২৮ বছর বয়সী আব্বাসের দাপুটে বোলিংয়েই অজিদের ৩৭৩ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে পাকিস্তান, যা রানের ব্যবধানে দলটির সবচেয়ে বড় জয়। আব্বাসের এমন অসাধারণ বোলিংকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।
দ্বিতীয় টেস্টের ম্যাচ সেরা হওয়ার পাশাপাশি সিরিজ সেরাও হয়েছেন আব্বাস। এর চেয়ে ভালো একজন ক্রিকেটারের জন্য কি হতে পারে? শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানে ৫ উইকেট আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেন আব্বাস। দুই টেস্ট মিলিয়ে তার উইকেট সংখ্যা ১৭।
১০.৫৮ গড়ে ১৭ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের হয়ে এক সিরিজে কমপক্ষে ১৫ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে সেরা গড়ের মালিক এখন আব্বাস। আগের সেরা ছিলেন সাবেক পেসার মোহাম্মদ আসিফ। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০.৭৬ গড় ছিল তার।
শুধু তাই না, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আব্বাসের এই গড় গত ১০০ বছরের মধ্যে সেরা। তার ক্যারিয়ার গড় ১৫.৬৫, যা কমপক্ষে ৫০ উইকেট পাওয়া ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সেরা আর সবমিলিয়ে চতুর্থ সেরা।
আব্বাসের পর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাবেক বাঁহাতি স্পিনার বার্ট আয়রনমঙ্গারের গড় ১৪ টেস্টে ১৭.৯৭। এরপরের স্থানে থাকা ইংলিশ কিংবদন্তি পেসার ফ্রাঙ্ক টাইসনের বোলিং গড় ১৭ টেস্টে ১৮.৫৬। আব্বাস সবেমাত্র ১০ ম্যাচ খেলেছেন। এখনও সামনে অনেকটা পথ পড়ে আছে। হয়তো বোলিং গড়ে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু শুরুটা তো স্বপ্নের মতোই হয়েছে তার।
কিন্তু বছর দুয়েক আগেও তিনি যখন এক চামড়ার কারখানায় কাজ করতেন তখন কেইবা ভেবেছিল এই ছেলে একদিন পাকিস্তানের জাতীয় দলের সেরা তারকায় পরিণত হবেন।
এক যুগ আগে, কোর্টে অফিস বয়ের কাজ করতেন আব্বাস। আবাসন ব্যবসা সংক্রান্ত কেসের তথ্য লিপিবদ্ধ করতেন। তারও আগে চামড়া কারখানার ঢালাইকর ও কারখানার শ্রমিক ছিলেন। আব্বাসের নিজের ভাষ্যমতে, এইসব চ্যালেঞ্জিং কাজই তাকে ক্রিকেটার হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে সাহায্য করেছে।
এই বছরের শুরুতে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’কে আব্বাস বলেন, ‘ক্রিকেটের আগে আমার জীবন ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং কিন্তু সেই প্রতিকূল সময় আমার ক্রিকেটার হতে সাহায্য করেছে। কারণ, এরপর আমি যখন ক্রিকেটে আসি তখন বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করার মতো পরিণত হয়েই এসেছি।’
‘আমি যখন কোর্টে কাজ করতাম তখন আমি জেলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য নির্বাচিত হই। তারা আমাকে চাকরি অথবা ক্রিকেট যেকোনো একটা বেছে নিতে বলেন। আমি সেই রাতের কথা ভুলতে পারিনা। কিন্তু আমার এক বন্ধু, যে আবার আইনজীবীও, সেই আমাকে দুটিই চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।’
সেই থেকে আব্বাসের জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলতে শুরু করে। ‘দলকে তখন আমার ও বোর্ডের সচিবের ছেলের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হয় এবং সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয় টসের মাধ্যমে।’ সাক্ষাৎকারে জানান আব্বাস।
‘টস আমার পক্ষে যায় এবং আমি ৫ উইকেট পাই। এরপর আমি প্রদেশের একাডেমিতে সুযোগ পাই এবং তারপর থেকে আর থামিনি।’
যখন চামড়ার কারখানায় কাজ করতেন তখনও ক্রিকেট ছাড়েননি আব্বাস। এমনকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করার পর সঙ্গে সঙ্গে মাঠে ছুটে যেতেন এই নতুন সেনশেসন।
আজ সেই পরিশ্রম আর ত্যাগের দারুণ মূল্যায়ন পাচ্ছেন আব্বাস। তাকে ভবিষ্যতের এক নম্বর বোলার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন। তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন, পল কলিংউডসহ আরও অনেকে।