Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফিজিওথেরাপি বনাম ব্যথার ঔষধ

ডাঃ মোহাম্মদ আলী | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

অসুখ হলে ঔষধ খেতে হবে। আমাদের সাধারন ধারনা এমনই। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান কি এই কথা সবসময় সমর্থন করে? না, কারন আধুনিক পৃথিবী ক্রমশ ঔষধ, বিশেষ করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরী করে এমন ঔষধ গ্রহণের বিরোধী। এখন চিকিৎসার উদ্দেশ্য কেবল রোগ ভালো করা নয়, একটি রোগ ভালো করতে গিয়ে যাতে শরীরের অন্য ক্ষতি না হয়ে যায় সে দিকেও খেয়াল রাখেন আধুনিক চিকিৎসকগ্ণ। যেমন ধরুন শারিরিক ব্যথা; ব্যথা বিরোধী ঔষধ গুলো আমাদের শরীরে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরী করে থাকে যা অনেক সময়ই মারাতœক আকার ধারন করতে পারে।

শারিরিক ব্যথার ধরনঃ যেসব শারিরিক ব্যথা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভোগায় তার মধ্যে ঘাড়, কোমর, হাটু, কাধ, হাতের কুনুই, পায়ের গোড়ালি এবং পিঠ ব্যথা অন্যতম। চল্লিশোর্ধ নারী-পুরুষ সবচেয়ে বেশি ভুগে থাকেন। যারা দীর্ঘ সময় অফিসে বসে কাজ করেন অথবা প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতের জন্য যানবাহনে বসে থাকেন তাদের মধ্যে ব্যথায় আক্রান্ত হবার প্রবণতা বেশি থাকে। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের ঘাড় কোমর হাটু ও কাঁধ ব্যথা বেশি হয়। তাছাড়াও যারা ভারী কাজ অথবা সংসারের কাজ যেমন কাপড় কাচা ঘর মোছা ইত্যাদি অত্যধিক পরিমানে করে থাকেন তাদেরও ব্যথায় আক্রান্ত হবার প্রবণতা বেশি থাকে।
ব্যথার ঔষধ কিভাবে কাজ করেঃ ব্যথার ঔষধ গ্রহণের ফলে এর উপাদান পাকস্থলি থেকে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌছায় এবং কোষ থেকে একধরনের রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটায় যা বিভিন্ন মেকানিজম (যেমন; পেইন গেট থিউরি) এর মাধ্যমে ব্যথার স্থানের প্রদাহ কমাতে চেস্টা করে। কিন্তু ব্যথার ঔষধ পাকস্থলি ও কিডনীর মাধ্যমে শরীরে ছড়ায় বলে তা পাকস্থলিতে ক্ষতের সৃস্টি করতে পারে অথবা আগে থেকেই পাকস্থলিতে ক্ষত বা আলসার থাকলে তা বাড়িয়ে দিতে পারে। একই ভাবে দীর্ঘদীন কিডনী দিয়ে ব্যথার ঔষধ নিঃসরণ হলে কিডনীর স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া ব্যথার ঔষধ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন; ঘাড় ব্যথার জন্য কেউ ব্যথানাশক সেবন করল, তা কি শুধু ঘাড়েই ছড়াবে? না, এই ঔষধের উপাদান গুলি রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে পৌছে যাবে এবং শরীরের সুস্থ অংশে অনাকাঙ্খিত প্রতিক্রিয়া সৃস্টি করবে। বিষয়টি মশা মারতে কামান দাগার মতই অনভিপ্রেত। তাই দীর্ঘদিন ব্যথানাশক সেবন করলে তা শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃস্টি করবেই।
