পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার সকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মাসেতুর নামফলক ও ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার সেতুর কাজের ৬০ শতাংশ অগ্রগতি উদ্বোধন করেছেন। একই সময়ে তিনি ‘পদ্মাসেতু রেলসংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের’ উদ্বোধন করেছেন এবং ১ হাজার ৩০০ মিটার নদীতীর স্থায়ী সুরক্ষা কাজের উদ্বোধন করেছেন। পরে তিনি মাওয়া টোলপ্লাজা সংলগ্ন গোলচত্বরে সুধী সমাবেশ বক্তব্য রেখেছেন। বিকালে প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর জাজিরা অংশে সেতুর অগ্রগতি পরিদর্শন ও ওই অংশে রেলসংযোগ নির্মাণের উদ্বোধন করেছেন। পরে শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। একইদিনে পদ্মাসেতুর অগ্রগতিসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন, নি:সন্দেহে এই সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞার পরিচয় বহন করে। একথা কারো অজানা নেই, এই সেতু নির্মাণ এক সময় মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। বিশ্বব্যাংক সেতু প্রকল্প থেকে সরে গেলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল এর বাস্তবায়ন। সে সময় অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে মোতাবেক পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হয় এবং ইতোমধ্যে এর কাজের ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মাসেতু দেশের বৃহত্তম সেতু এবং এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এই সেতুর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও উন্নয়ন-সংশ্লিষ্ট গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা-গবেষণা হয়েছে। আমরা এর পুনরাবৃত্তি করতে চাইনে। শুধু এ আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই যে, যতদ্রুত সম্ভব সেতু এবং সেতুসংশ্লিষ্ট সকল প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হোক, যাতে এর সুফল দেশ ও জনগণ দ্রুত পেতে পারে। প্রসঙ্গত এও স্মরণ করা যেতে পারে, এই সেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি অন্যান্য মেগা প্রকল্পের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও এই অগ্রগতি প্রত্যাশা মতো হয়নি। ফলে এর বাস্তবায়ন-সময় বর্ধিত করা হয়েছে। এই সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে। শুরুতে এর সম্ভব্য ব্যয় যা নির্ধারণ করা হয়েছিলেন ইতোমধ্যে তার কয়েক গুণ বেশি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
কথা ছিল, এ বছরের ডিসেম্বর নাগাদ পদ্মাসেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে আরোও এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, ২০২১ সালের আগে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। এ অংক আরো বাড়তে পারে। আমাদের দেশে ব্যতিক্রম বাদে কোনো প্রকল্পের কাজই সূচনাকালের প্রাক্কলিত ব্যয়ে ও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। একের পর এক ব্যয় বাড়ে, সময়ও বাড়ে। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে সড়ক ও সেতু নির্মাণ ব্যয় দক্ষিণ এশিয়াতেই শুধু নয়, গোটা এশিয়াতেই সর্বোচ্চ। এর মানে এই দাঁড়ায় যে, এই ব্যয়ের একটা বড় অংশ এদিক-সেদিক হয়ে যায়, সাতে ভুতে লুটে খায়। এক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে কাজের মান অত্যন্ত নিম্ন। বিপুল ব্যয়ে নির্মিত সড়ক দেবে গেছে কিংবা উদ্বোধনের আগেই সেতু ভূতলশায়ী হয়েছে, এমন নজির বিরল নয়। সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কয়েক মাস যেতে না যেতেই ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে এরূপ নজির তো ভুরিভুরি। জনগুরুত্বসম্পন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে জনগণের ট্যাক্সের টাকার এ ধরনের অপচয় অন্য কোনো দেশে হয় বলে আমাদের জানা নেই। অসম্ভব ব্যয়, কাজে ধীরগতি এবং কাজের নিম্নমান আমাদের দেশে শুধু বাস্তবতা নয়, নিরেট‘ সংস্কৃতিতে’ পরিণত হয়েছে। অত্যন্ত দু:খজনক হলে বলতে হচ্ছে, সরকারের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মাসেতু ছাড়া অন্যান্য প্রকল্পের কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। কোনো কোনো প্রকল্প এখনো কাগজ-কলমের মধ্যেই আটকে আছে। এসব প্রকল্পের কাজ কবে শুরু, সচল ও শেষ হবে, কেউ বলতে পারে না। অথচ এসব প্রকল্পের কথা বলে সরকারের তরফে উন্নয়ন-অগ্রগতির জয়গান গাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রকল্পের নাম ঘোষণা কিংবা লোক-দেখানো কিছু কাজ করা আর যথাসময়ে তা বাস্তবায়ন করা এককথা হতে পারে না।
সরকার এপর্যন্ত ছোট-বড় শত শত প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এদের মধ্যে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে, কাজও শুরু করেছে। তবে এসব প্রকল্প কবে নাগাদ শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন-নিশ্চয়তা না থাকলে কোনো প্রকল্প নেয়া আর নয় নেয়া এক বরাবর হয়ে যায়। জনগণ উপকার ভোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। তাই কৃতিত্ব দেখানো কিংবা প্রচারে থাকার জন্য প্রকল্প নেয়া উচিৎ নয়। যতটুকু করা সম্ভব বা যতটা সমর্থ আছে তার বিবেচনাতেই প্রকল্প নেয়া উচিৎ এবং তা যাতে ঠিক সময়ে মানসম্পন্নভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তার নিশ্চয়তা বিধান করা উচিৎ। পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকল্প অনুমোদনের হিড়িক পড়ে গেছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে অন্তত ১২৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশজুড়ে প্রকল্প উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ইত্যাদি চলছে উৎসবের আমেজে। এসব প্রকল্প আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা, হলেও কবে হবে, বলার উপায় নেই। এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগুরুত্বের দিকটি প্রাধান্য রাখতে হবে, ব্যয়, সময় এবং কাজের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। যুক্তিসঙ্গত ব্যয়ে, নির্ধারিত সময়ে ও মানসম্পন্নভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার এ দিকে যথোচিত নজর দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।