পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত আইনবিধি লংঘন করে অনেক প্রাইভেট ব্যাংক ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সশস্ত্র প্রহরী নিয়োগ দিয়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে। বিভিন্ন সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠান এসব সশস্ত্র প্রহরীর যোগানদাতা। সশস্ত্র প্রহরীদের বেশির ভাগই এক্স-সার্ভিস ম্যান এবং তাদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। আইনবিধি লংঘন করে এভাবে সশস্ত্র প্রহরী যোগান দেয়া এবং নিয়োগ দেয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। আইন অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স আছে এমন ব্যক্তি তার নিজের ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে পারে না। কেউ যদি এটা করে তবে তার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, আইনে এও রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী ব্যক্তি সশস্ত্র প্রহরীর কাজ করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানসমূহ যদি তাদের সম্পদ প্রহরার জন্য সশস্ত্র প্রহরীর প্রয়োজন বোধ করে তবে নিজেদের নামে লাইসেন্স নিতে হবে। ওই লাইসেন্স অন্য কোনো সম্পদ ও ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। যা হোক, এই আইনবিধির ব্যাপক লংঘন লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেক ব্যাংক ও ব্যক্তির ক্ষেত্রে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উচ্চপদস্থ কিছু ব্যাংকার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি প্রতিটি ব্যাংকের সকল শাখার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছে। এই লাইসেন্স পাওয়া বেশ ঝঞ্ঝাটপূর্ণ ও সময় সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে ব্যাংক গানম্যান ভাড়ার জন্য সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের দারস্থ হতে বাধ্য হয়েছে।
এহেন প্রেক্ষপটে সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোও কৌশলি পথ অবলম্বন করেছে। সশস্ত্র প্রহরী সরবরাহ করার কোনো আইনগত অধিকার তাদের নেই। অথচ তাদের গ্রাহকদের সার্ভিস দিতে হবে, না হলে ব্যবসার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমতাবস্থায়, তারা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স আছে এমন এক্স-সার্ভিস ম্যানদের কাজে লাগানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। অবশ্য তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয় এবং তাদের সংগ্রহ মূল্য বা বেতন খুবই বেশি। একটি সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জানিয়েছেন, আমরা যে বেতনে তাদের নিয়োগ দেই, সেই বেতন আমরা ব্যাংগুলোর কাছ থেকে নিতে পারিনা। একই সঙ্গে এটা অবৈধ ও লোকসানী ব্যবসা। সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, এই আগ্নেয়াস্ত্র যদি কোনো কারণে ব্যবহৃত হয় এবং কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখন ওই অস্ত্র ব্যবহারের আইনগত দিক নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। ঢাকা ব্যাংকের ম্যানেজিং-ডাইরেক্টর বলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার করা। এজন্য ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। গানম্যানের চেয়ে সেটাই জরুরি। গানম্যান কোনো সমাধান নয়। বিশ্বের কোনো দেশেই কোনো ব্যাংকে গানম্যান নেই জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমরা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এলার্ম সিস্টেম বসাচ্ছি যাতে সব সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। যতদূর জানা যায়, ৪০টি প্রাইভেট ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ৬টি ব্যাংকের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স আছে। এর মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। কিন্তু এই লাইসেন্স আছে ব্যাংকের ১১৪ শাখার মধ্যে মাত্র ২৫টির। ব্যাংকটির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, তারা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্তৃপক্ষের বরাবরে লাইসেন্সের আবেদন করেছেন। তবে এটা পেতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো নাজুক। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবাধে প্রহরী নিয়োগ দিচ্ছে তাদের নিরাপত্তা সুরক্ষায়। তাদের নিয়োগকৃত বা নিয়োজিত প্রহরীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করছে। এতে আতংক সৃষ্টি হচ্ছে জনসাধারণের মধ্যে। আইনের দৃষ্টিতে এটা অবৈধ কাজ হিসাবেই গণ্য।
ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা, তার সম্পত্তির নিরাপত্তা কিংবা ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্পদের নিরাপত্তা, বলার অপেক্ষা রাখেনা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসবের নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলেও রাষ্ট্রের পক্ষে সঙ্গত নানা কারণে সব সময় সর্বক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ জন্য নানা আইনবিধি ও ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন যতটা সম্ভব নিজ নিজ নিরাপত্তা বিধান করতে পারে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স এবং সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান প্রভৃতি এ লক্ষ্যেই করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিধিবদ্ধ আইন ও ব্যবস্থার লংঘন ঘটছে। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া অনেকের জন্যই সহজ। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকে বিভিন্ন নামে লাইসেন্স নিয়ে থাকে, এমন অভিযোগ রয়েছে। এসব লাইসেন্সের বিপরীতে নেয়া আগ্নেয়াস্ত্র কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার খোঁজ-খবর কেউ রাখেনা। এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে যে, লাইসেন্স করা অস্ত্র ভাড়ায় ব্যবহৃত হয়। সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো সশস্ত্র প্রহরী হিসাবে যাদের সরবরাহ করে থাকে, তাদের বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া আর কেউ কিছু জানেনা। এক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। ব্যক্তিগত গানম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রেও আইনবিধি কতটা মান্য করা হচ্ছে, সেটাও অন্যদের জানা নেই। গোটা বিষয়টি খুবই স্পশকাতর। কাজেই, আইনবিধি কোথায় কিভাবে লংঘিত হচ্ছে তা দেখা দরকার এবং লংঘনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বন কর্মকতা জানিয়েছেন, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পরীক্ষা ও বিধিলংঘনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে। ব্যক্তিগত অস্ত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রহরায় ব্যবহার হওয়া বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আশা করবো, আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত আইন-বিধি লংঘনের বিষয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আরও সক্রিয় হবে এবং লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে যথোচিত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।