Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘এখন আমরা ১০ উইকেটে জয়ের কথাও ভাবতে পারি’

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:৫৭ পিএম

বিশ্ব ক্রিকেটে হাঁটি হাঁটি পা পা বাংলাদেশের চলারসাথী তিনি। হারের সাক্ষী হয়ে চলেছেন হৃদয়ে ক্ষত নিয়ে, প্রতিনিধিত্ব করেছেন অনেক মাহাকাব্যিক জয়েরও। সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন পরাশক্তি। দুই যুগের এই পথচলায় দলের সঙ্গে তিনিই হেঁটেছেন ১৫ বছর। যার নেতৃত্বে নতুন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজা। চোটের কাছে হার মানেন নি, অভিমান তাঁকে টেস্ট ও টি-২০ থেকে কিছুটা দূরে সারিয়েছে কেবল, তবে এখনও লাল-সবুজের এই জার্সিটির প্রতি অমোঘ ভালোবাসা আজও নতুন করে স্বপ্ন দেখায় দেশসেরা এই অধিনায়ককে। তার নেতৃত্বে আরো একটি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ, আরো একটি হোয়াটওয়াশ উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে মাশরাফি। বাংলাদেশের ২৩তম সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে আরো দুর্বার বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে দক্ষতা দেখিয়ে হেসেখেলেই জিতে নিয়েছে ম্যাচটি। আজ সিরিজের শেষ ওয়ানডের আগে গতকাল দলের ঐচ্ছিক অনুশীলনে ছিলেন না দুটি চোট নিয়েও সিরিজে নেতৃত্ব দেয়া ওয়ানডে অধিনায়ক। সেই সুযোগে মেলে দিলেন আবেগের ডালা, খুলে ধরলেন অভিজ্ঞতার ঝাঁপি। শোনালেন, ‘এখন আমরা ১০ উইকেটে জয়ের কথাও ভাবতে পারি’র সত্যটা। সে গল্পই শোনাচ্ছেন -তাপস বড়–য়া রুমু

* বেশ কিছুদিন থেকেই দুর্দান্ত এক বাংলাদেশকেই দেখছে ক্রিকেট বিশ্ব। নিধাহাস ট্রফি থেকে শুরু করে এশিয়া কাপ হয়ে ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের মাঝেও আক্ষেপের কাঁটা হয়ে গলায় বিঁধেছিল ওপেনিং জুটি। ইমরুল-লিটনের জুটিতে সেই স্বস্তি কি ফিরেছে?
মাশরাফি : তামিম-সাকিব নেই। মুশফিক, রিয়াদও চোটে। আমি নিজেও খেলছি দু-দু’টি চোট নিয়ে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে একটি সঠিক কম্বিনেশনের খোঁজ করছিলাম। ওপেনিংটা বেশি ভোগাচ্ছিলো, সেই জায়গাটিতে আমি বলবো ‘আপাতত’ স্বস্তি ফিরেছে। তবে শেষ সময়ে এসে কেন জানি খেই হারিয়ে ফেলছি!

* গতকাল (পরশু) তো ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই দল ভালো করেছে। খেই হারিয়ে ফেলার কথা বলছেন, বুঝিয়ে বলবেন?

মাশরাফি : লিটন ও ইমরুল যেভাবে খেলছিল তাতে আমি মনে করেছিলাম, তারাই জয় তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়বে। ওদের জোড়া সেঞ্চুরি হয়ে গেলে ১০ উইকেটেই ম্যাচ জয় নিশ্চিত হতো। কিন্তু ৯০ রানের ঘরে এসে অযথাই শট খেলতে গিয়ে খেসারত দিতে হয়েছে। কেউ ফর্মে থাকলে এই রকম পরিস্থিতিতে সেটা পুরোপুরি কাজে লাগানো উচিত। এ রকম অবস্থায় টিম ইন্ডিয়া দেখা যায়, ১০ উইকেটের জয় তুলে নেয়, সেইসঙ্গে দুই ওপেনার শেখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা সেঞ্চুরিও হাঁকায়।

* আউট হওয়ার ধরন নিয়ে কিছু বলতে চাইছিলোন বোধ হয়?

মাশরাফি : আপনি যদি খেয়াল করে দেখেন, দু’জনেই (লিটন-ইমরুল) খুব বাজে বলে আউট হয়েছে। যদি ভালো কোনো বলে তারা আউট হতো, সেটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তারা সেট হওয়ার পরও যেভাবে আউট হয়েছে এটা উচিত হয়নি। তাদের দু’জনেরই সেঞ্চুরি পাওয়া উচিত ছিল।

* সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেছে। এবার পরিকল্পনা কি?

মাশরাফি : সিরিজ নিশ্চিত হয়েছে বলে আমরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। কিছুটা রিলাক্সড থাকলেও হোয়াইটওয়াশের ভাবনাতেই সময় কাটাচ্ছি। এশিয়া কাপের ভালো কিছু অর্জনের পর আমাদের ড্রেসিং রুমের আত্মবিশ্বাসটা অনেক উপরে উঠে গেছে। এটা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আমাদেরকে অনেক এগিয়ে রেখেছে। ক্রিকেটে আত্মবিশ্বাসটা বড় একটি ব্যাপার।

* দলের দুই ভরসা তামিম-সাকিব নেই। সিনিয়রদের ইনজুরির ভিড়ে তরুনদের সমন্বয়ে দলের এমন পার্ফরম্যান্সে আপনার মুল্যায়ন কি?

