পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রক্তে ইউরিক এসিডের লেবেল পরীক্ষার জন্য এক টুকরো বিশেষায়িত কাগজই যথেষ্ট। এ জন্য ঝক্কি-ঝামেলা পুইয়ে কোনো প্যাথলোজিকাল ল্যাবরেটরিতে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। রক্তের স্যাম্পুল দিতে হবে না। পরীক্ষা করাতে হবে না। ঘরে বসেই এই কাগজ ব্যবহার করে রক্তে ইউরিক এসিডের লেভেল জানা যাবে। এই বিশেষ ধরনের কাগজে কয়েক ফোটা ইউরিন দিলেই রক্তে ইউরিক এসিডের লেবেলটি স্পষ্ট হয়ে যাবে। কাগজে প্রতিফলিত রং দেখেই বুঝা যাবে, রক্তে ইউরিক এসিডের লেভেল স্বাভাবিক, না অধিক। শুধু তাই নয়, এই পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির অবস্থাও জানা যাবে। কাগজটির ব্যবহার খুবই সহজ এবং এ জন্য খরচও অত্যন্ত কম। কাগজটি উদ্ভাবন করেছেন বুয়েটের কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিদুস সামাদ খানের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল। এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এই উদ্ভাবন। তবে উদ্ভাবকরা এর মধ্যেই একজন রোগীর ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করেছেন। মহিদুস সামাদ খান জানিয়েছেন, দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি তাদের এই উদ্ভাবনে চালিকাশক্তির কাজ করেছে। তিনি বলেছেন, খুই সস্তা এ কাগজের দাম পড়তে পারে বড় জোর পাঁচ টাকা। অথচ এই পরীক্ষাই কোনো ল্যাবে করাতে হলে দিতে হয় অন্তত ২৫০ টাকা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা অবশ্য বলে থাকেন, ইউরিন পরীক্ষায় রক্তে ইউরিক এসিডের লেবেল সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চত হওয়া যায় না। এজন্য রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। তবে প্রাথমিকভাবে ইউরিক এসিডের লেবেল জানা যায় ইউরিন পরীক্ষার মাধ্যমে। সেই দিক দিয়ে বলা যায়, এই নতুন উদ্ভাবন প্রাথমিক পর্যায়ের কাজটিই করবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, ঘরে বসে সহজে এই প্রাথমিক পর্যায়টি জানাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যে কেউ এতে জানতে পারবেন তার রক্তে ইউরিক এসিডের লেবেল স্বাভাবিক, না অধিক। স্বাভাবিক হলে নিশ্চত হবেন। অধিক হলে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা নেয়ার দিকে যেতে পারবেন। মহিদুস সামাদ খান দাবি করেছেন এই বিশেষায়িত কাগজটি কিডনি রোগীদের অবস্থা মনিটারিং করতেও চিকিৎসকরা ব্যবহার করতে পারবেন।
ইউরিক এসিড দেহের মধ্যে জমা হওয়া এক ধরনের বর্জ্য, যা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। কিন্তু এটি অধিক পরিমাণে তৈরি হলে দেহের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে জয়েন্ট ও কোমল টিসুতে জমা হয়ে স্ফটিকের মতো বস্তু তৈরি করে, যা থেকে বাত-ব্যাথা হয়। গেটে বাতের উদ্ভব এর মাধ্যমেই হয়। আমাদের দেশের মানুষের বয়সের একটা পর্যায়ে দেহে ব্যথা-বেদনা, বিশেষভাবে গেটে বাত হতে দেখা যায়। গেটে বাতের তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। কিডনি রোগের ক্ষেত্রেও ইউরিক এসিডের একটি নিয়মক ভূমিকা রয়েছে। ইউরিক এসিডের প্রাচুর্য বা অধিক্য কিডনির কন্ডিশনের ইন্ডিকেটর হিসাবে গণ্য। ইউরিক এসিডের লেবেল স্বাভাবিক থাকলে বুঝা যায়, যা তৈরি হচ্ছে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাচ্ছে। আধিক্য পরিলক্ষিত হলে বুঝতে হবে, সমস্যা আছে কিংবা হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা নিতে হবে। আমাদের দেশে খুব কম মানুষেরই স্বাস্থ্যসচেনতা আছে। অনেকের চিকিৎসকের কাছে যেতে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে অনীহাও আছে। ফলে নিতান্ত নিরূপায় না হলে এই শ্রেণীর মানুষ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয় না। আর যখন দ্বারস্থ হয় তখন দেখা যায়, দেহে নানা রোগব্যাধী বাসা বেঁধেছে এবং এমনও দেখা যায়, কোনো কোনো রোগ চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে। অথচ প্রত্যেকই যদি স্বাস্থ্য সচেতন হয়, মাঝে মধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, তবে এমনটি হওয়ার কথা নয়। এদেশে বাত-ব্যথা কিংবা কিডনি সমস্যা বা রোগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। রক্তে বিদ্যমান ইউরিক এসিড নিয়মিত পরীক্ষা করে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনে কিংবা ওষুধপত্র ব্যবহার করে অতিমাত্রায় ইউরিক এসিড তৈরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে কারোরই ইউরিক এসিডজনিত স্বাস্থ্যসমস্যা ও রোগ দেখা দিতে পারে না।
এহেন বাস্তবতায় বুয়েটের গবেষক দল রক্তে ইউরিক এসিডের লেবেল পরীক্ষার জন্য যে উপকরণ ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তা স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা এ জন্য প্রধানসহ পুরো দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে কোনো উদ্ভাবন সমগ্র মানব জাতির জন্যই আশির্বাদস্বরূপ। তাদের এই উদ্ভাবন আমাদের দেশেই কেবল নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মানুষের উপকার ও কল্যাণে অবদান রাখতে পারে। উদ্ভাবনটি যেহেতু এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তাই এর উন্নয়নে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। গবেষক দলকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। সরকার এক্ষেত্রে সহযোগিতা দিতে পারে। বেসরকারী পর্যায় থেকেও সহযোগিতা আসতে পারে। উদ্ভাবিত উপকরণটির বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং ব্যবহার উন্মুক্ত করার বিষয়টি জরুরিভাবে বিবেচনায় নিতে হবে। সহজ এবং সস্তা এই সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে উপকরণটির বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেমন যেতে হবে তেমনি সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক মানের বেশ কিছু ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানী আছে। বেক্সিমকো, ইবনেসিনা, স্কয়ার, ইত্যাদির কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে। এদের অনেকের এবং এদের বাইরেও আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল রয়েছে। তারা এক্ষেত্রে দুই দিক দিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে পারে। আর হাসপাতালগুলো এর ব্যবহার জনপ্রিয় করে তুলতে পারে। বড় বড় ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি ও হাসপাতাল শুধু ব্যবসা করার জন্য নয়, মানুষের সেবা ও মঙ্গলের জন্যও তাদের কিছু করা উচিৎ। আমরা আশা করবো, তারা এদিকে এগিয়ে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।