Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবারের নিরাপত্তা শঙ্কায় কাশ্মীরের পুলিশ সদস্যরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে পাল্টাপাল্টি অপহরণের ঘটনায় নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়েছে রাজ্যটির পুলিশ সদস্যরা। কাশ্মীরে সক্রিয় হিজবুল মুজাহিদিন সদস্যদের কয়েকজন আত্মীয়কে মুক্ত হওয়ার পর অপহৃত পুলিশ পরিবারের ১১ সদস্য মুক্তি পেয়েছেন। তবে হিজবুল কমান্ডার রিয়াজ নাইকু হুমকি দিয়ে বলেছেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে পুলিশ দ্বারা অপহৃত তাদের সংগঠনের সদস্যদের আত্মীয়দের মুক্তি না দিলে পুলিশের স্বজনদের তারা রেহাই দেবে না। এই অবস্থায় পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়েছেন কাশ্মীরের অনেক পুলিশ সদস্য। তাদের কেউ কেউ প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে হলেও কাশ্মীর ত্যাগ করতে চান বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। ভারতের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, রাজ্য পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সেন্ট্রাল রিজার্ভ ফোর্স যৌথভাবে কাশ্মীরে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও পুলিশ পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষাকৃত কম নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে। বুধবার কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলায় এক হামলায় চার পুলিশ নিহত হওয়ার পর কাশ্মীরের বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের কমান্ডার রিয়াজ নাইকুর বাবা আসাদুল্লাহ নাইকুসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই সময়ে বিদ্রোহী সন্দেহে পুড়িয়ে দেওয়া হয় দুটি বাড়ি। এই ঘটনার জের ধরে হিজবুল সদস্যরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাশ্মীরের অনন্তনাগ, কুলগাম, সোপিয়ান ও পুলওয়ামা জেলায় বিভিন্ন পুলিশ সদস্যদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ১১জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। খবরে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর পরিবারের সদস্যরা ভালো সুরক্ষার ক্যাম্পে বসবাস করলেও পুলিশ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তুলনামূলক কম নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে। বিদ্রোহী দমনে পুলিশ সদস্যরা সাহসী অবস্থানে থাকলেও নিচের সারির চাকরিরত পুলিশ সদস্যদের পরিবারই কম নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে। কাশ্মীরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের একটি থানার এক শীর্ষ কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, আমার লোকেরা খুবই হতাশ। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছে। এটা আমাদের অথবা বিদ্রোহীদের পরিবারের সঙ্গেও ঘটতে পারে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার অধীনে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনেক পুলিশ সদস্য কাজ করে থাকেন। তিনি বলেন, ‘যদি পরিবারের সদস্যরা এর মধ্যে যুক্ত হয়ে যায়, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। সামগ্রিকভাবে দুই পক্ষই আক্রান্ত হবে। আমার অনেক বন্ধু ও সহকর্মী দক্ষিণ কাশ্মীর থেকে চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনকি অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছেন।’ কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত। কেউ কেউ আবার কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। ইতিহাস পরিক্রমায় ক্রমেই সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইসলামিকরণ হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের জাতিমুক্তি আন্দোলনকে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী তৎপরতার থেকে আলাদা করে শনাক্ত করে না। সন্দেহভাজন জঙ্গি নাম দিয়ে বহু বিদ্রোহীর পাশাপাশি বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেখানকার বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল মুজাহিদিন সবচেয়ে সক্রিয়। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটিকে ভারতের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন বিবেচনা করে থাকে। আদর্শগতভাবে সংগঠনটি কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। মধ্যম সারির এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, নিজের জীবনের বিনিময়ে তিনি কাজ করে চলেছেন। ডেপুটি সুপারিটেন্ডেন্ট পর্যায়ের আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, পরিস্থিতি যা দাঁড়াচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে খোলাখুলি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমাদের অনেক বিশেষ পুলিশ কর্মকর্তা চাকরি ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও হুমকি ও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এটা পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ কিন্তু আমার অনেক সহকর্মী এটা বুঝতে চাইছেন না। সেই কারণে আমাদের অনেকে মারা যাচ্ছেন। এক পুলিশ কনস্টেবেলের ভাই বলেছেন, দুই পক্ষই পরস্পরের পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। ‘এখন কী হবে, আমার মা খুব ভয় পাচ্ছেন?’ ওই ব্যক্তি বলেন, বিদ্রোহীরা পাগলামি করছে কিন্তু পুলিশও রাতের বেলায় তাদের পরিবারের সদস্যদের তল্লাশি ও বাড়িঘর তছনছ করে একইরকম বোকামি করছে। আমার ভাই হতাশ। সে চাকরি ছাড়তে পারছে না। তার স্ত্রী ও বাচ্চা রয়েছে যাদের দেখাশোনার দায়িত্ব তাদের। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই বিদ্রোহী নেতা সৈয়দ আলী গিলানি, মিরওয়াইজ ওমর ফারুক ও ইয়াসিন মালিকের হস্তক্ষেপ করা উচিত। দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় পোস্টিং থাকা এক পুলিশ কনস্টেবলকে ডেকে পাঠিয়েছে শ্রীনগরে বসবাস করা তার পরিবারের সদস্যরা। বুধবার সেখানে চার পুলিশ নিহত হওয়ার পরই তাকে ডেকে পাঠানো হয়। ওই পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘ছুটি নিয়ে তাকে বাড়ি চলে আসতে বলেছি। সে অসুস্থ আর যদি সে ফিরে না আসে তাহলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ব।’ ৩৪ বছর বয়সী ওই পুলিশ কনস্টেবলের মা এটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। বলছেন, আর কী করার আছে? জীবন আর মৃত্যু আল্লাহর হাতে। আমাদের দারিদ্র্যের কারণে তাকে চাকরিতে যেতে হয়েছে। সে এখনও চাকরি ছেড়ে দিতে চায় কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো ব্যাংক ব্যালান্স আমাদের নেই। হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