Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দলীয় কোন্দলেও সক্রিয় আওয়ামী লীগ

তৃণমূলের রাজনীতি: কুমিল্লা দক্ষিণ

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:১২ এএম

কুমিল্লা জেলায় রাজনীতির অন্যতম সাংগঠনিক অংশ দশটি উপজেলার দক্ষিণ জেলা। আসছে ডিম্বেরেরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে বারবার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে দলীয় কোন্দল, দ্ব›দ্ব মিটিয়ে ফেলতে। কিন্তু কুমিল্লা দক্ষিণের বিভিন্ন উপজেলার কোথাও নেতৃত্বের কোন্দল, দ্বিধাবিভক্তি আবার কোথাও দলীয় কর্মকান্ডে গতিশীলতা রয়েছে।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় আ’লীগ বেশ সুসংগঠিত অবস্থায় রয়েছে। এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে সদরের এমপি হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের প্রত্যক্ষ তত্তাবধান ও দিকনির্দেশনায় গঠিত কমিটিগুলোর সাংগঠনিক কর্মকান্ড তৃণমূলের রাজনীতিতে গতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। সদরে আ’লীগের আফজল খান গ্রুপের সঙ্গে এমপি বাহার গ্রুপের অনেকটা দুরত্ব রয়েছে। বর্তমানে আফজল খান গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে তার বড় ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। তবে মহানগর আ’লীগের সভাপতি এমপি বাহারের নেতৃত্বে সদরের মহানগর ও উপজেলা আ’লীগের প্রতিটি ইউনিট সাংগঠনিকভাবে বেশ সক্রিয় ও শক্তিশালী।
নাঙ্গলকোট উপজেলায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সভাপতি পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামালের নেতৃত্বে দলটি ঐক্যবদ্ধ। এখানে উপজেলা আ’লীগের কার্যকরী কমিটি না থাকলেও লোটাস কামালের দিকনির্দেশনায় আহ্বায়ক কমিটি তৃণমূল পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড গতিশীল রেখেছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় আ’লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে নেই গ্রুপিং, দলাদলি, মান-অভিমান। দলের স্বার্থে সবাই উদার নীতিতে অটল। আওয়ামী লীগের এ শক্ত অবস্থান তৈরির হিরো হলেন রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক চৌদ্দগ্রাম আ’লীগকে সাজিয়েছেন শক্ত সাংগঠনিক কাঠামোতে। চৌদ্দগ্রাম আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে কোন কোন্দল না থাকায় বিগত সময়ের উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সাফল্য এসেছে। মুজিবুল হকের একক নেতৃত্ব আর সাংগঠনিক দক্ষতায় তৃণমূল পর্যায়ে চৌদ্দগ্রাম আ’লীগ ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে রয়েছে।
লাকসামের দলীয় এমপি ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মো. তাজুল ইসলামের নেতৃতে দলের সাংগঠনিক অবস্থা বেশ চাঙ্গা। তবে তৃণমূলে মান অভিমান ক্ষোভ চলছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোতে ত্যাগী ও তৃণমুলের নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় একটি গ্রুপ নাখোশ। এরপরও উপজেলায় দলটি সাংগঠনিকভাবে সক্রিয়।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগে চলছে নিরব কোন্দল। একসময় যারা মনোহরগঞ্জ আ’লীগের খুঁটি ছিলেন- তাদেরকে নেতৃত্বে না রাখায় ওই উপজেলায় দলটিতে গ্রুপিংয়ের দানা বেঁধেছে। এমপি তাজুল ইসলামের নিকটাত্মীয় আবদুল কাইয়ুমকে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি করায় দলটিতে কোন্দল দেখা দেয়। মনোহরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের নেতৃত্বের জায়গাটি পরিবার কেন্দ্রিক হয়ে ওঠায় তৃণমূলের রাজনীতিতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বুড়িচং উপজেলায় আ’লীগের সাংগঠনিক অবস্থা শক্ত হলেও নেতাদের গ্রুপিং প্রভাব ফেলেছে দলের অঙ্গসংগঠনের উপর। এখানে উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি আখলাক হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপনের মধ্যে নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব চলছে প্রায় দু’বছর ধরে। স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ওই দুই নেতার বিরোধ মেটাতে পারছেন না। ফলে তৃণমূলের রাজনীতিতে নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বদ্বে ভুগছেন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় আ’লীগে কোন্দল না থাকায় দলটি সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় রয়েছে। এ উপজেলায় এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর নেতৃত্বের প্রতি দলের সবাই আস্থাশীল। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীর সাংগঠনিক দক্ষতা বিচক্ষনতা দলটিকে কোন্দলমুক্ত রেখেছে।
বরুড়া উপজেলায় আ’লীগ ত্রিধারায় বিভক্ত। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বরুড়া উপজেলা আ’লীগের আহ্বায়ক সাবেক এমপি নাছিমুল আলম নজরুল, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক মিয়াজির গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। দ্বন্দের কারণে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাাচনে আ’লীগের বেশিরভাগ প্রার্থীই পরাজয়ের স্বাদ নিয়েছে। দলীয় কর্মসূচি পালন হয় পৃথকভাবে।
সদর দক্ষিণ উপজেলায় আ’লীগের সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী। এ উপজেলার ৯টি ওয়ার্ড কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় মহানগরের রাজনীতির প্রভাব রয়েছে। ফলে এসব ওয়ার্ডেও সদরের এমপি হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহারের নেতৃত্বের প্রভাব রয়েছে। উপজেলার বাকি সাতটি ইউনিয়নেও আ’লীগের গ্রুপিং নেই। পরিকল্পনামন্ত্রীর ছোটভাই উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার ও মন্ত্রীর আস্থাভাজন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আবদুল মালেকের নেতৃত্বে দলটি তৃণমূল পর্যায়ে গতিশীল রয়েছে।
লালমাই উপজেলা। কুমিল্লার ১৭তম নতুন উপজেলা। পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কালামের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত এ নতুন উপজেলায় আ’লীগ সুসংগঠিত। সদর দক্ষিণ থেকে পৃথক হওয়া নতুন এ উপজেলায় তৃণমূল থেকে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নেতৃত্বেই চলছে আ’লীগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