Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উন্নয়নের গণতন্ত্রের নামে দুর্নীতির উন্নয়ন আর নয়

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। বলা যায়, দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে। এখন দেশের কিছু কিছু মানুষ কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি হাকিয়ে চলেন। মন্ত্রী-এমপিদেরও সম্পদের অভাব নেই। তারা একেক জন কোটিপতি। আগামী নির্বাচনে যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই কোটিপতি। অবশ্য তারা ছাড়াও দেশে এখন হাজার হাজার কোটিপতি রয়েছেন। এই হাজার হাজার মানুষ কোটিপতি হয়েছেন দেশের সম্পদ নানাভাবে হাতিয়ে নিয়ে। তাদের অনেকেই এমন গাড়িতে চড়েন যার মূল্য কোটি টাকার উপরে। বিশ্বের নামী-দামী ব্র্যান্ডের গাড়িতে চড়েন। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে বিএমডব্লিও, (মূল্য-৭৫ লাখ থেকে সোয়া ৩ কোটি), পাজেরো (মূল্য-৯২ লাখ টাকা), নিশান প্যাট্রোল, টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার (মূল্য-৪ কোটি থেকে ৯ কোটি টাকা)। ঢাকা শহরের রাস্তায় এ ধরনের গাড়ি প্রতিদিনই দেখা যায়। তবে উন্নত বিশ্বের কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে বাংলাদেশের এসব ধনীদের বলে থাকেন ‘গরিব দেশের বড়লোক’। তাদের এ কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এর কারণ, একটি শ্রেণী বিপুল বিত্ত- বৈভবের মালিক হলেও সার্বিকভাবে দেশের মানুষের আনুপাতিক হারে বিত্তবান হতে পারেনি। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান আকাশ-পাতাল রয়ে গেছে। সমাজতন্ত্রবাদীরা বলতে পারেন, দরিদ্রের শোষণ করে তারা ধনী হয়েছেন। তবে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য অস্বাভাবিক হলেও দেশের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে উল্লেখ করার মতো। আবার দেশে গত দশ বছরে শুধুমাত্র ব্যাংকিং খাত থেকে যে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে এবং কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, প্রবৃদ্ধি কতটা হয়েছে। এক শ্রেণীর মানুষের লুটপাট এবং চুরির মাধ্যেও দেশ এগিয়ে চলেছে। অবশ্য এসব লুটপাট ও চুরি যদি না হতো এবং পাচার না হতো তবে উন্নতিটা আরও বেশি চোখে পড়ত। অর্থনীতিতে বাংলাদেশকে যে দক্ষিণ এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার বলা হচ্ছে, এই টাইগার এতদিনে দৌড়াতে শুরু করত। এক্ষেত্রে সরকার যদি লুটেরা এবং চোরদের ধরে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করত, তবে এ কাজটি সহজ হয়ে যেত। দেখা যাচ্ছে, সরকার এ কাজটি করতে পারেনি।
দুই.
