পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খোদ রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক শাহবাগের রাস্তায় দাঁড়িয়ে তিনি যখন স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখনই মেসকাত পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস তাকে চাপা দেয়। বাসের ধাক্কায় ওমর ফারুক পড়ে গেলে মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে বাসের চাকা। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় এ নির্মম ঘটনা ঘটে শত শত লোকের সামনে। রাজধানীসহ সারাদেশেই চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনের জন্যই অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রতিরোধ বা প্রতিকারের কোন উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে সারাদেশে সড়ক দুঘর্টনায় তিন হাজার ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আট হাজার ৫২০ জন। এ ছয় মাসে দুই হাজার ৮৬০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আহতদের অনেকেরই অঙ্গহানি হয়েছে। এসব দুর্ঘট্নার অনেকটিরই ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে। তবে সবই হয়েছে দুর্ঘটনাজনিত মামলা। তবে নিহতদের পরিবারের অনেকেই দাবি করেছেন, এগুলো হত্যাকান্ড। এসব ঘটনায় দায়ের মামলাগুলো হয়েছে দন্ডবিধির ২৭৯, ৩০৪ (ক), ৩০৪ (খ) এবং ৩৩৭, ৩৩৮ ও ৩৩৮ (ক) ধারায়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনার পর দায়ী চালকদের বড় অংশই পার পেয়ে যায় পুলিশ ও যানবাহন মালিকদের গোপন সমঝোতায়। উপযোগি আইন করে সঠিকভাবে তার বাস্তবায়ন হলে চালকদের বেপরোয়াভাব কমবে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে- গাড়ির অতি গতি, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স না থাকা, চালকের দক্ষতার অভাব, নেশাগ্রস্থ চালক, সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থা, গাড়ির ফিটনেস না থাকা ইত্যাদি। এসব কারণেই সড়কে প্রতিনিয়ত ঝরছে প্রাণ। আর দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ নিয়ন্ত্রণহীন গতি।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। দেশে প্রশিক্ষিত চালকের সংখ্য খুবই কম। প্রশিক্ষিত চালকের পাশাপাশি চালকদের সচেতন হতে হবে। একই সাথে পরিবহনের মালিককেও সচেতন হতে হবে। কেয়াল রাখতে হবে যে কার হাতে তিনি তার মুল্যবান গাড়িটি তুলে দিলেন। চালক যদি প্রশিক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে সচেতন না হয় তা হলে জীবনহানী যেমন হয়, তেমনি অনেক দামি গাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চালক ও মালিকের পাশাপাশি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সর্তক হতে হবে। চালকের সঠিক লাইসেন্স রয়েছে কিনা, গাড়ির সব ধরনের কাগজ আছে কিনা এ বিষয়ে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এক কথায় যানবাহনের মালিক, চালক ও পুলিশকে সচেতন এবং দায়িত্বশীল হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দীন খান বলেন, প্রতি নিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার পরও চালকরা সুবিধা পাচ্ছে। চালকদের প্রশিক্ষিত হতে হবে। বিআরটিএ চালকদের লাইসেন্স দেয়ার আগে পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন যাকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে তিনি লাইসেন্স পাওয়ার উপযুক্ত কিনা। চালকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এতে করে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, সড়কে চালকের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে। এজন্য ট্টাফিক পুলিশকে বিষয়টি মনিটরিং করে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলে অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দীন খান উল্লেখ করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চালক বাসটি থামানোর চেষ্টা করলে শাহবাগে আহত হলেও বেচে যেতেন ওমর ফারুক। বাসের ধাক্কায় পড়ে যাওয়ার পরেও বাস চালক তার মাথার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। তিনি ওমর ফারুক বারডেমের চক্ষু বিভাগের এক চিকিৎসকের গাড়িচালক। শাহবাগ এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো.সারওয়ার সাংবাদিকদের জানান, ওমর ফারুক সড়কে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় মেসকাত পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস তাকে চাপা দেয়। বাসটির চাকা ওমর ফারুকের মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনার পর ওয়্যারলেসে খবর দেয়া হয়। পরে সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে বাসটিকে থামিয়ে চালক আমিরুল ইসলামকে আটক করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। বাসটিও জব্দ করা হয়। পরে চালক ও বাসটিকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। মেসকাত পরিবহনের বাস মোহাম্মদপুর থেকে যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড রুটে চলাচল করে।
নিহতের বোন স্বপ্না ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, তার বোন চোখের ডাক্তার দেখাতে শনিরআখড়া থেকে শাহবাগ যাচ্ছিলো একটি বাসে। আর বোন জামাই ওমর ফারুক স্ত্রীর জন্যই শাহবাগে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু চালকের নিষ্ঠুরতার জন্য শুধু একজন মানুষের মৃত্যু হয়নি একটি পরিবারের স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে চলন্ত বাস থেকে নামতে গিয়ে নিহত হন আব্দুল মতিন নামে একজন বয়স্ক পথচারী। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় দুর্ঘটনাজনিত মামলা হয়েছে। সেখানেও এই ৩০৪ (খ) ও ২৭৯ ধারা দুটি রয়েছে।
শাহবাগ থানার এসআই আকরাম হোসেন জানান, দন্ডবিধির ২৭৯ ও ৩০৪ (খ) ধারায় নিহত আব্দুল মতিনের ছেলে ফয়সাল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ধারায় মামলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা এ ধারায় হয়। অথচ নিহতের ছেলে ফয়সাল এটিকে হত্যাকান্ড বলে অভিযোগ করেছেন। তবে মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।