মাশরাফি : আমাদের দু’জন ভাইটাল খেলোয়াড় (তামিম ও সাকিব) দলে নেই। তবে পুরো সিরিজে আমাদের দলের ব্যাটসম্যানরা বিশেষ করে ইমরুল কায়েস ধারাবাহিক ভালো পারফর্ম করছে। এশিয়া কাপের পর থেকে মুশফিকও রয়েছে ছন্দে। লিটন রানে ফিরেছে। তাদের সঙ্গে নতুনদের মাঝে সাইফউদ্দিন লোয়ার অর্ডারে দারুণ খেলছে। মিরপুরে ব্যাটিংয়ের পর এখানে দুর্দান্ত বোলিং করেছে। সবচেয়ে ভালো লাগার ব্যাপার হলো, ওপেনিংয়ে ইমরুল কায়েস সেট হয়ে গেছে। টিমে এখন সুন্দর ‘কম্পিটিশন’ চলছে।

* সবার কথাই বললেন কিন্তু ৩০ বছর বয়সে অভিষেকের চাপটা কি নিতে পারছে না ফজলে মাহমুদ রাব্বি? আপনি কিভাবে দেখেন।

মাশরাফি : রাব্বি প্রথম ম্যাচে রান না পাওয়ায় দ্বিতীয় ম্যাচে রান পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। রানের জন্য তাড়াহুড়া করতে গিয়েই নিজের বিপদ ডেকে আনে সে। তারপরও যদি কেউ আমাকে বলেন, সিরিজের শেষ ম্যাচে মূল একাদশে তাকে রাখা যায় কিনা, তার উত্তরে আমি হ্যাঁ বলবো। কারণ, ওকে যখন টিমে ডাকাই হয়েছে, তাহলে আরেকটু সুযোগ দেয়া উচিত। অনেক খেলোয়াড়কেই এমন ব্যাকআপ দেয়া হয়েছে আগে। তাকেও দেয়া যায়। ওর মতো আমিও অস্ট্রেলিয়া সিরিজে টানা শূণ্য রানে আউট হয়েছিলাম। তাই আরেকটা সুযোগ রাব্বি পেতেই পারে। তবে আমি একা তার পক্ষে বললে তো হবে না। টিম ম্যানেজমেন্ট কি ভাবছে তাকে নিয়ে সেটাও বিবেচ্য বিষয়।

* ক্রিকেরেটের পাইপলাইন সমৃদ্ধ। অনেকেই আছে সুযোগের অপেক্ষায়, কাকে রেখে কাকে নেবেন?

মাশরাফি : এটা ঠিক ক্রিকেটে এখন অনেকেই আলো ছড়াচ্ছে। তারমধ্যে তামিম ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরলে মধুর সমস্যায় পড়বেন নির্বাচকরা। সৌম্যও রানে ফিরেছে। তাকে সিরিজের শেষ ওয়ানডে দলে ডাকা হয়েছে। সৌম্য এক কিংবা সাতেও ব্যাট করতে পারে। সৌম্য এখন বোলিংও ভালো করছে। ইংল্যান্ডে কিংবা ওই ধরণের কন্ডিশনে অধিকাংশ সময়ই দলে চার পেসার নিয়ে খেলতে হয়। সেক্ষেত্রে সৌম্য ও সাইফুদ্দিন ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ভালো করতে পারলে দলের জন্য প্লাস পয়েন্ট। দলের সঙ্গে থাকা আরিফুলকেও একাদশে খেলানো দরকার। শান্তও একাদশে জায়গা পাওয়ার দাবি রাখে। রুবেল হোসেন তো পরীক্ষিত। আবু হায়দার রনিও প্রথম ম্যাচে ভালো করেছে। তাকেও আরো ম্যাচ খেলানো দরকার। কিন্তু সবকিছুই নির্ভর করে কে কোন পজিশনে খেলে সেটি বিবেচনায় নিয়ে একাদশে থাকা ওই পজিশনের খেলোয়াড় কি ভাবছে তার ওপর।’

* বিকল্প যেহেতু বেশি, সিরিজও যেহেতু নিশ্চিত সেক্ষত্রে আগামীকালের (আজকের) ম্যাচে কি কোন পরিবর্তন আসতে পারে?

মাশরাফি : এটি টিম ম্যানেজম্যান্টের ব্যপার। যদিও আমি কিছুটা সমন্বয় করি। কিন্তু পুরো ব্যপারটিই দেখবেন নির্বাচক প্যানেল। যদি মুশফিককে বিশ্রাম দেয়ার চিন্তা করা হয়, সে তো এখন ফর্মে আছে। চার নম্বর পজিশনে মুশফিক থাকলে অন্য কাউকে বিবেচনা করা কঠিন। রিয়াদ অবশ্য সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভালো করতে পারেনি। সেও চাইবে রানে ফেরার জন্য। তাই সেট হওয়া পজিশনে যে খেলোয়াড় রয়েছে, তার চিন্তাভাবনাকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হচ্ছে।

* আপনি নিজেও ইনজুরিতে ভুগছেন, এই ম্যাচে বিশ্রামের কথা ভাবছেন কী?

মাশরাফি : দেখুন, অনেকেই একাধারে ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০ ম্যাচ খেলে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও সব ফরম্যাটে খেলে তারা। কিন্তু আমি তো শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটেই এখন খেলি। তাই সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচের পর এমনিতেই চার-পাঁচ সপ্তাহ বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। এ কারণে সিরিজের এই পর্যায়ে এসে বিশ্রামে যেতে চাচ্ছি না। বরং শেষ ম্যাচটিতেও মাঠে থাকতে চাচ্ছি। এরপর বিশ্রামের সময় তো পাচ্ছিই। তখন ইনজুরির চিকিৎসাও করাবো।’



 

Show all comments
  • Simon ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৩২ এএম says : 0
    Ahaa, its good discussion
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাশরাফি

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