নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আবারো নাইজেরিয়া, আবারো রোহো। কি, মনে পড়েছে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেই ম্যাচের কথা? মেসির জোড়া গোলের প্রতিটির জবাবে আহমেদ মুসার সেই জোড়া গোল? এরপর মার্কোস রোহোর গোলেই তো সেদিন গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে জয় পায় আর্জেন্টিনা! চার বছর পর রাশিয়াতেও সেই নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ঠিক একই চিত্র। মেসির গোলে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন বুননের শুরু, রোহোর পায়ে তার সফল সমাপ্তি। উৎকন্ঠা পেরিয়ে ২-১ গোলের জয় ছিনিয়ে নেয় আজেন্টিনা। যে জয়ে মিশে রইল রক্তাক্ত মাচেরানোর নামও।
ওদিকে আইসল্যান্ডও একই ব্যবধানে হার মানে ক্রোয়েশিয়ার কাছে। চূর হয়ে যায় নাইজেরিয়া আর আইসল্যান্ডের শেষ ষোলর অভিলাষ। রাউন্ড অব সিক্সটিনে নাম লেখায় মেসির আর্জেন্টিনা। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ‘সি’ গ্রæপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। তাতে আর্জেন্টিনার এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প দিয়ে যেন রোমাঞ্চ ধরে রাখল রাশিয়া বিশ্বকাপও। বিশ্বের সেরা খেয়েরায়াড়কে ছাড়া যে ¤øান হয়ে যেত ফুটবলের বিশ্বমঞ্চ।
খাঁদের কিনারা থেকে দলকে বিশ্বকাপে আনা মেসি জ্বলে উঠলেন আবারো। কিন্তু পেনাল্টির সহায়তায় ম্যাচে ফেরে নাইজেরিয়া। নির্ধারিত সময়ের চার মিনিট আগ পর্যন্তও শেষ ষোলর হিসাব মিলিয়ে রাখে তারা। দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাচ্ছিল আফ্রিকান সুপার ঈগলরা। বিদায়ের অন্তিম রেখায় দাঁড়িয়ে লিওনেল মেসির দল। আকাশি নীল আর সাদায় সজ্জিত গ্যালারিতে তখন চাপা উৎকণ্ঠা। যে উৎকণ্ঠা বিশ্বের কোটি কোটি মেসিভক্তদের মনেও। সেই উৎকন্ঠিত দর্শকের মাঝে ছিলেন এমন একজন যার নামের পাশে লেখা দেশটির হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতিও, ডিয়াগো ম্যারাডোনা। এমন সময় মার্কাদোর দারুণ ভলি ডি বক্সে খুঁজে নেয় মার্কোস রোহোকে। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারের সফল ভলি আশ্রয় নেয় জালে।
একই সময়ে দুটি ম্যাচ। আর্জেন্টিনা ভক্তদের নজর সেন্ট পিটার্সবার্গে থাকলেও তৃতীয় নেত্র কিছুক্ষন বাদে বাদে তাই চলে যাচ্ছিল রস্তভ অ্যারেনায়। যেখানে আইল্যান্ডও একই সমীকরণ সামনে নিয়ে লড়ছিল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। আইসল্যান্ডের চেয়ে ক্রোয়েশিয়া শক্ত দল হলেও দুশ্চিন্তা ছিলই মেসি ভক্তদের। আগেই গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত হয়ে শেষ ষোলয় পা রাখায় বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়কে বিশ্রামে রেখে একাদশ নির্বাচন করেন ক্রোয়েট কোচ জøাতকো দালিচ। শেষ পর্যন্ত ৯০তম মিনিটে পার্সিকের গোলে জয় নিশ্চিত হয় ক্রোয়েটদের।