ফিজিওথেরাপি কিভাবে কাজ করেঃ ফিজিওথেরাপি স্থানীয় বা লোকাল চিকিৎসা। অর্থাৎ শরীরের যে অংশ ব্যথায় আক্রান্ত সাধারনত সেই অংশেই ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ করা হয়। শুধুমাত্র ব্যথা নিরামই ফিজিওথেরাপির উদ্দেশ্য নয়, ব্যথার কারন নির্নয় করে তা নির্মূল করাই এর লক্ষ্য। ধরুন, পি এল আই ডি বা কোমরের কশেরুকার চাকতি সরে গিয়ে তা স্নায়ুর উপর চাপ সৃস্টি করে কোমর ও পায়ে ব্যথা সৃস্টি করল। এক্ষেত্রে ব্যথার ঔষধের কাজ কি? ব্যথানাশক কেবল সাময়িক ভাবে ব্যথা কমাতে পারবে কিন্তু স্নায়ুর উপর যে চাপ সৃস্টি হলো তা সরানোর ক্ষমতা ব্যথার ঔষধের নেই। পক্ষান্তরে ইলেক্ট্রোথেরাপির মাধ্যমে সাময়িক ব্যথা নিয়ন্ত্রন এবং ম্যানিপুলেটিভ থেরাপির মাধ্যমে স্নায়ুর চাপ সরানো সম্ভব। অর্থাৎ ফিজিওথেরাপি ব্যথা ও ব্যথার কারন দুটোর উপরেই কাজ করে। তাই এটি দ্রæত ও কার্যকরি এবং যেহেতু এটি কিডনী ও পাকস্থলির উপর কোন প্রভাব ফেলেনা তাই এটি গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃস্টি করেনা।
অন্যান্য রোগে ফিজিওথেরাপিঃ ব্যথা ছাড়াও স্ট্রোক পারালাইসিস, বেলস পালসি ইত্যাদিতেও ফিজিওথেরাপি বেশ কার্যকর। মুখ বেকে যাওয়া বা বেলস পালসিতে রোগীরা প্রদাহ ও ভাইরাস বিরোধী ঔষধের সাথে সাথে দ্রæত ফিজিওথেরাপি নেয়া শুরু করলে সুস্থ হবার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায়। আর স্ট্রোক প্যারালাইসিস রোগীরা একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের অধীনে চিকিৎসা নিলে আবার কর্মক্ষমতা ও সচলতা ফিরে পেতে পারেন।
কোথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পাবেনঃ সঠিক ফিজিওথেরাপির প্রথম ধাপ হল সঠিকভাবে রোগ নির্নয়। ঠিক কি কারনে আপনার শরীরে ব্যথা হচ্ছে তা নির্নয় করতে না পারলে কখনই ফিজিওথেরাপি ফলপ্রসু হবেনা। উদাহন স্বরুপ বলা যায়, হৃদরোগ বা প্রেসার থেকে অনেক সময় ঘাড় কাধ বা বুক ব্যথা হতে পারে কিন্তু কারন না জেনেই যদি এসব ক্ষেত্রেও ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ করা হয় তা কি কাজ করবে? তাই প্রথমেই ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞকে রোগ নির্নয় করার সুযোগ দিতে হবে। আবার অনেকেই ফিজিওথেরাপির নামে না জেনে বিভিন্ন ধরনের ম্যাসাজ বা মালিশ বা টানাটানি করে থাকেন। এটিও হিতে বিপরীত ফল আনতে পারে। তাই একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের সরাসরি তত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি নিলেই তা সবচেয়ে ভালো ফল দেবে। যত্রতত্র গজিয়ে উঠা সেন্টারে ফিজিওথেরাপি না নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
শেষ কথাঃ ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ন চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা নিয়ে অবহেলার সুযোগ নেই। একজন রোগীর সুস্থ হবার উদ্দেশ্য নিয়েই ফিজিথেরাপি নেয়া উচিত। অনেই মনে করেন সাময়িক আরাম পাওয়ার জন্যই ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়। তথ্যটি সম্পূর্ন ভুল। সাময়িক ব্যথা মুক্তির জন্য আপনি ব্যথানাশক খেতে পারেন, কিন্তু ফিজিওর মূল্য উদ্দেশ্য হলো রোগীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যথা ও ব্যথার কারন মুক্ত করা এবং প্যারালাইসিস সহ অন্যান্য অচল রোগীর সচলতা ফিরিয়ে দেয়া। ফিজিওথেরাপি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি।

ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
হাসনা হেনা পেইন এন্ড ফিজিওথেরাপি রিসার্চ সেন্টার (এইচ পি আর সি)
বাড়ি-৭, শায়েস্তাখান রোড, সেক্টর-৪, উত্তরা, ঢাকা।
ফোনঃ ০১৯৩৮ ৪৪৪ ৯৯৯।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঔষধ

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন