মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কল্পনা করুন তো আপনি ইউরোপের কিম্বা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যস্ত বিমান বন্দরে অবতরণ করেছেন। সেখানে আপনার স্ত্রী আপনাকে নিতে এসেছেন। তিনি আপনাকে তাকে ঠিকই দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু আপনি তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তখন তিনি কীভাবে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন? আপনার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকলে হয়তো সমস্যার সমাধান। কিন্তু তিনি যদি আপনার নাম ধরে ডাকেন তখন আশেপাশের লোকজনেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারেন। নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা আপনাকে ঘিরে ধরতে পারেন। তারপর আপনাদের দু’জনকে হয়তো জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আলাদা কোন একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
কেন? সমস্যাটা কোথায়?
আপনারা দু’জনেই মুসলিম এবং আপনার নাম জিহাদ। বিবিসি এই জিহাদ নামের তিনজন পুরুষের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চেয়েছে। একজন শিকাগোর চিকিৎসক, একজন সিরিয়ার বিখ্যাত অভিনেতা, আরেকজন ফিলিস্তিনের প্রকৌশলী, যিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। আরবীতে জিহাদ শব্দটির অর্থ: ‘কোন একটি আদর্শের জন্যে যুদ্ধ করা’। যুক্তরাষ্ট্রের উপর ৯/১১ হামলার আগে এটি ছিলো আরো আট দশটা সাধারণ নামের মতোই। সিরিয়াতে অত্যন্ত সুপরিচিত একজন অভিনেতা জিহাদ আবদোকে তার লাখ লাখ ভক্ত জিহাদ নামেই চেনে। তাকে বলা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট আসাদকে সমর্থন জানিয়ে টেলিভিশনে একটি
সাক্ষাৎকার দিতে। তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বর্তমানে তার আশ্রয় যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু সেখানে তার জিহাদ নামটি যেন একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘আমেরিকাতে পালিয়ে আসি ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে। তারপর লোকজনের কাছে যখন আমি নিজেকে জিহাদ নামে পরিচয় দিতে থাকি তখন থেকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া পেতে শুরু করি,’ বলেন তিনি।
‘যখনই তারা আমার নাম শোনে প্রথমেই তাদের মাথায় যে দৃশ্যটা ভেসে ওঠে তা হলো- একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী, অথবা কোন জিহাদি যে কিনা আফগানিস্তান কিম্বা ইরাকে সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছে’।
সিরিয়াতে আবদোর সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি শো’র দর্শক সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর তিনি সেখানে বহু অডিশন দিয়েও পাশ করতে পারেননি। তিনি তখন বুঝতে পারলেন যে তার অভিনয়কে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই তার নাম বদলাতে হবে।
‘চারশো বছর আগে শেক্সপিয়ার যেমনটা বলে গেছেন, ‘নামে কী যায় আসে?’ আমি বললাম- বদলে দাও। আমি আমার নামকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি তো বেঁচে থাকতে চাই’। ‘আমি নিজেকে একজন খোলা মনের মানুষ বলে মনে করি। আমার স্ত্রীও তাই। আমরা দু’জনের কেউই নাম নিয়ে কিছু ভাবি না যে, এই নাম হতে হবে বা ওই নাম হতে হবে। কিন্তু আমরা আমাদের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভাবি। আমাদের আদর্শ এবং আমাদের অর্জন নিয়ে চিন্তা করি,’ বলেন তিনি।
প্রথমে তিনি তার নাম নিয়েছিলেন জুড। কিন্তু পরে জে নামটি রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তারপরই সবকিছু রাতারাতি বদলে গেল। ‘কারণ জে তাদের কাছে দারুণ একজন মানুষ। এই নামটির সাথে তারা পরিচিত। এই নামের সাথে স্পর্শকাতর কোন বিষয় জড়িত নেই,’ বলেন জিহাদ আবদো। কিন্তু তার পরিবার মনে করে এই নামটি হাস্যকর। ‘কিন্তু তারা বুঝতে পারলো কেন আমি নাম বদলে দিলাম। কয়েক বছর আগে এরকম সমস্যা হয়েছিল ওসামা নাম নিয়েও। স্টালিনের মৃত্যুর পর রাশিয়াতেও কোবা নামটি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। একই ঘটনা ঘটেছিল জার্মানিতে আডলফ হিটলারের নাম নিয়েও’। তিনি বলেন, ‘নামের কারণে আমার সমস্যা হোক এটা আমি চাই না। আমার মন ও হৃদয় একেবারেই ভিন্ন রকমের। তবে আবদো সিরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে তার আগের আসল নামটিই ব্যবহার করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রেও তার কিছু বন্ধু পুরনো নাম ধরেই তাকে ডাকেন।
‘শিশুরাও যখন বুঝতে পারে...’
