দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আমাদের কাছে কোরবানী এসে হাজির হয়। রমজান এসে হাজিরা দেয়। হজ্জের দাওয়াত পেয়ে আল্লাহর মেহমানগন মাক্কাতুল মুকাররামায় সমবেত হন। সবগুলোর উদ্দেশ্য একটি আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে বোনাস হিসাবে আনন্দ, উল্লাস, মজাদার খাবার, বিদেশ ভ্রমন, গোস্ত খাওয়া ইত্যাদি উপভোগ করে থাকি। মানুষ ঠিকভাবে কাজ করলে তাকে বেতন দেওয়া হয়। বেতন না পেলে বোনাসের কি আশা করা যায়। বেতনই নেই আবার বোনাস কিসের? কিন্তু আমরা ইবাদাতের ক্ষেত্রে বোনাসকেই প্রাধান্য দেই আসল বেতনের কোন আশা তেমন একটা করি না। সুুরা বাকারার ১৯৬ আয়াতে আল্লাাহ তায়ালা বলেন, আতিম্মুল হাজ্জা ওয়াল ওমরাতা লিল্লাহ। তোমরা কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য হজ্জ এবং ওমরাকে পরিপুূর্ণ কর।
সুুরা হজ্জের ৩৭ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, লাই ইয়ানাল্লাল্লাহা লুহুমুহা ওয়ালা দিমাউহা ওয়ালাকিই ইয়ানালুহুত তাকওয়া মিনকুম। তাহাদের রক্ত আল্লাহর নিকট পৌছেনা এমনকি গোস্তও আল্লাহর নিকট পৌছে ন্ াবরং তার নিকট তোমাদের তাকওয়া পৌছে।
আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে বলেন, ইয়া আউয়ুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম লায়াল্লাকুম তাত্তাকুন । হে যারা ইমান এনেছ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করেছি যেমন ভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর রোজা ফরজ করেছিলাম যাতে করে তোমরা মোত্তাকী হয়ে যাও।
উপরোক্ত তিনটি আয়াতে ৩ টি ইবাদাতের কথা বলা হয়েছে। তিনটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইবাদাতের আসল উদ্দেশ্য তাকওয়ার কথা বলেছেন। একটু চিন্তা করলে আমরা পাই, আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও জীনকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদাত করার জন্য আর ইবাদাত দিয়েছেন এই জন্য যে ইবাদাত করে করে মানুষ তাকওয়াবান তথা আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাবে। নামাজও দিলেন তাকে নামাজের মাধ্যমে স্মরণ করার জন্য।
ভাবনার বিষয় হল, আল্লাহ তায়ালা সব ইবাদাত দিলেন আল্লাহকে চিনে নিয়ে তাকে ভয় করে তার প্রেম ভালবাসা অন্তরে নিয়ে তাঁর বন্দেগী করার জন্য। এখন আমি আমাকে যাচাই করার জন্য এখানে উপস্থাপন করি। আমি যে প্রতিদিন নামাজ আদায় করি, আমার মনে কি একান্ত আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য নামাজে দাড়াই। আমি যখন রোজা আদায় করি। এইতো মাত্র দুই মাস গত হল মাহে রমজান আমাদের কাছ থেকে এক বছরের জন্য বিদায় নিয়েছে। আমি ভেবে দেখিতো আমি কি তাকওয়া অর্জনের জন্য রোজা রাখতে পেরেছি। আমার পুরো মাস রোজা আদায়ের মাধ্যমে সত্যিই কি আমি তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি? তাকওয়ার সামান্যতম গুন কি আমার রোজার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। যদি হয়ে থাকে আলহামদু লিল্লাহ।
