পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রোহিঙ্গা মুসলমানরা বিশ্বের চরমতম জাতিগত নির্মূলের শিকার। প্রায় পাঁচ দশক ধরে এরা মিয়ানমার বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গা আশ্রিতদের সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক। প্রতিবেশী অন্যান্য দেশেও রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে আছে। এদের জাতিগত পরিচয় ও বা স্বীকৃতি না থাকায় অবৈধ পন্থায় বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে এরা নানান দেশে যাতায়াত ও কর্মসংস্থান করছে। সকলেরই জানা, ইউরোপের দেশগুল্রো মুসলমান অভিবাসিদের প্রশ্নে আইনগতভাবে নমনীয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়া থেকে পালিয়ে আসা শরনার্থীদের জন্য জার্মান সরকারের উদার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক শরনার্থী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রশংসা লাভ করেছে। বাংলাদেশের মত জনসংখ্যার ভারে ন্যুজ, দরিদ্র দেশও মানবিক কারণে এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের আহবানে সাড়া দিয়ে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থীর বোঝা গ্রহণ করতে কুণ্ঠিত হয়নি। অথচ মজলুম রোহিঙ্গাদের প্রতি ভারত ও সউদী আরবের মত দেশের অমানবিক আচরণ দু:খজনক। গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত যখন প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল, তখন ভারতের ক্ষমতাসীনরা ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবাদের মুখে তারা শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা বিতাড়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেও গত অক্টোবরে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। এ সপ্তাহে আবারো ৫ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়ে আবারো সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে ভারত।
ভারতের হিন্দুত্ববাদি শাসকরা সে সে দেশের স্থায়ী মুসলমানদেরকেও একটি বৈষম্যমূলক অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি অমানবিক আচরণ তাদের কাছে অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মুসলিম জাহানের পীঠস্থান, মুসলমানদের প্রধান দুই মসজিদের জিম্মাদার হিসেবে সউদী আরবের কাছে বিশ্বের নিপীড়িত মুসলমানরা সদয় ও মানবিক আচরণ প্রত্যাশা করে। গতকাল প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, দীর্ঘদিন সউদী আরবে অবস্থানরত, ভিসা জটিলতার কারনে জেলে আটক এমন অন্তত ১৩ জন রোহিঙ্গাকে সউদী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সমস্যা এখন একটি আন্তর্জাতিক মানবিক এজেন্ডা। বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত জনগোষ্ঠি ও গণহত্যার শিকার হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বহু বছর ধরেই সউদী আরবে আছে। যে সব রোহিঙ্গাকে গত সোমবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তারাও কমপক্ষে ৬ বছর ধরে সেখানকার বন্দি শিবিরে অবস্থান করছিল বলে জানা যায়। এসব রোহিঙ্গাকে বৈধ কাগজপত্র দিয়ে সউদী আরবে থাকা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সউদী কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। শুধুমাত্র পাসপোর্ট জটিলতার কারণে বছরের পর বছর ধরে কারারুদ্ধ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় বা বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করা হয়েছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সউদী কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীর পাশাপাশি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাও ধরা পড়ে।
রোহিঙ্গা নাগরিকরা মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের দ্বারা যে নৃশংস নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তার বিপরীতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভ‚মিকা খুবই অপ্রতুল। অনেক বড় ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ তার মানবিক দায়িত্ব পালন করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভ‚মিকা এখনো কার্যত লিপ সার্ভিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে সঙ্গতকারণেই বাংলাদেশ সউদী আরবের কাছে আরো ঘনিষ্ট, উদার ও দায়িত্বশীল ভ‚মিকা প্রত্যাশা করে। সে ভ‚মিকা পালনের বদলে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের সউদী কারাগার থেকে বাংলাদেশে পাঠানোর হঠকারি সিদ্ধান্ত অনাকাঙ্খিত ও দু:খজনক। রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের উদ্যোগগুলো মিয়ানমারের সহযোগীতার অভাবে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সউদী আরবসহ ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে আরো দৃঢ়, জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একদিকে বাংলাদেশের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির নাটক করছে অন্যদিকে প্রত্যাবাসন ঠেকাতে নানা অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে। সব আন্তর্জাতিক আহবান ও কনভেনশন উপেক্ষা করে মিয়ানমার সরকার আবারো রাখাইনে সেনা অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। এ থেকেই রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের অবস্থান বুঝা যায়। দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অভিবাসির বোঝা স্থায়ীভাবে বহনের শক্তি বাংলাদেশের নেই। এই সংকটের ভ‚-রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। নাগরিকত্বের প্রশ্ন, মানবিক মর্যাদা ও জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভরন-পোষনের ব্যয় মেটাতে পশ্চিমাবিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর কাছে আরো উদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশিত। বছরের পর বছর ধরে সউদী আরবে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত সউদী কর্তৃপক্ষ কিভাবে নিল তা আমাদের বোধগম্য নয়। যে কোন বিচারে এটি বাংলাদেশের জন্য অসম্মানজনক ও বিব্রতকর। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়কে কার্যকর জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। সউদী -বাংলাদেশ ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ক এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক দিক বিবেচনায় এ ক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য ও সম্মানজনক সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।