পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জুলাই মাসে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের শুরু থেকেই জাতীয় অর্থনীতিকে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিগত অর্থবছরের সামগ্রিক মূল্যায়ণে অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাতেই আগের অর্থবছরের তুলনায় নেতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অব্যাহত গতিতে আমদানী বেড়ে যাওয়া ও রফতানী কমে যাওয়ার বাস্তবতায় বাণিজ্যঘাটতি ক্রমশ: নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। গত অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে অর্থনৈতিক মূল্যায়ণ ও পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাণিজ্য ঘাটতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, যেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার, সেখানে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল ১ হাজার ৭২২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুসারে টাকার অঙ্কে যা দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশের সামগ্রিক রফতানী খাতে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩২৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বিপরীতে আমদানী বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৫২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থবছরের শেষ সময় পর্যন্ত আমদানী-রফতানী খাতে বৈষম্যের এই ধারা ক্রমবর্ধমান হারে অব্যাহত ছিল। বিদ্যমান বাস্তবতায় নতুন অর্থবছরের শুরুতে এবং সামনের মাসগুলোতে কোন ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা বা কর্মসূচি না থাকায় এ বিষয়ে আশাবাদি হতে পারছেননা অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আলোচিত সময়ে আমদানী বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশী, বিপরীতে রফতানী বেড়েছে ৮ শতাংশের কম। অন্যদিকে আমাদের বৈদেশিক মূদ্রার অন্যতম প্রধান খাত বৈদেশিক কর্মসংস্থানে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। আমদানী-রফতানীর ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের উপর যে কোন উন্নয়নশীল অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে চলে। শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি, পদ্মাসেতুসহ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আমদানীকৃত যন্ত্রপাতি ও মালামালের ব্যয় বহনের কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে বলে যুক্তি দেখানো হলেও পাশাপাশি রফতানী প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানে প্রাপ্ত রেমিটেন্স কোনভাবেই আমদানী ব্যয়ের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারছেনা। ফলে আমদানী ব্যয় মিটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রির্জাভে টান পড়ছে। বৈদেশিক মূদ্রার রির্জাভ কমতে শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতিতে এ ধরণের বাস্তবতা হঠাৎ করেই দেখা দেয়নি। আমদানী ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া, বাণিজ্য ঘাটতি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রবণতার পেছনের কারণগুলোও আলোচনায় এসেছে। দেশে বিনিয়োগের জন্য সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক উদ্যোগের কথাও এসেছে। তবে কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। চলতি বছরের শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনো একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ ও রোডম্যাপ অনুপস্থিত। এহেন বাস্তবতায় বর্তমান সরকার আবারো একটি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চাইলে আগের মত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারো সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠলে সবে য়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে দেশের অর্থনীতি।
মূলত রফতানী বাণিজ্য ও বৈদেশিক রেমিটেন্সের উপর আমাদের অর্থনৈতিক সূচকের প্রবৃদ্ধি নির্ধারিত হলেও পাশাপাশি এফডিআই বা সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ, আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক ঋণের উপর দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি আঁচ করা যায়। দেশের পুঁজিবাজার, ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা ক্রমাগত নাজুক হয়ে পড়ছে। সরকারের কর্মকান্ড ক্রমবর্ধমান হারে বৈদেশিক ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বৈদেশিক ঋণের পরিমান ৩৪৮ কোটি ডলার, যা পূর্ববর্তি অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৮দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশী। বৈদেশিক ঋণ বাড়লেও এ সময়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও এফডিআই কমেছে যথাক্রমে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে দেশের অর্থনীতি ঋণাত্মক ধারায় পতিত হয়, যার অঙ্ক গত অর্থবছরের মে মাস নাগাদ ৯৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। মুক্ত বাজারে জাতীয় অর্থনীতিতে নানা মাত্রিক চ্যালেঞ্জ ও উত্থান পতন অস্বাভাবিক নয়। তবে আমাদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সংকটের পেছনে কাজ করছে অপরিনামদর্শি রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা। বাণিজ্য ঘাটতি বা আমদানী বেড়ে যাওয়ার পেছনে জাল জালিয়াতি ও মিথ্যা ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের ঘটনা অন্যতম ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত একযুগের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, জাতীয় নির্বাচনের বছরে টাকা পাচারের পরিমান দ্বিগুণের বেশী বেড়ে যায়। অন্যদিকে ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্নীতি,অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের বিরুদ্ধে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঙ্খিত তৎপরতা ও নজরদারি দেখা যাচ্ছেনা। এভাবে চলতে থাকলে চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। এহেন বাস্তবতায় দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ এবং রফতানি বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানির উপর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি বাড়াতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের নিরাপত্তা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতা এবং সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।