Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশে এসেছি পালাবো না

রাজশাহী মাদরাসা মাঠে বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য উপস্থিত জনতাকে ওয়াদা করানো হলো

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

‘আমি জোর করে দেশে ফিরেছিলাম, পালানোর জন্য নয়, আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালায় না’ মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না’ বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে গতকাল রোববার রাজশাহী মাদরাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পালায় না, দেশে এসেছি পালানোর জন্য নয়। পালায় আপনাদের (বিএনপি) নেতারা। জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিলেন আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরেছিলাম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানান এবং ওয়াদা করিয়ে নেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমি জানি, বিরোধী দল অনেক কথাই বলে। তারা আমাদেরকে আবার নোটিশ দেয়। আবার বলে আমরা নাকি পালানোর পথ পাবো না। আমি এই বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করি পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না। পিছু হটে না, আমরা পালাবো না।

শেখ হাসিনা বলেন, আবার ২০০৭ সালে যখন তত্ত¡াবধায়ক সরকার আসে, তখনও আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল। তার বাচ্চা হয়েছিল, অপারেশন হয়েছিল, তাকে দেখতে। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, আমি যাবো। এই কেস আমি মোকাবিলা করবো। আমি দেশে ফিরে এসেছি। শুধুমাত্র বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে।

বিএনপি নেতৃত্বের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতারা কে? বিএনপি নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে। যে নাকি ২০০৭-এ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্প কাগজে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনও দিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, পালিয়ে গিয়েছিল, সে কথা কি বিএনপি নেতাদের মনে নেই?

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশকে উন্নয়নের কাজ শুরু করেছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা তা বাধাগ্রস্ত করার জন্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। বিদেশে থাকায় আমরা দুই বোন বেঁচে যাই। আমি জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র রুখে শুধু দেশের মানুষের ভাগ্যেন্নয়নের লক্ষ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে এসে মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার কাজ শুরু করেছি। এই বাংলার মানুষের কথা ভেবেই দেশে এসেছি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা দেয়নি। আওয়ামী লীগ আজ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। বিএনপি বলে ক্ষমতা গেলে পালানোর সুযোগ পাবেন না।

আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য উপস্থিত জনতাকে ওয়াদা করিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দেয়ায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন? তার কথার জবাবে এ সময় জনসভায় উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ দুই হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে হ্যাঁ- সূচক জবাব দেন। তিনি বলেন, ভোট হবে এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে। আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদশে যেন করতে পারি, আপনার এ জন্য নৌকায় ভোট দেবেন। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই আজ দেশ স্বয়ংসম্প‚র্ণ হয়েছে। একদিনে ১০০ সেতু, ১০০ সড়ক কোনো সরকার করতে পেরেছে? আওয়ামী লীগ পেরেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল বলে বিনা পয়সায় করোনার টিকা দিয়েছি। কে দিয়েছে? এই বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ সরকার। উন্নত দেশও পারে নাই। তিনি বরেন, নৌকায় ভোট না দিলে দেশ স্বাধীন হতো না। তাদের নেতা জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল হতে পারতো না। খালেদা জিয়াও প্রধানমন্ত্রী হতে পারতো না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজশাহী সারাজীবন অবহেলিত ছিল। আপনারা এখানে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা উন্নয়ন করেছি। রাজশাহীতে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। রাজশাহীতে ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। আজ যে কাজগুলো উদ্বোধন করা হলো এগুলো রাজশাহীবাসীকে আমার উপহার। ২০০৮ সাল থেকে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। রাজশাহীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। রাজশাহীর আম বিদেশে যাচ্ছে। রাজশাহীতে আর্ন্তজাতিক মানের ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম হবে। তবে এজন্য শুধু সরকার নয় এখাকার বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সব মানুষের জন্যই কাজ করছি। গৃহহীনদের গৃহ দিচ্ছি। প্রতিটি পরিবার যেন ভাল থাকে সে লক্ষ্যই কাজ করছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ করছি। শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। ৫৬০টি মডেল মসজিদ করেছি। ইমাম, মোয়াজ্জেমদের ভাতা প্রদান করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ হবার পর কর্মসংস্থানের ব্যাপক কাজ হয়েছে। বেশী দামে কিনে কম দামে মানুষকে দিচ্ছি। টিসিবির মাধ্যমে এককোটি মানুষকে কমদামে চাল, ডাল, চিনি,তেল দেয়া হচ্ছে। ত্রিশটাকা কেজিতে চাল খাচ্ছে মানুষ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। জামায়াতকে সাথে নিয়ে জঙ্গীবাদ, খুন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করেছিলেন। রাজশাহীতে পুলিশকে কুপিয়ে মেরেছে, পুড়িয়েছে। বাংলা ভাইয়েরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে। মানুষের ভোটাধিকার হরন করেছে। দেশ এক নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছিল। আমরা সেসব থেকে মুক্ত করেছি। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করেছি। আর কখনোই দেশ পিছিয়ে যাবেনা। তিনি উপস্থিত জনতার উদ্যোশে বলেন আপনারা উন্নয়ন চান কিনা । ওয়াদা করেন ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য গতবারের মত এবারও নৌকায় ভোট দিবেন।

প্রধানমন্ত্রী বক্তেব্যের আগে ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ও ফলক উন্মোচন করেন। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ক্রেষ্ট উপহার দেন। নগর আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ডাবলু সরকার ও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনীল কুমার সরকার ও আব্দুল ওয়াদুদ দারা শুভেচ্ছা উপহার দেন। নগর সভাপতি মো: আলী কামাল দুটি বই উপহার দেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৫ বছর পর রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষন দিলেন। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, শেখ হেলাল, জাতীয় সংসদের হুইপ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রাজশাহী বিভাগের আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন প্রমূখ। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগের আট জেলার এমপি, সাবেক এমপিসহ বিভিন্ন পয্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ভারপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল এবং সঞ্চালনা করছেন নগর সেক্রেটারী ডাবলু সরকার ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। #



 

Show all comments
  • Kma Hoque ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ৬:৫৯ এএম says : 1
    আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ৬:৫৯ এএম says : 0
    ম্যাডাম আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন না তখন আপনাদের বেশিরভাগ প্রভাবশালী নেতা এ দেশে ছিলো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারা আবার দেশে আসে
    Total Reply(0) Reply
  • alxjesy ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:০০ এএম says : 0
    протеин сывороточный 1 кг
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ৬:৫৪ এএম says : 0
    আপনার মতো আ.লীগের সব নেতাদের নীতি আদর্শ ঠিক থাকলে এ দেশে অনেক আগেই উন্নত হতো। কিন্তু আপনাদের অনেক নেতা তারা আপনারা ক্ষমতায় না থাকলে এ দেশে থাকে না। কারণ তারা তো টাকার জন্য রাজনীতি করে না। তাদের নীতি আদর্শ আ.লীগ না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