Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আর কতদিন দমিত-শোষিত হতে থাকবে?

ড. মো. কামরুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশাল সৌরজগতের ক্ষুদ্র একটি জায়গার নাম পৃথিবী। এখন পর্যন্ত পৃথিবীই মানুষের বসবাসের একমাত্র উপযোগী স্থান হিসেবে বিবেচিত। বিশাল সৌরজগতের তুলনায় পৃথিবী ক্ষুদ্র হলেও এটি মানুষের কাছে এক মহাবিস্ময়। এর একদিকে রয়েছে সমভূমি, অন্যদিকে বনভূমি। একইভাবে এর এক পাশে রয়েছে মরুভূমি অন্য পাশে বিপুল পানিরাশি। একদিকে পাহাড়ে বেষ্টিত, অন্যদিকে বরফে আচ্ছাদিত। সমভূমিতে মানুষ বসবাস করে আসছে সেই আদিকাল থেকে। বনভূমিতে বসবাস করে আসছে বিভিন্ন প্রাণী। পাহাড় আর জঙ্গলে বসবাস করছে পাহাড়ী বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। বরফে আচ্ছাদিত এলাকায় বসবাস করছে পেঙ্গুইনসহ বিভিন্ন প্রাণী। জলরাশিতে বসবাস করে আসছে নানারকম জলজ প্রাণী। সব মিলিয়ে পৃথিবীটা বৈচিত্র্যময়। আল্লাহর সৃষ্টির এক অপূর্ব সৌন্দর্য হলো পৃথিবী। সৃষ্টিকূলের মধ্যে মানুষই হলো একমাত্র সৃষ্টি, যার কাছে অন্য সব সৃষ্টি বশীভূত হয়েছে। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি আছে। মানুষের এ বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির কাছে পৃথিবীর অন্যান্য সকল সৃষ্টি বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।

সৃষ্টির ঊষালগ্নে মানুষের কাছে আজকের মতো কোনো আধুনিক অস্ত্র ছিল না। ছিল না তেমন কোনো ধারালো হাতিয়ার। তারপরেও শুধুমাত্র বুদ্ধির জোরে মানুষ হিংস্র প্রাণীকে পরাভূত করেছে। সময়ের ব্যবধানে মানুষ বনভূমি উজাড় ও ধ্বংস করেছে। পাহাড় ও জঙ্গল কেটে সেখানে বসতি নির্মাণ করেছে। মরুভূমিকে আবাসময় করে সেখানে অট্টালিকা নির্মাণ করেছে। এমনকি বিশাল জলরাশির মধ্যে নান্দনিক হোটেল ও টাওয়ার নির্মাণ করেছে। মানুষ তার বুদ্ধির জোরে গোটা ভূপৃষ্ঠ জয় করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, ভূপৃষ্ঠের গন্ডি পেরিয়ে মানুষ মহাশূন্যকেও জয় করতে তৎপর। মঙ্গলগ্রহ জয় করে সেখানে তারা বসবাসের চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। মহাশূন্যে তারা স্টেশন নির্মাণ করেছে। এক কথায় বলতে গেলে, তারা পৃথিবীতে একচ্ছত্র আধিপাত্য কায়েম করেছে। মানুষের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকার মতো কোনো প্রাণী বর্তমানে পৃথিবীতে আর নেই। তারপরেও মানুষের মাঝে সব সময়ই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব পরিলক্ষিত হয়। তারা তাদের শক্তি ও সৌর্যবীর্যের মহড়া চলমান রেখেছে। নিজেরাই নিজেদের মধ্যে শক্তির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ সৃষ্টির সেরা, তথাপিও তার সহজাত প্রবৃত্তি হলো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া। আর এ প্রতিযোগিতা মানুষকে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী বানিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়াটা মানুষের একবারেই সহজাত স্বভাবে পরিণত হয়েছে। বুদ্ধিমান ও সৃষ্টির সেরা মানুষ বর্তমানে অশান্ত এক ভয়াল প্রজাতিতে পরিণত হয়ে গেছে। তাদের অস্থি-মজ্জা থেকে মনুষত্ববোধ হারিয়ে গিয়েছে। ফলে পৃথিবীর দিকে দিকে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ¦লে উঠেছে। উন্নয়ন আর প্রগতির যুগে বিশ্ববাসী দুটো বিশ্বযুদ্ধ অবলোকন করেছে। শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববাসী ভয়াল বিনাশ ও হত্যালীলা প্রত্যক্ষ করেছে। তারা দেখেছে, সৃষ্টির সেরা প্রাণী কতোটা নিষ্ঠুর, হিংস্র আর অমানুষ হতে পারে! একটি হিংস্র প্রাণী হিংস্রতা ঘটিয়ে কিছুটা সময় বিরতি দিয়ে থাকে। প্রাণীটি একটু দম নেয়, হয় ক্ষান্ত। কিন্তু মনুষ্যরক্তে যেন তার ছিঁটে ফোটাও নেই! প্রথম বিশ্ব যুদ্ধটি সংঘটিত হয় ১৯১৪ সালে, শেষ হয় ১৯১৮ সালে। ৪ বছরের এ যুদ্ধে নিহত হয় মোট ৪০ মিলিয়ন মানুষ। এ যুদ্ধে ৬০ লাখ মানুষ গৃহবন্দী হয়েছিল! ১ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়েছিল! ৩০ লাখ নারী বিধবা হয়েছিল! যুদ্ধের ভয়াবহতার রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দামামা বেজে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বরে জার্মান কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এ বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চলে এ যুদ্ধ। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চলা যুদ্ধে নিহত হয় ৭ কোটি মানুষ! এরপরও বুদ্ধি-বিবেচনায় বোদ্ধা মানুষগুলের মাঝে সন্বিত ফিরে আসেনি। ইতিহাসের চরমতম এ নিষ্ঠুরতার পরেও তারা শান্ত থাকেনি। বরং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধত্তোর পৃথিবীতে শুরু হয় আরেক মহাবিনাশী দীর্ঘমেয়াদী স্নায়ুযুদ্ধ। এ যুদ্ধের পর গোটা বিশ্বে শুরু হয় মেরুকরণ প্রক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজ বলয়ে প্রভাব সৃষ্টি করে যেতে থাকে। এ দুটি রাষ্ট্রই পারমাণবিক শক্তিধর। ফলে বিশ্ববাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ইতিহাসে যা স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৪৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এ স্নায়ুযুদ্ধ গড়ায় বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক পর্যন্ত। দীর্ঘ দেড় শতাব্দী ধরে চলা এ স্নায়ুযুদ্ধে রসদ আর ফুয়েলের যোগান দিতে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দাতাসংস্থা। এ সংস্থাগুলোর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পৃথিবীর নানা অঞ্চলে গড়ে ওঠে শক্তিশালী রাষ্ট্রব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় স্থান পায় ধর্মবিবর্জিত জীবনাচার আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন। দর্শনগতভাবে যা পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র নাম ধারণ করে। সমাজতন্ত্র আর পুঁজিবাদ পৃথিবীকে নানা দেশ ও জাতিতে বিভক্ত করে ফেলে। পৃথিবীতে এ বিভক্তি মানবজাতিকে আবারো ভয়াবহ এক মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে ধাবিত করে। নতুন এ যুদ্ধ মানেই হলো নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। নিজেদেরে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক শক্তির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ মানেই হলো অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিকভাবে অন্য জাতি ও দেশকে গোলাম বানানো। আর সামরিক শক্তির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ মানেই হলো অন্যকে ভয় দেখিয়ে সেবা দাসে পরিণত করা। পৃথিবীজুড়ে শুরু হয় এসব শক্তির অসম প্রতিযোগিতা। উল্লেখিত শক্তির সাথে নতুনভাবে সংযোজন লাভ করে আধুনিক প্রযুক্তির। দাতা সংস্থাগুলোর কাছে এসবই উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত। অথচ, উল্লেখিত সবগুলোই এক ধরনের যুদ্ধ। তবে সরাসরি যুদ্ধ না হলেও এটি এক জাতির উপর অন্য জাতির ভয়াবহ আগ্রাসন। উন্নয়নের নামে এ আগ্রাসনে যে যত বেশি এগিয়ে থাকে সে ততো বেশি ক্ষমতাবান হিসেবে বিবেচিত হয়। আধুনিক পৃথিবীতে ক্ষমতাবান হিসেবে পরিচিতি পেতে রাষ্ট্রগুলো ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। অধিকাংশ রাষ্ট্র ক্ষমতাবান হতে অস্ত্র নির্মাণে মনযোগী হয়। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলো প্রতিরক্ষাখাতে ব্যাপক বাজেট নির্ধারণ করে। দেশের বিশাল একটি শ্রেণী ক্ষুধার্ত থাকলেও রাষ্ট্র সেদিকে মোটেও কর্ণপাত করে না।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, রাষ্ট্রের এ অবহেলা থেকেই সৃষ্টি হয় বৈষম্য। আর বিশ্বজুড়ে এসব উন্নয়নের সূচকের আলোকে সৃষ্টি হয়েছে শ্রেণীবৈষম্য। এ বৈষম্যের আলোকে পৃথিবীতে সৃষ্টি হয় প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বর ধারণা। আর এর নামকরণ করেন মোড়ল রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত দাতাসংস্থাগুলো। বিশ্বজুড়ে প্রথম বিশ্ব উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। আর তৃতীয় বিশ্বকে মূলত দরিদ্র রাষ্ট্র বলা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে সৃষ্ট হওয়া এ বৈষম্য বিশ্বময় ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে। পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকলেও উন্নত রাষ্ট্রগুলো এ নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলেছে। নিজেরা অস্ত্র নির্মাণ চলমান রেখেছে। দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো নির্মাণ করতে চাইলে তাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। তারা নিজেদের স্বার্থে তৃতীয় বিশ্বকে ব্যবহার করে চলেছে। পথচলার ক্ষেত্রে সামান্য হের ফের হলেই তাকে শায়েস্তা করেছে। তারা মূলত তৃতীয় বিশ্বকে তাদের অনুসারী এক দাসরাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এক্ষেত্রে সামান্য ও ঠুনকো অজুহাতে ছোটো রাষ্ট্রটিকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় বিশ্ব স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও মূলত তারা পরাধীনতার শিকলে বন্দি রয়েছে। আধুনিক যুগে শিকল বন্দি একটি রাষ্ট্রের নাম হলো হলো ইরাক। মিথ্যা অভিযোগে স্বাধীন সার্বভৌম এ রাষ্ট্রকে আমেরিকা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। ইরাক যুদ্ধ থেকে আমেরিকা সরে গেলেও তাদেরই স্পষ্ট কারসাজিতে সেদেশে এখন পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ চলমান রয়েছে। ইরাক-আমেরিকার অসম এ যুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি নিরীহ ইরাকী নিহত হয়েছে। তাদের ঘৃণ্য জিঘাংসার আরেক শিকার আফগানিস্তান। দীর্ঘ তিন যুগের বেশি সময় ধরে এ যুদ্ধ চলে এসেছে। ভয়ঙ্কর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যে ক্লিষ্ট আফগান জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আফগানিস্তানের লোকালয়, পাহাড়-পর্বত ও উপত্যকাকে তছনছ করে দিয়েছে। উন্নত বিশ্বের সুগভীর ষড়যন্ত্রের আরেক শিকার ফিলিস্তীন। পৃথিবীর সকল ইতিহাস এ সাক্ষ্য দেয় যে, ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন সুপ্রাচীন এক স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র। আমেরিকা ও বৃটেনের প্রত্যক্ষ মদদে সুপ্রাচীন এ রাষ্ট্রটি ইহুদিরা দখল করে নিয়েছে। ফিলিস্তিনি মুসলিমরা তাদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। এ উচ্ছেদ অভিযান এখনও চলমান রয়েছে। তাদের এ উচ্ছেদ অভিযানে ৫১ লাখ মুসলিম উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা ও বৃটেন ভূমিহীন যাযাবর ইহুদিদের নিয়ে এসে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রের পত্তন ঘটিয়েছে। উন্নত বিশ্বের পৈশাচিক আচরণের শিকার গোটা ইউরোপের মুসলিম জনতা। তাদের প্রত্যক্ষ মদদে বসনিয়াতে ৩ লাখ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ হাজার মুসলিম নারীকে প্রকাশ্যে গণধর্ষণ করা হয়েছে। চেচনিয়া থেকে সাইবেরিয়াতে ৫ লাখ মুসলমানকে নির্বাসন দেয়া হয়েছে। লিবিয়াকে তারা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ছেড়েছে।

উন্নত বিশ্বের হিংসা আর লালসার আগুনে পুড়ছে এখন ইয়েমান আর সিরিয়া। কাশ্মীরে মুসলমানদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। মুসলমানদের হাত থেকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে মায়ানমার থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমকে বিতাড়িত করা হয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষের ব্যক্তি আচরণকেও মারাত্মকভাবে কলুষিত করে ফেলেছে। এ ব্যবস্থা মানুষকে অতি জাগতিক বানিয়ে ছেড়েছে। মানুষের জীবন থেকে মায়া-মমতা কেড়ে নিয়েছে। বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে ঢেকে দিয়েছে। পুঁজিবাদ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের উদ্ভব ঘটিয়েছে। মানুষে মানুষে সীমাহীন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছে। বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। এ যুগকে বিজ্ঞানের যুগ বলা হয়ে থকে। বিগত ২০ বছরে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। মিডিয়ার অসামান্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। পুঁজিবাদী ধারণা এটিকে আরো বেশামাল করে দিয়েছে। মুক্ত অর্র্থনীতি পণ্যবিনিয়োগে সারা বিশ্বের সাথে আর্থিক নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। কিন্তু মানুষের মাঝে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়েছে। মানুষ অতিমাত্রায় যান্ত্রিক ও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানের বদান্যে নতুন নতুন তাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে উঠেছে। আর এভাবেই দুরন্ত গতিতে পৃথিবী এগিয়ে চলেছে। এসবই এখন উন্নতির মাপকাঠি হিসেবে পরিগনিত হয়েছে। বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় এ পৃথিবীকে আমরা এখন বিশ্বগ্রাম বলে অভিহিত করছি। বিশ^গ্রামের এ স্লোগান উন্নত বিশ্বকে ভাগ্যাকাশে উঠিয়ে দিচ্ছে। বিপরীতে দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো তাদের ফর্মুলা মাফিক চলতে ব্যস্ত থাকছে। আর এ ফর্মুলায় দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোতে নির্মিত হচ্ছে শতশত অট্টালিকা! তাতে ধনীক শ্রেণীর ভাগ্যপরিবর্তন হলেও তৃতীয় বিশ্বে অতি সাধারণের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন ঘটছে না। এ আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, উন্নয়নের সিঁড়িতে পা রেখে উন্নত বিশ্ব আজ এগিয়ে চলেছে ঝড়ের গতিতে। কিন্তু উন্নয়নের চাকার নিচে পিষ্ঠ হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের মানবতা। সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে জাতিগত সংঘাত। নৈতিকতা বিবর্জিত উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো পাচ্ছে বাহবা। কিন্তু তার মাধ্যমে দমিত হচ্ছে দুর্বলরা। এর রেশ ধরে অন্য কোথাও জন্ম নিচ্ছে নতুন ঘটনা। সুতরাং প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, আমাদের গন্তব্য কোন দিকে? পৃথিবী কি শুধু শক্তিমত্তার জয়গানই গেয়ে চলবে? বিশ্বজুড়ে কি শুধু গ্রেটরাই শাসন ও শোষণ অব্যাহত রাখবে? তৃতীয় বিশ্বের মানুষগুলো কি দুঃখ দুর্দশার মধ্যেই পতিত রয়ে যাবে?

লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]



 

Show all comments
  • মোঃনাজমুল ইসলাম ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১১:২৪ এএম says : 0
    অসাধারণ লেখনি.....
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১:০৯ পিএম says : 0
    ইসলামী আকিদা ও বিশ্বাস অনুসারে মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। সুতরাং তার জন্য আবশ্যক হলো মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে আল্লাহর যথার্থ প্রতিনিধিত্ব থাকবে। যেখানে আইনদাতা হবেন মহান আল্লাহ। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে তা বাস্তবায়ন করবে মাত্র। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে একজন মুমিন বিশ্বাস করে যদি মানুষ তার যাপিত জীবনে আল্লাহর আনুগত্যে সে নিষ্ঠা ও সচ্চরিত্রের অধিকারী হয় তবে তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যখন দ্বীন শব্দটি ইসলামের জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন এর অর্থ স্পষ্টতই এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ (SWT) এর উপাসনা ও আনুগত্য করা হয় , শুধুমাত্র সংকীর্ণ ধর্মীয় অর্থে নয়, এমন একটি পদ্ধতিতে যা মানব জীবনের সমস্ত দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য ও এবাদতই যখন মানব জীবনের প্রধান লক্ষ্য তখন জগতের কাজ কারবার, রাজ্য শাসন, রাজনীতি ও পারিবারিক সম্পর্ক সবই এ লক্ষের অধীন. অতএব যে মানুষ এর বিরোধিতা করে সে আল্লাহ ও মানবতার প্রধান শত্রু.
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ বায়েজীদ ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:০৭ পিএম says : 0
    স্যার অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার লেখনী থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আর কতদিন দমিত-শোষিত
আরও পড়ুন