জিহাদ সোশারা, বয়স ৪৯, তার জীবনের পুরোটা সময় কাটিয়েছেন শিকাগোতে। শিশুদের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন তিনি। তার মা একজন মেক্সিকান-আমেরিকান। আর পিতা দামেস্কের। তার ‘অদ্ভূত’ নামের জন্যে শৈশব থেকেই তাকে নানা কথা শুনতে হয়েছে। ‘সিরিয়া ও লেবাননে এই নামটি খুব একটা শোনা যায় না। কিন্তু এটি যে খুব আনকমন একটি নাম তাও নয়। তাছাড়াও ছেলে মেয়ে সবারই এই নাম হতে পারে। জিহাদ নামের নারীদের সাথেও আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। এই নামটি যে শুধু ইসলামিক তা নয়, খ্রিস্টানদের মধ্যেও এই নামটি আছে’।
কিন্তু তার ১২ কিম্বা ১৩ বছর বয়সে তিনি তার নামটি বদলে ফেলেছেন। তিনি বলেন, ‘স্কুল, হাইস্কুল এবং কলেজেও আমাকে সবাই ডাকতো জে। আমি আমার আসল নামটি গোপন করে রাখিনি। কিন্তু জে নাম নেওয়ায় আমাকে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি’।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হওয়ার পর তিনি যখন কাজ করতে শুরু করেন তখন নিজেকে তিনি জিহাদ নামে পরিচয় দিতে শুরু করেন।
‘শিশুদেরকে আমি যখন বলি যে আমার নাম জিহাদ, কিন্তু তোমরা আমাকে জে নামেও ডাকতে পারো- দ্বিতীয় বাক্যটি বলার আগেই তারা বলে ‘ওহ জিহাদ, খুব সুন্দর নাম। তখন আমার মনে হলো আট বছর বয়সী একটি শিশু যদি আমার নাম ঠিকমতো বলতে পারে তাহলে আমার অসুবিধা কী’। কিন্তু অভিনেতা জিহাদ এবং চিকিৎসক জিহাদ তারা দু’জনেই একমত হয়েছেন তাদের সন্তানের নাম কখনো তারা জিহাদ রাখবেন না।
‘এটা মুসলিম দাড়ি না’
এই তিনজন জিহাদের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ জিহাদ ফেদ্দা। তার বয়স ৩২। তিনি মনে করেন, তার নামের কারণে তার জীবনটা অনেকটা জটিল হয়ে পড়েছে। কারণ এই নাম সম্পর্কে লোকজনের ধারণা খুব খারাপ। তিনি বলেন, ‘আমি খুব একটা ধার্মিক নই। কিন্তু আমাকে নানা ধরনের প্রশ্ন শুনতে হয়। তারা বলে, ও তুমি তো মুসলমান, তুমি ড্রিঙ্ক করো না। কিন্তু ড্রিঙ্ক না করার জন্যে তো আরো অনেক কারণও থাকতে পারে’।
পশ্চিম তীরের নাবলুস থেকে জিহাদ সাত বছর আগে ব্রিটেনে চলে এসেছেন উচ্চতর পড়াশোনা করতে। নিউক্যাসেলে টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে এসেছেন তিনি। তার দাদার নামও ছিল জিহাদ। নিজের এই নাম নিয়েও তার অনেক গর্ব। কিন্তু নানা অভিজ্ঞতার পর তার নাম শেষ পর্যন্ত ‘জিহাদ হবে নাকি হবে না’ এই প্রশ্নটি যখন মাথায় এলো তখন তিনি তার আসল নামেই অটল রইলেন। জিহাদ ফেদ্দার দাড়ি আছে এবং এই দাড়ি নিয়েও তাকে শুনতে হয় অনেক কথা।
‘আপনি যদি মুসলমান হন এবং আমার দাড়ির দিকে তাকান তাহলে বুঝতে পারবেন যে, এই দাড়ি ঠিক মুসলিম দাড়ি না। কারণ মুসলিম দাড়ির সাথে গোফ থাকে না’।
তিনি বলেন, জিহাদ নাম হওয়ার কারণে বিমান বন্দরে এখন পর্যন্ত তার খারাপ কোন অভিজ্ঞতা হয়নি। সেজন্যে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মনে করেন। তবে তিনি বলেছেন, এয়ারপোর্টে তিনি আরবি বলেন না। তিনি মনে করেন, তার স্ত্রী যেহেতু হিজাব পরেন না সেকারণে তাদের জীবনটাও অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু জিহাদ নামটি নিয়ে কি আপনার কোন দ্বিধা আছে?
‘ধরুন কোথাও যদি আমার স্ত্রী আমাকে হারিয়ে ফেলে তাহলে সে কখনো আমার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকবে না,’ হাসতে হাসতে বললেন তিনি। কিন্তু জনগণের ভিড়ে তার স্ত্রীকে যদি স্বামীর নাম ধরে ডাকতেই হয় তখন তিনি কী করবেন? ‘সে তখন আমার ডাক নাম ধরে ডাকে’। সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।