নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ঝুলি উইকেটশূণ্য! তার নামের পাশে যা একবারেই বেমানান। তাই বলে বৃথা যাবে কাটার মাস্টারের ২৪ বল তা-তো হতে পারে না। যায়ও নি। মাত্র ১৭ দিয়েই উইকেটের খামতি পুষিয়ে দিয়ে নায়ক তবু মুস্তাফিজুর রহমানই। বাঁহাতি এই পেসারের শেষ দুই ওভারের দুর্দান্ত বোলিংয়ের জবাব পেল না ব্যাটসম্যানরা। রংপুর রাইডার্সের মুঠো থেকে জয় বের করে আনল রাজশাহী কিংস।
গতকাল মিরপুরে বিপিএলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে রংপুর রাইডার্সকে ৫ রানে হারিয়েছে রাজশাহী কিংস। রাজশাহীর ১৩৫ রান তাড়ায় রংপুর থমকে যায় ১৩০ রানে। হোম অব ক্রিকেটে পেন্ডুলামের মতোই ঝুলছিলো ম্যাচের ভাগ্য। শেষ ৩ ওভারে রংপুরের প্রয়োজন ছিল ২১ রান। উইকেট ছিল ৫টি, ক্রিজে ছিলেন থিতু হয়ে যাওয়া রাইলি রুশো। সেই সহজ সমীকরণও রংপুর মেলাতে পারেনি মুস্তাফিজের বোলিং নৈপুণ্যে। অষ্টাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসে মুস্তাফিজ দেন ৪ রান। ইসুরু উদানার করা পরের ওভার থেকে আসে ৮ রান। ওভারের শেষ বলে আউট হন নাহিদুল ইসলাম।
শেষ ওভারে রংপুরের দরকার ছিল ৯ রান। মুস্তোফিজের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে অপর প্রান্তে চলে যান রুশো। ভুলটা সেখানেই করে ফেলেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই তারকা। পরের তিন বলে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেনি ফরহাদ রেজা। তার ব্যাট বলের নাগাল পায়নি পঞ্চম বলেও, তবে পড়িমড়ি দৌড়ে একটি রান আসে বাই থেকে। শেষ বলে ছক্কা মারতে পারলেও ম্যাচ যেত সুপার ওভারে, কিন্তু রুশো নিতে পারেননি এক রানের বেশি।
ফিল্ডিংয়ের সময় দ্বাদশ ওভারে রাজশাহী অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ‘ফেইক’ ফিল্ডিংয়ে’ (ডাইভ দিয়ে বল ধরার ভান করে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা) রংপুর পেনাল্টি থেকে পায় ৫ রান। কঠিন সমীকরণের ম্যাচে সেটির খেসারত দিতে হচ্ছিল দলকে। শেষ পর্যন্ত তাদের আফসোস করতে হয়নি মুস্তাফিজের সৌজন্যে।
রুশো ৪৪ রানে অপরাজিত থেকেও পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিয়ে মাঠে ছাড়েন। এরফলে আবার জয়ের ধারায় ফিরলো রাজশাহী। আর জয়ের কাছে গিয়ে আবারও পরাজয় বরণ করতে হলো বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। রাজশাহীর পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন কামরুল ইসলাম রাব্বি ও মোহাম্মদ হাফিজ। ম্যাচসেরা জাকির হাসান।
এই ম্যাচে চমক ছিল আরো। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মাশরাফি মর্তুজাকে টপ অর্ডারে নামতে দেখা গেছে আগেও। তবে বিপিএলে এমনটা কখনো দেখা যায়নি। এদিন মিরপুরের দর্শকরা সাক্ষী হল তেমনই এক নতুন অভিজ্ঞতার। ক্রিস গেইলকে নিয়ে একদম ওপেন করতে নেমে গেছেন ক্যাপ্টেন ম্যাশ! তবে এই ফাটকা কাজে লাগেনি তার। মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে যান তিনি।
তবে দারুণ বোলিং করে মেহেদী হাসান মিরাজদের চেপে ধরেন। বল হাতে অধিনায়কই রেখেছেন মূল ভূমিকা। ৪ ওভার করে ২২ রানে নেন ২ উইকেট। মুমিনুল হক আর অধিনায়ক মিরাজ ওপেন করেছেন রাজশাহীর হয়ে। দ্বিতীয় ওভারেই অধিনায়কের শিকার অধিনায়ক! রংপুর অধিনায়ক মাশরাফিকে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে শফিউলের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন মিরাজ।
তিনে নামা সৌম্য সরকার ১ ছক্কা আর ২ চারে ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। মাশরাফিকে তুলে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করায় ১৮ রানেই শেষ হয় সৌম্যর ইনিংস। আর মাশরাফিও এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ১০ উইকেট নিয়ে পৌঁছে যান সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় শীর্ষে। ষষ্ঠ ওভারে রাজশাহীর রান তখন ৩ উইকেট ৩৬।
ধুঁকতে থাকা দলকে উদ্ধার করেন মোহাম্মদ হাফিজ ও জাকির। চতুর্থ উইকেটে দুজন গড়েন ৫৪ রানের জুটি। রানের গতি যদিও বেশি ছিল না, কিন্তু দলকে ভদ্রস্থ একটি পর্যায়ে অন্তত নিতে পারেন দুজন। ২৯ বলে ২৬ করে হাফিজ রান আউট হন রবি বোপারার সরাসরি থ্রোয়ে।
এরপর সুবিধা করতে পারেননি লরি ইভান্স। টুর্নামেন্টে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া রায়ান টেন ডেসকাট রান আউট হন একটি ছক্কা ও চারে ১৪ রান করে। শেষ দিকেও আসেনি প্রত্যাশিত গতিতে রান। জাকির শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ বলে ৪২ রান করে। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে নিজের শিকার মাশরাফি নিয়ে গেছেন দশে। ম্যাচ শেষে তবু হতাশ মনেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। উইকেট না নিয়েও ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছেন মুস্তাফিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজশাহী কিংস : ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (মুমিনুল ১৪, মিরাজ ০, সৌম্য ১৮, হাফিজ ২৬, জাকির ৪১*, ইভান্স ২, ডেসকাট ১৪, উদানা ৮, সানি ১, রাব্বি ১*; সোহাগ ৩-০-২৫-১, মাশরাফি ৪-০-২২-২, নাহিদুল ২-০-১৪-০, নাজমুল ২-০-১৪-০, হাওয়েল ৩-০-২০-০, শফিউল ৪-০-১৯-১, ফরহাদ ২-০-১৭-২)।
রংপুর রাইডার্স : ২০ ওভোরে ১৩০/৬ (গেইল ২৩, মাশরাফি ০, মিঠুন ৩০, রুশো ৪৪*, বোপারা ১, হাওয়েল ৪, নাহিদুল ১৬, ফরহাদ ০*; রাব্বি ২-০-২২-২, মিরাজ ৪-০-২৬-০, উদানা ৪-০-২২-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৭-০, সানি ২-০-১২-০, হাফিজ ৪-০-২২-২)
ফল : রাজশাহী কিংস ৫ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : জাকির হাসান (রাজশাহী)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।