এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রাণ বাঁচাতে দুপাশে লাফিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পাঁচজন আহত হন। এ সময় এক শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে গেলে তার ওপর দিয়েই পিকআপ চালিয়ে দেয়া হয়।
ওই শিক্ষার্থীর নাম ফয়সাল। তিনি দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
হামলাকালে আবদুল্লাহ আল রাকিব নামে সিটি কলেজের এক ছাত্রের মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় শনিরআখড়ার দেশবাংলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এসব ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে জড়ো হয়ে মিছিল করার পাশাপাশি গাড়ি থামিয়ে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখছিলেন।
একপর্যায়ে এক পিকআপ চালকের লাইসেন্স দেখতে চাইলে তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেন। এ সময় শিক্ষার্থী ফয়সাল ছিটকে গাড়ির নিচে পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ইয়াসিনসহ পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থী এবং নিরাপদ সড়ক চাই কমিটির দনিয়া কলেজ শাখার নেতা আকাশ ও আবির ফুয়াদ যুগান্তরকে বলেন, বাসের চাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টেনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে আমরা সকাল ৯টা থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। আমরা গাড়ির চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করার সময় পিকআপচালক আমাদের সহপাঠী ফয়সালের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ফয়সালকে পিষে পালিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা দৌড়ে গিয়ে চালকসহ পিকআপটি আটক করেন। পরে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের কাছে চালক ও পিকআপটি সোপর্দ করা হয়।
এদিকে গাড়ি উঠিয়ে দেয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ২০-২৫টি যানবাহন ভাঙচুর করেন। এ সময় বাসযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
পরে ডিএমপি ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে পুলিশ।
দুপুর ১২টার দিকে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে ৩০ মিনিট যেতে না যেতেই শিক্ষার্থীরা আবারও সড়ক অবরোধ করেন।
এদিকে শুরুতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ন্যায্য বলে আখ্যা দেন স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
এর মধ্যে দনিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিফাত রহমান মিথিল ও যুগ্ম
সাধারণ সম্পাদক মো. আকছির, কদমতলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম রাজু, যাত্রাবাড়ী থানা যুবলীগ নেতা আক্তার হোসেন ও কদমতলী থানা যুবলীগ নেতা উজ্জ্বল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তবে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে একযোগে হামলা চালান ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে আবদুল্লাহ আল রাকিবের মাথা ফেটে যায়।
উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মীম নিহত হন। বাসচাপায় আহত হন আরও ১৩ জন।
এ ঘটনা কেন্দ্র করে চার দিন ধরে রাজধানীজুড়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িত পরিবহনকর্মীদের বিচার ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি জানান।