Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রী ও আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৮, ১:০৫ এএম

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের ফুটপাথে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও অন্তত ১২জন গুরুতর আহত হওয়ার পর ক্ষোভে-প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এসেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পর সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রী শাহজাহান খানের তাচ্ছিল্যপূর্ণ কথাবার্তা ও নির্লজ্জ হাসির দৃশ্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে। শাহজাহান খানের কাছে মন্ত্রীত্ব নাকি পরিবহন শ্রমিকদের নেতৃত্ব কোনটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সংশয়ে পড়তে হয়। মানুষ যখনই নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাস্তায় নেমে এসেছে এবং সরকার যখন জনগণের এই গুরুত্বপূর্ণ দাবি পুরণে প্রতিশ্রুতিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, তখনই শাজাহান খানকে প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা গেছে। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমন একটি স্পর্শকাতর ঘটনার পরও সরকারের এই মন্ত্রীকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে দেখা যাচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন রাজধানীর গন্ডী থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের এই দাবীর প্রতি সহানুভ‚তি প্রদর্শন করে ঢাকা শহরে অপ্রাপ্ত বয়স্ক গাড়ী চালকদের ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়কপথের নিরাপত্তাহীনতার পেছনে লাইসেন্সবিহিন, অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক গাড়িচালকরা অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করা হলেও এগুলোই মূল কারণ নয়। এর সাথে আরো বহুবিধ ফ্যাক্টর রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সন্দেহ সংশয় রয়েই যায়। কারণ অতীতেও সড়ক পরিবহন সেক্টরের বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে সরকার এ ধরনের নানা নির্দেশনা ও উদ্যোগ নিলেও বাস্তবায়িত না হওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। যানজট নিরসন, সড়ক ও ফুটপাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমনকি আদালতের নির্দেশনাও বাস্তবায়িত হয়নি। সড়ক নিরাপত্তার দাবীতে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এবারো হাইকোর্ট থেকে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সারাদেশে ফিট ও আনফিট গাড়ীর সংখ্যা কত তার সঠিক হিসেব খুঁজে বের করতে একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করে আগামী ৩ মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অযোগ্য. লাইসেন্সবিহিন অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের কারনে যেমন রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে, সেই সাথে ফিটনেসবিহীন, রুট পারমিটবিহীন, বহু আগে মেয়াদোত্তীর্ণ, লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়ীর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রচলিত আইন ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে ফিটনেসবিহীন গাড়ীর রাস্তায় চলাচলের কোন সুযোগ না থাকলেও এরকম লাখ লাখ গাড়ী রাজধানীসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে সদর্পে চলাচল করছে। মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন শ্রমিক ফেডারেশন এবং গণপরিবহন মালিক সমিতির প্রভাবের কাছে সরকারী সিদ্ধান্ত, আদালতের নির্দেশনা ও ট্রাফিক আইনসহ সবকিছু যেন ব্যর্থ। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বছরে ২১ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এ হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ৫৭ জনের বেশী মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যায়। আহতের সংখ্যা এর কয়েকগুন বেশী। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশী বলে মনে করা। নিরাপদ সড়কের দাবীতে নাগরিক সমাজের আন্দোলন এবং সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা এভাবে বাড়া দুর্ভাগ্যজনক।
রাস্তায় যানজট, গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও নিরাপত্তাহীনতা আমাদের নাগরিক জীবনের অন্যতম সংকট হিসেবে বিবেচিত। বছরের পর বছর ধরে এই সংকটের মধ্য দিয়ে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও কিছুতেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছেনা। মাত্র কয়েক মাস আগে রাজধানীতে দুই বাসের প্রতিযোগিতার শিকার হয়ে তিতুমির কলেজের এক শিক্ষার্থীর দেহ থেকে হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া ও মৃত্যুর হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। সে ঘটনার পরও দেশের নাগরিক সমাজের মধ্যে তোলপাড় প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। সে সময়ও যথারীতি সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তায় কিছু নির্দেশনা ও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা ও উদ্যোগের ঘাটতি না থাকলেও রাস্তা ও গণপরিবহণে তার বাস্তবায়ন না ঘটার জন্য শ্রমিক সংগঠন ও মালিকদের বেপরোয়া মনোভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সড়ক পরিবহণে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথমেই এসব তথাকথিত শ্রমিক নেতা ও মালিক-শ্রমিকদের আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। সব রুটে গণপরিবহনে চাঁদাবাজি কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। দুই বাসের রেষারেষি ও প্রতিযোগিতার শিকার হয়ে সাধারণ যাত্রী ও পথচারিদের প্রাণ গেলেও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে সময়োপযোগি করতে হবে। স্কুল-কলেজসহ জনবহুল স্থানে গণপরিবহনের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, বিআরটিএ, মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন ও সমিতিগুলোর কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণকেও সচেতন হতে ও আইন মানতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গোটা পরিবহন খাতকে একটি প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে, সেখানে অন্যান্য দিকের মত নাগরিকদের সচেতনা বৃদ্ধির সুনিদিষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষেত্রেও শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন