নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিপিএল ইতিহাসের প্রথম সুপার ওভারেও উত্তেজনা জিইয়ে থাকল শেষ বল পর্যন্ত। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ শেষ পর্যন্ত হলো টাই। মূল ম্যাচের নায়ক রবি ফ্রাইলিঙ্ক সুপার ওভারেও ব্যাটে-বলে দেখালেন বীরোচিত পারফরম্যান্স। গতকাল মিরপুরের সেই এলিমিনেটরে রোমাঞ্চকর জয় পেল চিটাগং ভাইকিংস। উত্তেজনায় ঠাসা সুপার ওভারের ম্যাচটিতে চিটাগং জিতেছে ১ রানে। ‘মূল ম্যাচে’ চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ১৫১ রান তুলে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা। পরে চিটাগং ভাইকিংস থমকে গিয়েছিল সেই একই রানে। চার ম্যাচ খেলেও জয়শূন্য খুলনা টাইটান্স আছে তলানিতে আর তিন ম্যাচে ২ জয় নিয়ে তালিকার তিনে চিটাগং।
শেষ পাঁচ ওভারের আগে ম্যাচে ছিল না কোনো উত্তেজনা। কিন্তু শেষের জন্যই যেন জমা থাকল সব বারুদ। ৬ বলে প্রয়োজন ১৯ রান। ক্রিজে নাঈম হাসানের সঙ্গী রবি ফ্রাইলিঙ্ক। একটি জয়ের খোঁজে চাতক পাখির মত তাকিয়ে খুলনা টাইটান্স। পাশেই জয়োৎসবের প্রস্তুতি চিটাগং ভাইকিংস শিবিরে। আস্থার বলটি আরিফুল হাকের হাতে তুলে দিলেন খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শুরুর বলটিতে ছিল সেই আস্থার প্রতিদান। কোন রান নিতে পারেন নি নাঈম। পরের বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে নামের প্রতি সুবিচার করে চিটাগংকে ফেরালেন ম্যাচে। কিন্তু তৃতীয় শর্টপিচ বলটি ব্যাটে বলে হয়নি ঠিকমত। উঁচুতে উঠিয়ে শান্তর হাতে ধরা পড়েন অন সাইডে। ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান সানজামুল। তিন বলে ১৩ রানের লক্ষ্যটা তখন আকাশছোঁয়া। পরের বলেই ফ্রাইলিঙ্ক সেটিকে মাটিতে নামালেন আরিফুলের মাথার উপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কার চুমোতে। প্রয়োজন দুই বলে সাত। এবার স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারা ছক্কায় শুধু বলটিই নয়, যেন চিটাগংয়ের দুশ্চিন্ত বিদায় করলেন ঝেঁটিয়ে!
হার-জিতের ব্যবধান তখন নেমে এসেছে এক বলে এক রানে। উত্তেজনা তখন তুঙ্গে, ছক্কার বলটিকে ‘নো’ বল হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে ফ্রাইলিঙ্কের বাক্যালাপে। তবে সেটিকে আমলে নিতে উপযুক্ত কোনো কারণ খুঁজে পান নি আম্পায়ররা। শেষ বলটির আগে বোলারের সঙ্গে আলাপ সেরে নিলেন মাহমুদউল্লাহ, ব্রাফেট। দুই ব্যাটসম্যানও নিজেদের বোঝা-পড়াটা আরেকটু ঝালিয়ে নিলেন। আশা-নিরাশার দোলাচল মিরপুর গ্যালারিজুড়ে। শুধু দু’দলের ডাগআইটই নয়, হোম অব ক্রিকেটজুড়েই পিনপতন নিরবতা। কে জানত আরো বড় চমক অপেক্ষা করছে তাদের জন্য! চালাকি করে ¯েøায়ার দিলেন আরিফুল, ব্যাটম্যানও পরাস্ত। বল জমা পড়ল কিপার শাহজাদের হাতে। তবে রান তো নেওয়া চাই! দুই ব্যাটসম্যান প্রান্ত বদলের আগেই সুনিপুন দক্ষতায় উইকেটে আঘাত হানে আফগান তারকার ছোড়া বল, রান আউট ফ্রাইলিঙ্ক! ম্যাচ টাই!!
বিপিএল ইতিহাসের প্রথমবারের মতো যার নিয়তি নির্ধারণের দায়িত্ব বর্তায় সুপার ওভারের উপর। যেখানে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এক উইকেট হারানো চিটাগং তোলে ১১ রান। ১২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সেই এক উইকেট হারিয়ে ১০ রানে থামে খুলনা।
শেষের উত্তেজনার বাদ দিলে এই ম্যাচও এগুচ্ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে গতিতেই। ১৫২ রান তাড়ায় মোহাম্মদ শেজহাদ ফেরেন দ্রুতই। তবে বিপদে পড়েনি চিটাগাং। মোহাম্মদ আশরাফুলের জায়গায় একাদশে এসে ইয়াসির আলি দেন ছন্দে থাকার প্রমাণ। গত কদিন থেকে সব পর্যায়েই রানে ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। এবার তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে একাদশে জায়গা পাকাপোক্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ক্যামেরন ডেলপোর্টের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটিতেই রানই অবদান বড়। ১৭ রান করে ডেলপোর্ট ফিরলে মুশফিকের সঙ্গে গড়ে উঠে ৩৫ রানের আরেক জুটি। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়েও আত্মাহুতিতেই শেষ হয়েছে ইয়াসিরের ইনিংস। ৩৪ বলে দুটি করে চার-ছক্কায় ৪১ করা ইয়াসির শরিফুলকে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ স্কয়ার লেগে।
এরপরই যেন ছন্দপতন। সিকান্দার রাজা ব্র্যাথওয়েটের বলে বোল্ড হন শূন্য রানেই। মুশফিকের সঙ্গে যোগ দিয়ে মোসাদ্দেক পরিস্থিতি করে দেন কঠিন। দ্রুত রান তুলার দাবির মধ্যে ১২ বলে ১২ করে ইনিংস থামান তিনি। আশা ভরসা হয়ে থাকা মুশফিক ব্র্যাথওয়েটকে স্কুপ করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে তুলে দেন ক্যাচ। তখনো ১৬ বলে জিততে ৩১ দরকার ভাইকিংসের।
ম্যাচের শুরুটা যদিও খুলনা করেছিল দারুণ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে বিস্ফোরক সূচনা এনে দেন পল স্টার্লিং ও জুনায়েদ সিদ্দিক। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা বোলার ফ্রাইলিঙ্কের প্রথম ওভারে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন স্টার্লিং। পরের ওভারে সানজামুল ইসলামকে পরপর ছক্কা ও চার মারেন জুনায়েদ। প্রথম ২ ওভারেই খুলনা তোলে ৩০ রান। তৃতীয় ওভারে অফ স্পিনার নাঈম ফিরিয়ে দেন ১০ বলে ১৮ রান করা স্টার্লিংকে। ১৫ বলে ২০ রান করে জুনায়েদ ফেরেন ফ্রাইলিঙ্কের বলে। তৃতীয় উইকেটে মালান ও মাহমুদউল্লাহ গড়েন ৭৭ রানের জুটি। তাতে খুলনা পায় শেষ দিকে ঝড় তোলার মঞ্চ। কিন্তু সেই ঝড় ওঠেনি। ৪৩ বলে ৪৫ করে আউট হয়ে যান মালান। মাহমুদউল্লাহ করেন ৩১ বলে ৩৩। ১ রানে জীবন পেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। ৫ বলে ১২ করে আউট হয়ে যান তিনিও। শেষ ৩ ওভারে খুলনা করতে পারে কেবল ২০ রান। সেটিই যেন মোটা দাগে দেখাল দলটির ভঙ্গুর ব্যাটিংয়ের চিত্র।
ম্যাচের ভাগ্য হাতবদল হলো অসংখ্যবার। নাটকীয়তার নানা ধাপ পেরিয়ে নায়ক হয়ে উঠলেন ফ্রাইলিঙ্ক। মিরপুর স্বাক্ষী হলো বিপিএলের ইতিহাসের অন্যতম শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।