Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দলিতরা পেশা ও গ্রাম ছাড়ছে গোশালায় আর জায়গা নেই

ভারতে গরু জবাই বন্ধের ফল

দি কুইন্ট : | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ভারতে যখন গরু বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয় তখন সরকার মনে করেছিল যে এর ফলে গরুগুলো হত্যা থেকে রেহাই পাবে। তবে উত্তর প্রদেশের জয়পুর গ্রামের ৭২ বছরের চাষী কানহাইয়া লাল ‘দি কুইন্ট’কে বলেন যে বুড়ো গরু ও ষাঁড়গুলো এখনো মরছে, তবে মুসলমানদের হাতে কসাইখানায় নয়।
২০১৭ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারির দু’মাস পর সুপ্রিম কোর্ট এ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে, কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বাস্তবতার পরিবর্তন করতে পারেনি, অন্ত বারাণসির কাছের গ্রামগুলোতে। এর প্রভাব দেখা গেছে মৃত গরুর চামড়া সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহকারী দলিতদের উপর।
আতংকে পেশা ছাড়ছে দলিতরা
কানাহাইয়া লাল বলেন, মৃত গরুগুলোর চামড়া সংগ্রহের মাধ্যমে দলিতরা গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করে। এ কাজটি চাষীরা আজো তাদের করতে বাধা দেয়। তার কাছে দলিতরা কোথায় থাকে জানতে চাইলে তিনি বারাণসি জেলার জয়পুর গ্রাম থেকে ১০ কি মি দূরের জামুনি গ্রামের দিকে ইঙ্গিত করেন। জামুনি গ্রামের সংযোগস্থলে গিয়ে বিস্মিত হতে হল। দেখা গেল, দু’দশক ধরে সেখানে বাস করা দলিতদের কেউ নেই। গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে তারা।
স্থানীয় অধিবাসীরা বলেন, এ এলাকার দলিতদের জন্য আশু কোনো বিপদ নেই, কিন্তু আতংকে তারা গ্রাম ছেড়েছে। তাদেরকে যখন ক্যামেরার সামনে এ কথা বলতে বলা হল তখন অনেকেই আর এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইল না। আমরা তখন জনতার ভিড় থেকে কিছু দূরে দাঁড়ানো এক চাষীর সাথে কথা বলি।
এতদিন দলিতরা মৃত গরুর চামড়া নিত ও বাকি ব্যবস্থা করত। এখন এগুলো কি করা হয় জিজ্ঞেস করা হলে হলে বলা হএখন তিনজন নিম্নশ্রেণির লোক মৃত গরুটি নিয়ে গ্রাম থেকে কয়েক কি মি দূরে ফেলে আসে। এরপর কুকুর বা অন্যান্য প্রাণি আসে ও তা খেয়ে ফেলে।
দলিতদের কুঁড়ের বাইরে রঙ্গিন কালিতে লেখা- ‘সম্পর্ক করে’ অর্থাৎ যোগাযোগ করুন। আরেকজন স্থানীয় ব্যক্তি অন্য দু’ ব্যক্তির নম্বর দেন যারা গরুর শবের ব্যবস্থা করে।
কুইন্ট-এর পক্ষ থেকে তি জনকে কল করা হয়। তাদের দু’জনের মধ্যে কেই ধরেনি। তৃতীয় নম্বরটিতে এক মহিলা ফোন ধরে জানায় সে এখন নেপাল সীমান্তে আছে।
যে দলিতদের নম্বর আমাদের দেয়া হয়েছিল তারা উত্তর প্রদেশের বারাণসি জেলার জামুনি গ্রামে বাস করত। কয়েক মাস আগেও তারা ছিল।
সুপ্রিল কোর্টের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না হলেও সরকারের নিষেধাজ্ঞা কাযকর রয়েছে। ফলে গ্রাম এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গরুর সংখ্যা বাড়ছে। এতে শুধু দলিতরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। এর পুরো প্রভাব বোঝার জন্য আমরা গো আশ্রয় কেন্দ্র বা গোশালায় যাই।
গোশালায় জায়গা নেই
জামুনি থেকে তিন কি চার কিলোমিটার দূরে শাহানশাহপুর গ্রাম। এখানে রয়েছে সরকার পরিচালিত গোশালা যা নিকটবর্তী গ্রামগুলোর বেওয়ারিশ ও আশ্রয়হীন গরুগুলোর আশ্রয় কেন্দ্র। নন্দ্রে মোদি গত বছর সেপ্টেম্বরে এ গোশালা পরিদর্শন করেন। এ গোশালা তৈরির উদ্দেশ্য হল ভারতীয় জাতের গরুগুলোকে নির্মূল হওয়া থেকে রক্ষা করা। তবে তারা আরো বেশি কিছু করছে।
শাহানশাহপুর গোশালার ডেয়ারি ইনচার্জ এসপি সিং বলেন যে তারা এখন ধারণ ক্ষমতার বাইরে গরু রাখছেন। তিনি বলেন, তারা গরু সংগ্রহ করতে যান না। গ্রামবাসীরা তাদের পরিত্যক্ত গরু এখানে রেখে যায়।
প্রায় ২৫ কিমি দূরে আরেকটি বেসরকারি গোশালা রয়েছে। এটি হচ্ছে বারাণসি জেলার শ্রী কাশিজীব দিয়া বিস্তারি, রামেশ^র গোশালা। এখানকার ইনচার্জ রামপ্রকাশ যাদব জানান, তারা এখানে গরু নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, তাদের গরু রাখার আর জায়গা নেই। গোশালার বাইয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচরণকারী গরুগুলো সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা হবে। আমাদের যা সাধ্য তা করেছি।
উত্তর প্রদেশ ভারতের সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকা। সেখানে গোশালা করার মত পর্যাপ্ত জায়গা নেই। দি কুইন্ট বারাণসি জেলা বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত হংসরাজ বিশ্বকর্মাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
কৃষকেরা ভীত
উত্তর প্রদেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি কৃষক ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক। জবাই-এর জন্য গরু বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত। জামুনি গ্রামের যাদব তাদের একজন। তারা চাপের মধ্যে আছেন , কারণ এসব গরু তাদের ফসল খেয়ে ফেলছে। আগে নীলগাই ভীষণ সমস্যার কারণ ছিল, এখন তারা তো আছেই, তাদের সাথে যোগ হয়েছে বাছুর ও বুড়ো গরুগুলো যেগুলো আমাদের মাঠগুলোতে চরে বেড়াচ্ছে।
জয়পুরের কানহাইয়া লাল আর একটি বিষয় বলেন, গরু পালতে দ্বিধাগ্রস্ত যা আগে ছিল না। গরু পালতে মানুষ এখন মানুষ এখন অত্যন্ত ভয় পায়, তাই গরুর বদলে মহিষ পালতে শুরু করেছে। গরুর মত বড় মহিষ বা বাছুর মহিষ বিক্রিতে কোনো অসুবিধা হয় না। হিন্দুরা গরুকে ভগবান বলে মনে করে, মহিষকে নয়। তিনি বলেন, গরু দুধ দেয়া বন্ধ করলে আমরা সেগুলোকে কয়েক কি মি দূরে নিয়ে যাই ও সেগুলোকে ছেড়ে আসি।
কানহাইয়া লাল বলেন, পুলি গরুসহ কৃষকদের পেলে তাদের ধরে ও হয়রানি করে। তিনি বলেন, আমরা গরু কিনে আনি ও লালন পালন করতে থাকি। কিন্তু পুলিশ আমাদের হয়রানি করে। অনেক সময় গরু ও বাছুর এক সাথে থাকে। তার মনে করে যে কোনো কারণ ছাড়াই আমরা সেগুলো জবাই করতে যাচ্ছি। এটা রাজনীতি।
যাদব ও লাল উভয়েই মনে করেন, সরকার গরু জবাই বন্ধ করার আগে তার পরিণতি নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। সরকার কোনো সমাধান নিয়ে এগিয়ে না আসা পর্যন্ত গরু জবাই বন্ধ করে দলিতদের জীবিকা বন্ধ, কৃষকদের ফসল নষ্ট ও গোশালাগুলোতে তাদের স্থান সংকুলান না হওয়ার মত ঘটনা অব্যাহত থাকবে। সর্বোপরি , এতে পবিত্র গোমাতারই ক্ষতি হতে থাকবে।



 

Show all comments
  • অমিত কুমার ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ৩:৫২ এএম says : 0
    সরকার গরু জবাই বন্ধ করার আগে তার পরিণতি নিয়ে ভাবা উচিত ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ৭:৫৯ এএম says : 0
    অসভ্যতার ও একটা সীমা থাকা দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