পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তার সর্বশেষ মন্তব্যও এর ব্যতিক্রম নয়। গত মঙ্গলবার ইটিআই ভবনে এক কর্মশালা শেষ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড় ধরনের পাবলিক নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। তিন সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনেও অনুরূপ অনিয়ম-কারচুপি হবে কিনা। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই মন্তব্য করেন। বস্তুত, জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপি হবে, এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন একটি সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তিনি তার প্রধান। তিনি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনে আরো যে চারজন কমিশনার রয়েছেন, তাদের সবার সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করা। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্যই তারা শপথ নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে তিনি যখন বলেন, জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপি হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয় অর্থাৎ নির্বাচনে অনিয়ম কারচুপির আশংকা তিনি মেনে নিচ্ছেন তখন তার ওই পদে থাকা কিংবা অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের স্বপদে দায়িত্ব পালন করা কতদূর যৌক্তিক ও সমীচীন সে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক।
সিইসি তার ওই মন্তব্য করার সময় উল্লেখ করেন, নির্বাচনে অনিয়ম হলে আমরা যেভাবে করি, সেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করবো। কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত করে বা যেভাবেই হোক সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো। তার এ বক্তব্যের আসলে কোনো অর্থ হয়না। এটা কথার কথা মাত্র। নির্বাচন কমিশনের একটি বড় কাজ বা দায়িত্ব হলো, নির্বাচনে যাতে অনিয়ম না হয়, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে, তা নিশ্চিত করা। অনিয়মের রাস্তা উন্মুক্ত রেখে অনিয়ম ঘটে যাওয়ার পর তদন্ত কিংবা ব্যবস্থা নেয়ার কোনো মানে হয় না। এতে সুফলও মেলেনা। এটা মালামাল চুরি যাওয়ার পর চোরের পেছনে ছোটা কিংবা রোগী মারা যাওয়ার পর ডাক্তার আসার মতোই ব্যাপার।
এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে সব নির্বাচন হয়েছে, ব্যতিক্রমবাদে তার কোনোটাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীণ হতে পারেনি। ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশন ওই সব নির্বাচনকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সন্তোষজনক বলে অভিহিত করেছে। অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগের প্রতি বিন্দুমাত্র কান দেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি। রংপুর ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে। এর প্রশংসাও নির্বাচনে কমিশন পেয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কি হয়েছে? কী হয়নি সেটাই প্রশ্ন। ভোট কেন্দ্র দখল, ভোটারদের ভোট দেয়ার আগেই ভোট দিয়ে দেয়া, ছাপমারা ব্যালট পেপার পাওয়া, ব্যালট বইয়ের মুড়িতে সই না থাকা, অস্বাভাবিক ভোট পড়া, বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটের আগেই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ভয়ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি এমন কোনো অনিয়ম ও দুস্কৃতি নেই, যা ঘটেনি। ক্ষমতাসীন দল, প্রশাসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাচন কমিশন এই অনিয়ম ও দুস্কৃতির দায় এড়িয়ে যেতে পারেনা। কারণ, তাদের যৌথ উদ্যোগ ও প্রক্রিয়াতেই এসব সংঘটিত হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধির বেপরোয়া লংঘন এবং অনিয়ম-দুর্নীতি-দুষ্কৃতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হলেও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপি, জোর-জবরদস্তি ও জাল-জালিয়াতির পরও নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়েছিল, চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানানো হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে সিইসি বলেছিলেন, গাজীপুরে নির্বাচন খুলনার মতো হবে না। এই মন্তব্যের মাধ্যমে কার্যত তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন খুলনার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হয়নি। সকলেই ধারণা করেছিলেন, গাজীপুরে খুলনা মার্কা নির্বাচন হয়তো হবে না। নির্বাচন কমিশন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু বাস্তবে খুলনার চেয়েও এক কাঠি সরেস নির্বাচন হয় গাজীপুরে। অনিয়ম-কারচুপি ও জোর-জবরদস্তির দিক দিয়ে খুলনাকেও ছাড়িয়ে যায় গাজীপুর। সম্ভবত নির্বাচন কাকে বলে তা দেখার আরো কিছু বাকী ছিল দেশের মানুষের। সেটা তারা দেখেছে বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এই তিন সিটি কপোরেশন নির্বাচন খুলনা ও গাজীপুর মার্কাকেও ছাড়িয়ে যায়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, নুব্ধ, কোমরভাঙ্গা, নতজানু ও সরকারের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকেও বলেছে, সন্তোষজনক। স্বয়ং সিইসি বলেছেন, কিছু অনিয়ম হয়েছে, বিশেষ করে বরিশালে। তাছাড়া নির্বাচন সন্তোষজনক হয়েছে। বরিশালে বেশি অনিয়ম হয়েছে বলে বেশি ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। সেই বেশি ব্যবস্থাটা কি? ১০১২ টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা? কে না জানে, বরিশালে ভোটপর্ব সকালেই প্রায় শেষ হয়ে যায়। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকরা অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে দখল করে নিয়ে যথেচ্ছ সিল মারার কাজটি সেরে ফেলে। একাজটি তারা করে বিরোধী প্রার্থীদের এজেন্টেদের সামনে অথবা তাদের বের করে দিয়ে। এমতাবস্থায় দুপুর বারোটার মধ্যেই বিরোধী পাঁচ মেয়রপ্রার্থীর সবাই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। রাজশাহীতেও প্রায় একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। বিএনপির মেয়র প্রার্থী দুপুর নাগাদ হাল ছেড়ে দেন। এমনকি সিলেটেও তেমন ব্যতিক্রম হয়নি। তবে সেখানে যে কোনো কারণেই হোক, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে এটে উঠতে পারেননি।
পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকদের মতে, আগে যাই হোক, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা শূণ্যে নেমে এসেছে। তাদের ধারণা, এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করা সম্ভবপর নয়। এরকম একটি নেতিবাচক ধারণার প্রেক্ষাপটে সিইসির আলোচ্য মন্তব্যটি ওই ধারণাকে আরো স্পষ্ট ও শক্তিশালী করেছে। অনেকে বলেছেন, সিইসির মন্তব্যে প্রকৃত বাস্তবতার স্বীকৃতি আছে, আগামীর সম্ভাব্য বাস্তবতার ইঙ্গিত আছে। আবার একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও সক্ষমতার অভাবের দিকটির এতে ফুটে উঠেছে। জাতীয় নির্বাচন অতি সন্নিকটে। যখন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য নির্বাচন কমিশনের যথাসাধ্য করা উচিৎ তখন অনিয়ম হবেই, একথা বলে সিইসি দেশবাসীকে সম্পূর্ণ হতাশ করেছেন এবং তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয়তাকেও প্রশ্নের সম্মুখীন করেছেন।
কারো কারো মতে, তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে সাংবিধানিক দায়িত্ব অস্বীকার করেছেন। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিরা একমত হতে না পারলেও একটি বিষয় তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্তর্ভূক্ত। বস্তুত, ওই মন্তব্যের মাধ্যমে সিইসি সংবিধানের এই মৌলিক কাঠামোটি রক্ষায় প্রকাশ্য অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এর ফলে তার ওই পদে থাকার যোগ্যতা নৈতিকভাবে তিনি হারিয়েছেন।
স্বভাবতই এটা জানার বিষয়, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার কি সিইসির অভিমত সমর্থন করেন? না করেন না। ইতোমধ্যেই তারা কথা বলেছেন এবং তাদের মতামত পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তারা চারজনই সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘সিইসি একটি স্পর্শকাতর বিষয় উত্থাপন করেছেন। উনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। জানিনা, সিইসি কেন, কোন প্রেক্ষাপটে কথাটি বলেছেন। এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। আমি এ কথার সঙ্গে মোটেই একমত নই। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যারা অনিয়ম করতে চায়, তারা এ ধরনের কথায় উৎসাহিত হতে পারে বলে আমি আশংকা করি।’ রফিকুল ইসলাম বলেছেন, সিইসির এ বক্তব্যের সঙ্গে কমিশনের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন কমিশনার হিসাবে তারা রাগ-অনুরাগ-বিরাগমুক্ত থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার শপথ নিয়েছেন। একটা যথাযথ নির্বাচন করতে তারা সব কিছুই করবেন। কবিতা খানম বলেছেন, কমিশনে এনিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সিইসি কেন এমন মন্তব্য করলেন, তিনি জানেন না। তবে এটি তার নিজস্ব মত। শাহদত হোসেন চৌধুরী বলেছেন, সিইসির এ বক্তব্য কোনো অবস্থাতেই কমিশনের বক্তব্য নয়। কারণ তারা একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন করার শপথ নিয়েছেন।
চার নির্বাচন কমিশনার সিইসির বক্তব্যে শুধু দ্বিমত পোষণই করেননি, তাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সিইসির প্রতি এক ধরনের অনাস্থার ভাবও প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। অতীতে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটতে দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে, হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে অধিকাংশের মতামতই গৃহীত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনারদের সবাই বলেছেন, সিইসির বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের নয়, তার নিজস্ব। আসলেই কি তাই? তিনি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তিনি যখন কথা বলেন, তখন ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই বলেন। এক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই। বিশেষত তিনি তার বক্তব্যটি দিয়েছেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে। প্রশ্নটিও কোনো ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে ছিলনা। ছিল প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে। অবশ্যই চার নির্বাচন কমিশনার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে, জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপি হবে না, এই নিশ্চয়তায় নির্বাচন কমিশন এ পর্যন্ত কি করেছে? পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এত যে কান্ড হয়ে গেল, দেশে-বিদেশে এত সমালোচনা হলো, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের জবাব কি? পাঁচজন সদস্যকে নিয়েই নির্বাচন কমিশন। এর ভালো-মন্দ, সুনাম-দুর্নাম, প্রশংসা-সমালোচনা-সব কিছুরই ভাগিদার এই পাঁচজন। তারা সবাই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব তারা সুচারুরূপে উচ্চ দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে পেরেছেন? যদি না পেরে থাকেন, তাহলে কেন পারেননি সেটা কি তারা কখনো বলেছেন?
