নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
মিরাজের জার্সিতে তার নামের জায়গায় লেখা ‘মিনারা’, মুস্তাফিজের ‘মাহমুদা’, সানির জার্সিতে ‘নার্গিস’। এমনকি বিদেশী তারকা ক্রিস্টিয়ানের সার্জিতে জ্বলজ্বল করছে ‘মার্জরি’, উদানার ‘হেমা’, ডেসকাটের পিঠে আঁকা ইনগ্রিড! কোন ভুল হলো কী? একদম না! এমনটি যে হবে তা আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিল রাজশাহী কিংস। ক্যালেন্ডারের হিসিবে ‘মা দিবস’ ছিল না গতকাল। কিন্তু তারপরও মায়েদের সম্মান দেখাতে জার্সিতে গতকাল মায়ের নামাঙ্কিত জার্সি পরে মাঠে নেমেছিল কিংসরা। তখন ধারাভাষ্যে ড্যানি মরিসন বললেন, মায়েদের জন্য কি আর আলাদা দিবসের দরকার হয়, প্রতিটা দিনই তো মা দিবস।’
ম্যাচের আগে তাদের কণ্ঠে ছিল প্রত্যয়, জয় দিয়ে উপলক্ষ্যটি উৎসর্গ করতে চান মায়েদের। সেই প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন দেখা গেল পারফরম্যান্সে। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচটা জিতে মায়েদের ঠিকই গৌরবান্বিত করেছেন রাজশাহীর বোলাররা। হারিয়ে দিল তারা অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকা ঢাকা ডায়নামাইটসকে। এবারের বিপিএলে পঞ্চম ম্যাচে এসে প্রথম হারের তোতো স্বাদ পেল সাকিব আল হাসানের দল। রাজশাহী তাদের হারিয়ে দিয়েছে ২০ রানে। সাকিবরা আসলে হারলেন ‘মিনারা’-‘নার্গিস’দের কাছেই, মায়েদের কাছেই!
খুব বড় পুঁজি গড়তে পারেনি রাজশাহী। প্রায় ৫ বছর পর টি-টোয়েন্টি ও ৬ বছর পর বিপিএল খেলতে নেমে ৩১ বলে ৪৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন মার্শাল আইয়ুব। কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতায় রাজশাহী ২০ ওভারে তুলতে পারে ১৩৬ রান। দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেই রানকেই তারা প্রমাণ করেছে যথেষ্ট। ঢাকা থমকে গেছে ১১৬ রানে।
রাজশাহীর চমকের শুরু ছিল এ দিন একাদশ দিয়েই। সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হকের জায়গা হয়নি একাদশে। দুজনের কেউই রান পাননি আগের ম্যাচগুলোয়। এরপরও এমন দুজনকে বাইরে রাখা, শাহরিয়ার নাফীস ও মার্শালকে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। মরিয়া রাজশাহী হাঁটে সেই পথেই। আর একাদশে সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠলেন এ দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। নিজেদের কাজটা করলেন দারুণ ভাবেই। দ্বিতীয় উইকেটে গড়েছেন ৭৫ রানের জুটি।
মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন মৌসুমে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা শাহরিয়ার। আন্দ্রে রাসেলের ফুলটসে ক্যাচ দিয়ে মিরাজ ফেরেন ১ রানেই। তিনে নামেন মার্শাল। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর বিপিএলে তার প্রথম ম্যাচ, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। দারুণ চনমনে ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে ৪৫ রান করেন মার্শাল। মেরেছেন তিন চার আর দুই ছক্কা। যাচ্ছিলেন ফিফটির দিকেই। সুনীল নারিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন নাফীস।
এ জুটি ভাঙার পর তরুণ জাকির হাসানকে ৩৮ রানের জুটি গড়েন রায়ান ডেসকাটে। তবে রানের গতি সে অর্থে বাড়াতে পারেননি। পারেননি নিজেদের ইনিংসকে লম্বা করতে। এমনকি তারা আউট হওয়ার পর কোন ব্যাটসম্যানও জ্বলে উঠতে পারলেন না। ফলে রাজশাহীর ইনিংস থামল ১৩৬ রানে। ঢাকার পক্ষে ১৯ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নিয়েছেন নারিন।
ইনিংস বিরতিতে জয়ের সম্ভাবনায় এগিয়ে ছিল শক্তিশালী ঢাকা। কিন্তু রাজশাহীর বোলাররা বদলে দিল হিসাব। রান তাড়ায় ঢাকা তিন উইকেট হারায় প্রথম চার ওভারেই। নারাইনকে ঝড় তুলতে দেননি মিরাজ। হজরতউল্লাহ জাজাইকে দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড করেন ইসুরু উদানা। তিনে নেমে আন্দ্রে রাসেল একটি চার ও ছক্কা মারলেও তাকে ফেরান সানি। রনি তালুকদারকে নিয়ে সাকিব আল হাসান চেষ্টা করছিলেন ঘুরে দাঁড়াতে। কিন্তু সানিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেরেন সাকিব। সানি পরে বোল্ড করে দেন রনিকেও। একাদশ ওভারে ঢাকার রান তখন ৫ উইকেটে ৫৩।
ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ নাঈমকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন পোলার্ড। কিন্তু ক্রমেই বাড়তে থাকে প্রয়োজনীয় রান রেট। শেষ পর্যন্ত সেই দাবি মেটাতে পারেননি দুজন। ১৮ বলে ১৭ করে ফেরেন নাঈম, ২১ বলে ১৪ পোলার্ড। ঢাকার সম্ভাবনারই তখনই সমাপ্তি। শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহানের ১৪ বলে ২১ রানের ইনিংস ব্যবধান কমিয়েছে কিছুটা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজশাহী কিংস : ২০ ওভারে ১৩৬/৬ (মিরাজ ১, শাহরিয়ার ২৫, মার্শাল ৪৫, ডেসকাট ১৬, জাকির ২০, ইয়োঙ্কার ৯*, প্রসন্ন ২, উদানা ৩*; রাসেল ৩-১-১৭-১, রুবেল ৩-০-১৭-০, সাকিব ৪-০-২৯-১, নারাইন ৪-০-১৯-৩, আসিফ ২-০-১৫-০, আলিস ৪-০-২৯-১)।
ঢাকা ডায়নামাইটস : ২০ ওভারে ১১৬/৯ (জাজাই ৬, নারাইন ১, রাসেল ১১, রনি ১৪, সাকিব ১৩, পোলার্ড ১৩, নাঈম ১৭, সোহান ২১, রুবেল ০, আসিফ ৬*, আলিস ০*; উদানা ৪-০-৩৬-১, মিরাজ ৩-০-১৮-২, সানি ৪-১-৮-৩, রাব্বি ৪-০-২৪-১, মুস্তিাফিজ ৪-০-১৯-১, প্রসন্ন ১-০-৯-০)।
ফল : রাজশাহী কিংস ২০ রানে জয়ী।
ম্যা সেরা : আরাফাত সানি (রাজশাহী)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।