বাংলাদেশ যে উন্নতির পথে রয়েছে, এর মূল কৃতিত্ব এ দেশের সাধারণ মানুষের। তারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে নিজেদের উন্নতির জন্য নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার যে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা বলছে, এ আয় তো সরকার মানুষকে নিজে করে দেয়নি। প্রতিটি মানুষ তার নিজের তাকিদে এ আয় বৃদ্ধি করেছে এবং করে চলেছে। গত সেপ্টেম্বরে সরকার মাথাপিছু গড় আয় ১৭৫১ ডলার বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। যদিও বরাবরই এ আয় বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক থেকে যাচ্ছে। গড় আয়ের হিসাবটি আপেক্ষিক। কারণ, যে ব্যক্তি কোটি টাকা মূল্যের গাড়িতে চড়েন আর যে শ্রমজীবী, তাদের আয় এক হওয়ার কথা নয়। ঐ কোটিপতির আয়ই গড় হিসাবের মাধ্যমে একজন শ্রমিকের আয়ের সাথে যুক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে যে বেকার তার তো আয় হওয়ারই কথা নয়। তারপরও তার আয় ১৭৫১ ডলার হয় কি করে? এ হিসাব থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কিছু মানুষের অর্থ সম্পদের উন্নতি দিয়ে দেশের অর্থনীতির উন্নতির সূচকটি হিসাব করা হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে এই গড় আয় হিসাব করা হলেও আমাদের দেশের মতো তাদের ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান এতটা থাকে না। আমাদের দেশের ধনী ও দরিদ্রের আয়ের ব্যবধান যোজন যোজন দূরে রয়েছে এবং আছে। সরকার বরাবরই ধনী-দরিদ্রের আয়ের এই বৈষম্য এড়িয়ে যায়। স্বীকার করলে তো আর তার সাফল্য বলে কিছু থাকে না। তবে সরকার যে উন্নতি করছে তা দেখানোর জন্য কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে কিছু স্থাপনা এবং অবকাঠামো। উন্নতির মূল স্মারক হিসেবে এখন ধরা হচ্ছে পদ্মা সেতুকে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, পদ্মা সেতু হলে আমরা যেন একেবারে উন্নত দেশে পরিণত হয়ে যাব। সার্বিক উন্নতির বিষয়টি যে এখনও ধীর গতির রয়েছে, তা একজন সাধারণ মানুষেরও বুঝতে অসুবিধা হয় না। আর কোনো দেশ উন্নয়নহীন হয়ে থাকে না। উন্নয়নের পথেই থাকে। দেখার বিষয় হচ্ছে, সেই পথে সে কত দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের মানুষ খুবই উন্নয়নকামী এবং তারা নিজেদের উন্নতির জন্য সরকারের সহযোগিতার আশায় বসে থাকে না। নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে যায়। সরকারের উন্নতির স্পৃহা থেকে জনসাধারণের উন্নতির স্পৃহাই এগিয়ে থাকে বেশি। জনসাধারণের এই স্পৃহার কারণেই দেশ এগিয়ে যায়। তার এগিয়ে যাওয়ার কৃতিত্বটা সরকার নেয়। এক্ষেত্রে বলা যায়, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, দেশের মানুষের এই উন্নয়কামী মনোভাব তার কৃতিত্বের মধ্যে গিয়ে পড়ে। তাদের এই স্পৃহার সাথে যদি সরকারের উন্নতির পরিকল্পনা সঠিকভাবে যুক্ত হতো, তাহলে নিশ্চিতভাবেই উন্নতির রেখাচিত্রটি অনেক বেশি উজ্জ্বল হতে পারতো। দুঃখের বিষয়, সরকারের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে যথেষ্ট ফারাক থাকে। যে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হয় এবং অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় না। যেসব প্রকল্প নেয়া হয়, দেখা যায়, তা শুরু করতে করতেই আর্থিক বছরের দুই-তিন মাস চলে যায়। তারপর বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় হয় এবং কাজ শুরু হয় ঢিমেতালে। যেই অর্থ বছর শেষের দিকে এসে দাঁড়ায়, তখনই তড়িঘড়ি করে অর্থ ছাড় এবং কাজ শুরু হয়। এই করতে গিয়ে প্রকল্পের কাজ তো শেষ হয়ই না, যা হয় তাও অতি নিম্নমানের হয়। আর প্রকল্পের অর্থের লুটপাটের জন্য প্রকল্পের সাথে যুক্ত একশ্রেণীর কর্মকর্তা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রকল্পের উন্নতি না হলেও তাদের বেশ উন্নতি হয়। অতঃপর প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত সময় শেষ এবং অর্থ পুরোপুরি ব্যয় না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ে, নতুন করে অর্থও বরাদ্দ করা হয়। সরকারের নেয়া অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। সরকারও প্রকল্পের সূচনা কাজ দেখিয়ে উন্নয়নের ঢোল পেটাতে থাকে। আবার অনেক সময় ঘটা করে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকেও উন্নয়নের স্মারক হিসেবে প্রচার করা হয়। উন্নয়ন নিয়ে এ ধরনের অতিপ্রচার বছরের পর বছর ধরে চলছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাইকাসহ যেসব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা উন্নয়ন প্রকল্পে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা দেয়, এই অর্থও সরকার সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারছে না। এক হিসাবে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে দাতা সংস্থাগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থের ৩৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত গেছে। এর মূল কারণ, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারা, সক্ষমতার অভাব এবং দুর্নীতি প্রবণতা। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর অনেক দেশ যেখানে অর্থাভাবে উন্নতি করতে পারে না, সেখানে আমরা বিপুল অর্থ পেয়েও কাজে লাগাতে পারছি না। অর্থাৎ উন্নয়ন কাজে ঘরের টাকা ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারছি না, বাইরের টাকাও ধরে রাখতে পারছি না। এই অবস্থার মধ্যে থেকেই যদি সরকার তার উন্নয়নের কথা বলে, তবে তা কতটা যৌক্তিক? টাকাই যদি কোনো কাজে না লাগে বা লাগানো না যায়, তবে উন্নতি হয় কীভাবে? অথচ অর্থনীতিতে উন্নয়নের মূল নিয়ামক হচ্ছে বিনিয়োগ। অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি করা, জমিয়ে রাখা নয়। অর্থ হচ্ছে জ্বালানি তেলের মতো। ইঞ্জিন যতই নতুন হোক না কেন, তাতে তেল না দিলে কোনোদিনই স্টার্ট নেবে না। ইঞ্জিনে তেল দিলে তা স্টার্ট হবে, সচল হবে এবং এগিয়ে যাবে। পুনরায় তেল দিতে হবে এবং ইঞ্জিন সচল রাখতে হবে। অর্থনীতির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ এবং পুনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি, দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। যা উন্নয়ন হচ্ছে, তা পুরনো বিনিয়োগের মাধ্যমেই হচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তবে, একটা সময় অর্থনীতি সংকটে পড়তে বাধ্য। পেটের ভাত হজম হয়ে এক সময় ক্ষুধা লাগবেই।
তিন.
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত দশ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ থেকে এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। দেশ যদি উন্নতি না করতো, তবে এত টাকা এলো কোথা থেকে এবং লুটপাটই বা হলো কী করে? এ থেকে বোঝা যায়, দেশ উন্নতি করছে এবং এই উন্নয়নের টাকা লুটেরারা লুট করে নিচ্ছে, পাচার করছে। এসব অর্থ যদি দেশে থাকত, তাহলে দেশের কতটা উন্নতি হতো, তা ভাবাও যায় না। এক ব্যাংকিং খাত থেকে যে টাকা লুট হয়েছে তা দিয়েই অনেক বড় বড় উন্নয়ন কাজ হয়ে যেত। এর একটি হিসাব গত শনিবার সিপিডি দিয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে যে ১০টি কেলেঙ্কারির মাধ্যমে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে তা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের ৭৮ শতাংশ বা পদ্মা সেতুর রেলসংযোগের ৬৪ শতাংশ কাজ হয়ে যেত। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রায় ৪১ শতাংশ অর্থের যোগান হতো। সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে যদি এত বড় উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ করা যেত, তাহলে যে এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, সে অর্থ দিয়ে আরও কত কি করা যেত, তা সহজেই অনুমেয়। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশে অর্থের অভাব নেই। তবে এ অর্থ লুটেরারা নিয়ে যাচ্ছে। এ যেমন এই সরকারের দশ বছরের মেয়াদের শুরুর দিকে শেয়ার মার্কেট থেকে এক লাখ কোটি টাকা লোপাট হলেও কোনো সমস্যা হয়নি। ৩৩ লাখ ফড়িয়া টাইপের মানুষ হয়তো নিঃস্ব হয়েছে, কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে, তাতে সরকারের কিছু যায় আসেনি। সরকারও জানে, কিছু দিন এ নিয়ে হইচই হবে, তারপর থেমে যাবে। সরকারের এ ধারণা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে। এখন আর শেয়ার বাজারের লুটপাট নিয়ে কোনো কথা হয় না। যারা জড়িত ছিলেন, তাদেরও কিছু হয়নি। সেই থেকে বাংলাদেশ নামক টাকার খনির টাকা উত্তোলন শুরু। তারপর ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, হলমার্ক ইত্যাদি সোনালি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। সোনালি ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনাকে তো আমাদের অর্থমন্ত্রী সে সময় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, এটা কোনো টাকাই না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা ৮০০ কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর সে সময় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মন্তব্য করেছিলেন, এ টাকাও কোনো ব্যাপার না। দুর্নীতির পক্ষে যদি এভাবে সাফাই গাওয়া হয়, তবে দুর্নীতি কমার কি কোনো কারণ আছে? অথচ গত সপ্তাহে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতির কারনে দেশের প্রবৃদ্ধি ২ থেকে ৩ শতাংশ কম হচ্ছে। দুর্নীতি আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, বিচারিক ব্যবস্থা, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন এমনকি গণতন্ত্রকেও স্লান করে দেয়। তার এ কথা থেকে বোঝা যায়, আমাদের দেশে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চেয়ে দুর্নীতির উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সুশাসন বজায় থাকে তবে দুর্নীতি যেমন প্রশ্রয় পায় না, তেমনি উন্নতিও টেকসই হয়। আমাদের দেশে এখন চলছে, আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র-এমন একটি ধারা। এই নীতি অবলম্বন করতে গিয়েই দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির মওকা পেয়ে যাচ্ছে। সরকারও তাদের ধরে না কিংবা ধরতে চায় না। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে যে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্ত না করে সার্বিক উন্নয়ন কোনো দেশেই হয় না। সেখানে দুর্নীতিই এগিয়ে থাকে, গণতন্ত্র পিছিয়ে থাকে। এতে দেশের একটি শ্রেণী আকাশচুম্বী ধন-সম্পদের মালিক হলেও সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত থাকে না। সরকারও এই দুর্নীতি ও লুটপাটের অর্থের যোগান দিতে গিয়ে জনগণের উপর ভ্যাট ও করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। জনগণের পকেট কেটে ভর্তুকি দেয়।
চার.
বর্তমান সরকার তার নেয়া উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আগামী নির্বাচনে আবার বিজয়ী করার জন্য জনসাধারণকে বারবার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে জনসাধারণ যদি প্রশ্ন করে, তার শাসনকালে তাদের অর্থ যারা দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করেছে এবং শেয়ার বাজার লুটপাট করে যারা ৩৩ লাখ মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে তাদের বিচার হবে কিনা, তাহলে সরকার কি জবাব দেবে? জনসাধারণ যদি এই আশঙ্কা করে, বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে আবার বড় বড় দুর্নীতি হবে না, তার কি গ্যারান্টি আছে? কারণ তারা তো দেখেছে, ব্যাংক ও শেয়ার বাজার লুটেরাদের কোনো বিচার হয়নি এবং তাদের লুটপাটে রাষ্ট্রের যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তার ভর্তুকি বিভিন্নভাবে তাদের পকেট থেকেই কেটে নেয়া হয়েছে। তাদেরকে যদি আবার একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, তবে তারা উন্নতি করবে কীভাবে? এ পরিস্থিতিতে, আগামী নির্বাচনে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুন না কেন, তাদের সুস্পষ্টভাবে অঙ্গীকার করতে হবে দেশে দুর্নীতির বিষয়টিকে জিরো টলারেন্স হিসেবে নেবে এবং দুর্নীতির সঙ্গে যত ক্ষমতাধর ব্যক্তি জড়িত থাকুক না কেন, তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। পাশাপাশি গণতন্ত্র ও সুশাসনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র-এ নীতি অব্যাহত থাকলে দেশের টেকসই উন্নতি কখনোই হবে না। এতে একটি শ্রেণী ধনী থেকে ধনী হবে, আর গরীব আরও গরীব হবে।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন