পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এবারের কোরবানির চামড়া কেনা-বেচা নিয়ে এক ধরনের তুঘলোকি কান্ড ঘটে গেছে। গত ত্রিশ বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি। কোরবানির চামড়ার টাকার হকদার গরিব মানুষ, মাদরাসার শিক্ষার্থী ও এতিমরা। তাদের হক এবার মেরে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে কমদামে চামড়া কেনা- বেচা করা হয়েছে। এর পেছনে যে ব্যাবসায়ীদেরই সিন্ডিকেট এবং ট্যানারি মালিকদের পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ কারসাজি রয়েছে, তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। এমনিতেই ট্যানারি মালিকরা নানা অজুহাত দেখিয়ে কম দামে চামড়া কেনার কথা বলেন। সরকার গত বছরের তুলনায় এবার গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট দশ শতাংশ কমিয়ে দিলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। বরং এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও কম দামে সিন্ডিকেট চক্র চামড়া কিনেছে। এতে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথায় যেমন হাত পড়েছে, তেমনি গরিব মানুষের হকও নষ্ট হয়েছে। চামড়া নিয়ে এমন বিপর্যয় ছিল অকল্পনীয়। আগে চামড়া বিক্রি হয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। এবার তা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। চামড়া ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি-বিদেশি চক্র এ শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্যই ষড়যন্ত্র করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, অমিত সম্ভাবনাময় চামড়া খাত নিয়ে বিগত বছরগুলোতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ শিল্পটিকে ধ্বংস করার জন্য দেশি-বিদেশি চক্র কাজ করে যাচ্ছে। শিল্পটি যাতে কোনোভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, এ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা তৎপর। সরকার চামড়া শিল্পের উন্নতির জন্য সাভারে আলাদা চামড়া শিল্প এলাকা গড়ে তুললেও তা নিয়ে নানা টালবাহানা চলছে। হাজারীবাগ থেকে সেখানে ট্যানারি স্থানান্তর নিয়ে অনেক অজুহাত দেখানো হয়েছে। তবে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, শিল্প এলাকাটি পুরোপুরি প্রস্তুত না করেই সরকার সেখানে গায়ের জোরে তাদের স্থানান্তর করতে বাধ্য করেছে। স্থানান্তরিত ১৫২টি কারখানার মধ্যে পুরোপুরি উৎপাদনে সক্ষম মাত্র দশ থেকে বারটি। আর ৪০টির মত কারখানা শুধু ওয়েট-ব্লর কাজ করছে। অর্থাৎ সাভারের ট্যানারি শিল্প এলাকা চামড়া কিনে তা রফতানি উপযোগী করতে এখনো সক্ষমতা লাভ করেনি। এ প্রেক্ষিতে, ট্যানারি মালিকরাও চামড়া কিনছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারেরও দায় রয়েছে। সরকার চামড়ার দাম কমিয়ে দিচ্ছে। যদি চামড়ার দাম বাড়িয়ে ধরা হতো, তাহলে সিন্ডিকেট চক্র তা কমালেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হতো না এবং গরিব মানুষ, এতিম ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সারা বছরের ভরণ-পোষণ ও শিক্ষার খুব একটা ক্ষতি হতো না। এবার চামড়া রেকর্ড কমদামে বিক্রি হওয়ার ফলে তারা মহাক্ষতির সম্মুখীন হবে। এর দায় কে নেবে? চামড়ার দাম কম হওয়ার কারণ হিসেবে আড়তদাররা বলেছেন, ট্যানারি মালিকরা এবার তাদেরকে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ করেনি। আবার ট্যানারি শিল্প পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। চামড়া খাতে যে এত বড় বিপর্যয় ঘটে গেল এদিকে সরকারও কোনো নজর দিচ্ছে না। বলা যায়, অনেকটা উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। এ দায় সরকারও এড়াতে পারে না। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকরা চামড়ার মূল্যে যে গরিব-দুঃখী ও এতিমদের হক রয়েছে, এদিকটি বিবেচনা করে কখনোই মহানুভবতা দেখায়নি। তারা শুধু লাভের চিন্তা করেছে, স্বল্পমূল্যে কিনে অধিক লাভের লোভ করেছে, যা অমানবিক। গরিবের হক মেরে লাভবান হওয়া অত্যন্ত গরহিত কাজ।
আমরা মনে করি, সম্ভাবনাময় চামড়া খাত নিয়ে সরকারকে আরও সচেতন হওয়া দরকার। এ খাতটিকে শক্তিশালী করার জন্য যা যা করা দরকার তা করার উদ্যোগ নিতে হবে। ট্যানারি মালিকদেরকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বলা বাহুল্য, ট্যানারি মালিকরা সারা বছর চামড়া কিনলেও এর সিংহভাগ যোগান আসে কোরবানির সময়। এ সময়টি মানুষের কল্যাণের সময়। এর মাধ্যমে দেশের দরিদ্র মানুষগুলো কিছুটা আর্থিক সুবিধা পায়। তারা কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। যারা মৌসুমী ব্যবসায়ী তারাও কিছু একটা কাজ করার সুযোগ পায়। এ সময় শুধু ব্যবসার সময় নয়, মানবসেবারও সময়। মনুষত্ববোধের পরিচয় দেয়ার সময়। কেবল সস্তায় চামড়া কেনার সুযোগের অপেক্ষায় থাকা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ট্যানারি মালিকদের এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। বছরের এ সময়টিতে তাদের খুব বেশি লাভের চিন্তা না করে দরিদ্র মানুষের কল্যাণের চিন্তা করা উচিত। তারা নিজেরাও তো কোরবানি দেন। তারা যদি তাদের কোরবানির চামড়ার প্রকৃত দাম না পান, তাহলে কি তারা সন্তুষ্ট হন? আমরা মনে করি, ট্যানারি শিল্প মালিকদের মানবিক এ দিকটি বিবেচনা করা প্রয়োজন। মূল্য বিপর্যয় চামড়ার বাজারে যে অস্থিরতা ও অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি করেছে তাতে চামড়া পাচারের আশংকা বৃষ্টি পেয়েছে। চামড়া প্রক্রিয়াকরণে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে চামড়ার মানাবনতি ঘটতে পারে। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এদুটি দিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে কোরবানির চামড়া নিয়ে কোনো ধরনের বিপর্যয়ের সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে আগে থেকেই নীতি পদ্ধতি ও অর্থের যোগান ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।