেন। আমি জানিও না মাঠে কি হয়েছে। আমার আর সাব্বিরের ২০ শতাংশ জরিমানা হয়েছে। আমি এখনও মনে করি, ছেলেরা ¯্রফে উদযাপন করেছে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ঘটনার জন্ম অতীতে কখনো দেয়নি বাংলাদেশ, সে কারণেই আইসিসি’র কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গের দায়ে ম্যাচ রেফারির বিচার ২০শতাংশ ম্যাচ ফি কর্তন আদৌ কতটা যুক্তিসঙ্গত, তামীমকে অভিযুক্ত করে বেন স্টোকস টুইটার বার্তায় যে মন্তব্য করেছেন তা জানতে বার বার তামীম-বেন স্টোকসের বচসা’র ভিডিও দেখেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ওই ভিডিওতে তামীমের অশোভন আচরণের লেশমাত্র ছিল না বলে গতকালকের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন মাশরাফিÑ ‘ভিডিওটা আমি দেখেছি। তামীমের কোনো দোষ খূঁজে পাইনি। আমি ওদেরও দোষ দিচ্ছি না। আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই ওদের সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়েছিলাম। প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পরও আমরা এভাবেই ওদের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছি। জয়ের পরও সেভাবেই গিয়েছিলাম। আমি তামীমের সামনেই ছিলাম। ও কিছু করেছে বা বলেছে, তা আমি শুনিনি। কারো দোষ থাকলে হিট অব দ্য মোমেন্টে সে তা করেছে। আমাদের সেলিব্রশনটা হয়ত এখন কোড অব কন্ডাক্টের ভেতরে ছিল না, তাই হয়তবা জরিমানা হয়েছে। মাঠে উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে অনেকে এভাবেই অনেক উল্লাস করে। এমনকি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা যখন অস্ট্রেলিয়ায় জিতেছি, তখন এভাবেই উল্লাস করেছি। অবশ্য তখন এই ধরণের আইন ছিল না।’
মাঠে সবচেয়ে শৃঙ্খলিত দল বলে ক্রিকেটের স্পিরিট অ্যাওয়ার্ড এর আগে আইসিসি’র পক্ষ থেকে পেয়েছে বাংলাদেশ দল। মাঠে সেøজিংয়ের অভিযোগে অতীতে কখনোই অভিযুক্ত হয়নি বাংলাদেশ দল। অথচ, গত বছর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ফলো থ্রুতে দাঁড়িয়ে থাকা নিস্পাপ মুস্তাফিজুর রহমানকে কনুই দিয়ে কি জোরেই না আঘাত দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনী! ওয়ানডে অভিষেকে বিস্ময় বোলিংয়ে সবার বাহাবা পাওয়া ছেলেটি ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়ার পরও উল্টো মুস্তাফিজের ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ কর্তন করেছেন ওই সিরিজের ম্যাচ রেফারি এন্ডি পাইক্রফট। গত বছরের ওই অবিচারই শুধু নয়, এ বছরে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশের ইনিংসের সময়ে কারণে, অকারণে সময় ক্ষেপণ করে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন। এই অপকৌশলে বাংলাদেশের চেয়ে ৬ মিনিট বেশি ফিল্ডিং করেও আইসিসি’র বিচারে নির্দোষ ধোনী! উল্টো সেøা ওভার রেটের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে মাশরাফির ম্যাচ ফি ২০ শতাংশ করা হয়েছে কর্তন, বাংলাদেশের অন্য খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি সেখানে কেঁটে নেয়া হয়েছে ১০ শতাংশ হারে।
১৬ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ভদ্রতার পরিচয় দিয়ে, মাঠে এবং মাঠের বাইরে অন্যদের অন্যায় সইতে সইতে একটি আউটে উৎসবের মধ্যে বাড়াবাড়ির কি পেলেন, তা বোধগম্য নয় মাশরাফিরÑ‘পেছনে দিকে তাকালে বলব, ১৬ বছরে অনেক কথা শুনে খেলেছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অনেক সময়ই অনেক কিছু শুনেছে। অন্যায় কিছু দেখিনি। হয়তবা হিট অব দ্য মোমেন্ট কিছু হতে পারে। তবে তা নিয়ে বাড়াবাড়ির কিছু দেখিনি। এই ঘটনাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে হবে। ম্যাচ রেফারি সেখানে ছিলেন, ভুল যা পেয়েছেন, সে অনুযায়ী জরিমানা করেছেন। আমারও নিজের ম্যাচ ফি কাটা হয়েছে। আমি তা মেনেও নিয়েছি।’
ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে তাহলে একটু বেশিই উত্তপ্ত হচ্ছে। ট্রফি নির্ধারণী ম্যাচের উত্তাপটা লাগিয়ে দিয়েছে জস বাটলার, বেন স্টোকস। তাদের অশোভন আচরণ, মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার জবাব দেয়ার মঞ্চ প্রস্তুত চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। অপরাধী না হয়েও যেখানে অপরাধের দায়টা চেপেছে, তাতে তো তেতে ওঠারই কথা বাংলাদেশ দলের! মেলবোর্নে আইসিসি’র পক্ষপাতের জবাব দিয়েছে মাশরাফিরা মিরপুরে। এবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অবিচারের জবাব দেয়ার পালা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।



 

Show all comments
  • জামিল ১২ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:৪১ এএম says : 1
    বসের কথা বসের মতই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুঃখ প্রকাশের মতো কিছুই দেখছেন না মাশরাফি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