পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জনগণের প্রত্যাশা অনুসারে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আমেজ দেখা যাচ্ছে। গত ১২ নভেম্বর থেকে বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশিদের ফরম সংগ্রহ উপলক্ষে ব্যাপক লোক সমাবেশ লক্ষ্য করা গেছে। তফসিল ঘোষণার পর গত ১০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের ইস্যু করা এক চিঠিতে জনসমাগম ও শো ডাউনের মাধ্যমে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও জমাদানকে আচরণ বিধির লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করে তা থেকে নিবৃত্ত থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়। তবে ৯ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ উপলক্ষ্যে দলের ধানমন্ডী কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশের রাস্তায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। রাস্তা বন্ধ থাকে, এমনকি ঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের সংর্ঘষের জেরে দুই কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। সে সময় কি নির্বাচনী আচরণ বিধির কথা ভুলে গেছিল ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? বিপত্তি ঘটল বিএনপির বেলায়! মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের সমাগমে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উৎসব মুখর পরিবেশ দেখা গেলেও সামনের রাস্তাটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই ঘটনা ঘটেছিল ধানমন্ডীতেও। বিএনপি’র মনোনয়ন ফরম বিতরণের তৃতীয়দিনে হঠাৎ করে নির্বাচন কমিশনকে আবারো একটি চিঠি ইস্যু করতে হল কেন? এবং এই চিঠিকে গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই বা কেন এতটা তৎপর হয়ে উঠল কেন, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। এই ঘটনা একটি উৎসবমুখর নির্বাচনী আমেজে কালিমা লেপন করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিলের উপর পুলিশের গাড়ী তুলে দেয়া, লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ব্যবহার এবং পুলিশের গাড়ী ভাঙ্গচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে পিটিয়ে আহত করা, লাঠি মিছিলসহ অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনের অপরিনামদর্শি চিঠি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি তৎপরতাকেই দায়ী করা হচ্ছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা ও প্রত্যাশার নিরিখে দেশে একটি অংশগ্রণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকায় বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র সারাবিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক অনিশ্চয়তা সত্তে¡ও অবশেষে আওয়ামীগের সাথে সংলাপ হয়েছে। সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবী নিয়ে সমঝোতা না হলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এহেন বাস্তবতায় বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশি হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে একটি শান্ত ও উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশকে অশান্ত করে তোলা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, অন্তত চারটি বিকল্প রাস্তা থাকা সত্তে¡ও বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তা পরিস্কার করা এতটা জরুরী ছিলনা। যেখানে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাতে গোণা কিছু সংখ্যক মানুষ শাহাবাগের মত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দিনের পর দিন বন্ধ রাখার পরও পুলিশ তাদেরকে পাহাড়া দিয়ে নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে পুলিশের জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিতে দেখা যায়নি। বিএনপির মনোনয়ন বিক্রির সময়সীমা ১৬ তারিখ পর্যন্ত নির্ধারিত। অতএব মাত্র একদিন পর হয়তো এমনিতেই রাস্তাটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসত।
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব দলের সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় নিবার্চন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অতএব, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের। বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় নাশকতার ঘটনায় আবারো সেই বহুল আলোচিত হেলমেট বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে। সরকারের মন্ত্রী,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে উদ্ভুত ঘটনায় পারস্পরিক দোষারোপ বা ব্লেইম গেইম দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, একে অপরের দিকে আঙুল না তুলে উভয় পক্ষের উচিৎ সুষ্ঠু তদন্তে সহায়তা করা। ইতিপূর্বে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ধানমন্ডিতে হেলমেট পরিহিত যুবকদের তান্ডব দেখা গেছে। তাদের হাতে শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যম কর্মীরা লাঞ্ছিত ও আক্রান্ত হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে তাদের ছবি পাওয়া গেলেও আজ পর্যন্ত তাদের ধরে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। বিএনপির দলীয় কর্মীদেরও আরো ধৈর্যশীল ও নির্বাচনী আচরণ বিধির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত ছিল। দলের চেয়ারপারসনের গ্রেফতারের পরও যে দলের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সমাবেশ বজায় রেখে চলেছে, নির্বাচনমুখী আয়োজনে সেই দলের নেতাকর্মীরা হঠাৎ করেই পুলিশের প্রতি মারমুখী হয়ে উঠবে, এমনটা বিশ্বাসযোগ্য নয়, কাম্যও নয়। নেপথ্য কারণ যাই থাকুক, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং সকল দলের অংশগ্রহণে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জাতীয় লক্ষ্যকে সফল করতে হলে সব পক্ষকেই আরো বিচক্ষণ ও পরিনামদর্শি ভূমিকা পালন করতে হবে। বুধবারের অপ্রীতিকর ঘটনাকে পুঁজি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি তৎপরতা, ধরপাকড় ও মামলাবাজি হলে নির্বাচনের প্রত্যাশিত পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই পুরো ঘটনা বিচার-বিশ্লেষণ করে সব পক্ষকেই ধৈর্য্যশীল, সহিষ্ণু ও ইতিবাচক হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।