পত্রিকান্তরে একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করার উদ্যোগ নেই নির্বাচন কমিশনের।’ প্রতিবেদনটির বিস্তারিত তুলে ধরার সুযোগ এখানে নেই। চুম্বককারে যা বলা হয়েছে তাহলো, ‘সংলাপে পাওয়া কোনো সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সিইসির সাম্প্রতিক বক্তব্যে সংশয় বেড়েছে।’ আমরা নির্বাচন কমিশনকেই প্রশ্ন করতে পারি, সংলাপে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো বই আকারে প্রকাশ করাই কি যথেষ্ট? সেগুলো বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন কি ভাবছে বা কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার কোনো উল্লেখ বইতে নেই। জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার, না ভোটের বিধানসহ কয়েকটি বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অভিমত বা সুপারিশ এসেছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল’ বলে দায় সেরেছে নির্বাচন কমিশন। সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুর্নবহাল, নির্বাচনের সময় কিছু মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাসহ কতিপয় সুপারিশের ক্ষেত্রে তার বক্তব্য, এগুলো ‘সাংবিধানিক বিষয়’।এভাবেই দায় এড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনী বিধি সংস্কার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করাসহ যে ৩৪টি সুপারিশকে নির্বাচন কমিশন তার এখতিয়ার বলে উল্লেখ করেছে, সে সব সুপারিশ বাস্তবায়নেও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব যেহেতু নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত, সুতরাং তাকেই ভাবতে হবে কোথায় কোথায় কি ধরনের অন্তরায় আছে। অন্তরায়গুলো লিপিবদ্ধ করে সরকারকে জানানো দরকার ছিল। নির্বাচন কমিশন কি সে কাজটি করেছে? ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল’ কিংবা ‘সাংবিধানিক বিষয়’-এর উল্লেখ করে অবাধ-সুষ্ঠু, নির্বাচন পরিচালনা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিছু কিছু বিষয় না হয় তার ভাষায়, তার এখতিয়ারভুক্ত নয়, কিন্তু নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত বিষয়েও নির্বাচন কমিশনের এই গা ছাড়া ভাব কেন?
বলে রাখা দরকার, সিইসি কিন্তু তার বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত বক্তব্য’ বলে বর্ণনা করেননি। এর অর্থ দাঁড়ায়, তার বক্তব্য নির্বাচন কমিশনেরই বক্তব্য, যদিও চার নির্বাচন কমিশনার স্পষ্ট দ্বিমত পোষণ করেছেন। তার বক্তব্য নিয়ে যখন বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, তখনও তিনি তার বক্তব্য থেকে সরে আসেননি। ক্ষমতাসীন দল তার বক্তব্যে কিছুটা বিব্রত বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের দেশের বাস্তবতায় সিইসি হয়তো মনে করেছেন, এটাই সত্য। কিন্তু তার বক্তব্যে আরো সংযত হওয়া দরকার। একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে মূল দায়িত্বে আছেন তিনি। বিএনপির মহা সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সিইসি প্রকৃত অবস্থাটা বলে দিয়েছেন। অত:পর সিইসি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে বিডিনিউজকে বলেছেন, ‘আমি তো বাস্তব কথাটা বলেছি। সত্য কথা বলেছি। যদি কোথাও অনিয়ম হবে না বলি, মিথ্যা বলা হবে। আমি মিথ্যা কথা বলিনা। এখন এ নিয়ে কেউ কিছু বললে বলতে পারে।’
তার এই অনড় অবস্থানের মধ্যে তার অসাহায়ত্ব ও অপারগতা অস্পষ্ট থাকেনি। এমত ক্ষেত্রে সিইসির স্বপদে থাকা, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের পদ অখড়ে রাখা যখন তাদের ও সিইসির মতামতে পার্থক্য তৈরি হয়েছে। কতটা সঙ্গত ও উচিৎ সেটা গভীরভাবে বিবেচনার বিষয়। এ প্রসঙ্গে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজুদ্দিন খানের বক্তব্যটি স্মরণ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে গা ছাড়া ভাব দেখা গেছে। সিইসি যদি মনে করেন, নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এ নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না তাহলে নৈতিকভাবে তার পদে থাকা উচিৎ নয়।’ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার কি বলেন? তারাই বা কি করবেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।