প্রতি বছর আমাদের কাছে হজ্জ এবং কোরবানী এসে হাজির হয়। যাদের আল্লাহ তৌফিক দিয়েছেন তারা হজ্জে গমন করেন। তারা এবং আমরা সাধ্য অনুযায়ী কোরবানী দিয়ে থাকি। সত্যি আমি চিন্তা করে দেখিতো আমি যখন কোরবানীর এরাদা করি, গরু, ছাগল কিনে আনি, ঈদের নামাজ আদায় করি, কোরবানী করি। আমার অনুভুতি ভাবাবেগ, আমার নিবেদন, আমার মনের আকুতি, চেহারার প্রতিচ্ছবি, চোখের চাহনি, চলার ভঙ্গি সত্যিই কি আল্লাহর প্রেম ভালবাসা আর তাকওয়াবান হিসাবে চিত্রায়িত করে। যদি সবগুলো নেতিবাচক উত্তর আসে। তাহলে বেতন ছাড়া বোনাসের মত আমার অবস্থা। আসলে যে বেতনই পায় না, তার কি বোনাস হতে পারে? বরং বেতন বোনাস কিছুই নয়। আমার উদর পূর্তি ছাড়া এরকম কোরবানীতে আমার তেমন কোন লাভ বয়ে আনে না।
আমরা কোরবানীকে খুব আনন্দ উল্লাসের মত একটি বিষয় মনে করি। হ্যাঁ আনন্দ অবশ্যই যদি আমার মধ্যে তাকওয়া উপস্থিত থাকে আর কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে রাজি আর খুশি করার জন্য কোরবানী দিয়ে থাকি। আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর স্মৃতি এই কোরবানীর মাধ্যমে অম্লান করে রেখেছেন। ঈদুল আযহার দিন বা এর পূর্বে মসজিদ, ঈদগাহে কোরবানীর ইতিহাস নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। আমরা কান পেতে এই আলোচনা শুনি। কিন্তু এই আলোচনা অনুযায়ী কি আমরা প্রস্তুতি নেই। অনুভুতিকে জাগ্রত ও শানিত করি। এছাড়া যাদের মুখ থেকে আমরা এই বিষয়গুলি শুনে থাকি তাদের ওয়াজের ভাবাবেগ, তাদের চেহারার মধ্যে কি এই মহান স্মৃতির প্রতি গভীর আবেগ আমাদের চোখে পড়ে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, ওনারা বলার জন্য বলেন, আমরা শুনার জন্য শুনি। এর বাইরে এই আলোচনার কোন তাছির আমাদের মধ্যে পড়ছে না। কেন পড়ছে না ইহা নিয়ে ভাবারও আমাদের সময় নেই। আলোচনা যদি ফ্যাশনে রূপ নেয়, শ্রবন করা যদি বিনোদনে রূপ নেয় তবে এই সমাজের বারোটা বাজার বাকি কি থাকে।
তাই আজ কোরবানীর জন্য আমার হৃদয়কে প্রস্তুত করি, চিন্তাকে শানিত করি। আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ দেই। মাওলার সন্তুষ্টি আর মহব্বতের জন্য নিজেকে নিবেদন করি। মাওলার ভয় এবং ভালবাসা নিয়ে কোরবানীর প্রস্তুতি নেই। তখন আমার অন্তর মাওলার ভালবাসায় ভরপুর হয়ে যাবে। জান্নাতি খুশবোতে আমার হৃদয় ভরে যাবে। এক জান্নাতি প্রশান্তি আমার হৃদয়ে বিরাজ করবে। যে শান্তি কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যাবে না। মানুষ দেখবে আমার মাথার উপর হাজারো বিপদ ঝুলছে। আমার মনের শান্তি কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। তাই মাওলাকে আজ নিবেদন করি, হে আল্লাহ আমার সাধ্য অনুযায়ী যেই কোরবানীই আমি দেই না কেন, যতটুকুন গোস্ত পাই আর খাই না কেন। আমার অন্তর তাকওয়ায় ধনে মালামাল করে দাও। আমাকে তাকওয়াবান হিসাবে কবুল করে নাও। আমার ভুলগলো শুধরিয়ে দাও আর মাফ করে দাও। আমীন।
লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।