আর্জেন্টিনা ম্যাচের ১৪তম মিনিটে আসে মেসির সেই জাদুকরী মুহূর্ত। লম্বা করে বড়ানো এভার বনেগার পাস ডি বক্সে দারুণ দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণে নেন মেসি। এরপর বাম পায়ের নিখুঁত ফিনিশিং। গ্যাব্রিয়েল সাবাস্তিয়ান ও ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনার হয়ে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করলেন মেসি। কিংবদন্তির পা দিয়ে আসে চলতি আসরের ১০০তম গোল। গ্যালারিতে এসময় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ডিয়াগো ম্যারাডোনার বুনো উল্লাস বার বার খুঁজে নিচ্ছিল ক্যামেরার মুখ। উর্ধপানে চেয়ে সৃষ্টিকর্তাকে হয়ত এসময় একটা ধন্যবাদও দেন ছিয়াশি বিশ্বকাপের মহানায়ক।
গোলের সুযোগগুলো কাজে রাগাতে পারলে জয় পেতে কষ্ট করতে হত না আর্জেন্টিনাকে। অভিযোগের তীর এবারো হিগুয়েইনের দিকে। ২৭তম মিনিটে হিগুয়েইনকে দারুণ একটি পাস দেন মেসি। কিন্তু তালগোল পাকিয়ে শটই নিতে পারেননি ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে হাস্যকর সব মিস করা জুভেন্টাস তারকা।
৩৪তম মিনিটে বল নিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে এগুতে থাকা ডি মারিয়াকে ফাউল না করলে ভয়ঙ্কর কিছুর মুখোমুখি হতে হতো নাইজেরিয়াকে। হলুদ কার্ড এড়াতে পারেননি ফাউলকারী লিওন বালোগুন। ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে নেয়া মেসির ফ্রি-কিক গোলরক্ষক ফ্রান্সিস উজোহোর ডান হাতের আঙুলের আগা ছুঁয়ে বারে লেগে ফিরে আসে।
আর্জেন্টিনা যখন প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে ওদিকে ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচ তখন গোলশূন্য ড্র। ক্রোয়েশিয়া বলের দখল রেখে আথিপত্য দেখালেও গোলে শটই নিতে পারেনি তারা। পক্ষান্তরে দারুণ কিছু পাল্টা আক্রমণে ভয় ধরায় আইসল্যান্ড। কিন্তু নিখুঁত ফিনিশিংয়ের অভাবে জালের দেখা পায়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটের মাথায় ভিডিওর সহায়তায় পেনাল্টি পায় নাইজেরিয়া। লিওন বালাগুনকে ডি বক্সে বাধা দেন মাচেরানো। ফাউলের বাঁশি বাজান রেফারি, মাচেরানোকে দেখানো হয় হলুদ কার্ড। সফল স্পটকিকে দলকে সমতায় ফেরান ভিক্টোর মোসেস। বাকি সময়ে দলকে বাঁচাতে জান-প্রাণ দিয়ে লড়ে যান মাচেরানো। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের বদন চিরে বের হয় রক্তও। সবকিছুকে উপেক্ষা করে লড়ে যাওয়ার শেষ প্রতিদানও পান দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা তারকা মিডফিল্ডার।
৬১তম মিনিটে পেরেজের বদলি নামেন ক্রিñিয়ান পাভোন। খেলায় গতি তাতে কিছুটা বাড়ে। ৭১তম মিনিটে ডি মারিয়াকে তুলে নিয়ে মাক্সিমিলিয়ানো মেজাকে নামান সাম্পাওলি। আগুয়েরোকে নামান ৮০তম মিনিটে। পরের মিনিটেই আগেও অনেকগুলো সুযোগ হাতছাড়া করা হিগুয়েইন সবচেয়ে হাস্যকর গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। গ্যালারিভরা উৎকন্ঠা তখন বিশ্বের কোটি দর্শকদের মনেও। ৮৬তম মিনিটে আর্জেন্টিনার পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। পরের মিনিটেই আকাশী-সাদা গ্যালারিতে ঢেউ তোলেন মার্কোস রোহো। মার্কাদোর অসাধারণ ক্রস খুঁজে নেয় রোহোকে। দারুণ ভলিতে বল পাঠিয়ে দেন জালে। ভিআইপি গ্যালারিতে বাধন ভাঙা উল্লাসে মাতেন ম্যারাডোনা। শেষ দিকে সময় ক্ষেপনের অভিযোগে হলুদ কার্ডের মুখোমুখি হন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।