Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

| প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

সড়কপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। বলতে গেলে তা এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। ঈদুল ফিতরের আগে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। রাস্তার কারণ যানজট ও দুর্ঘটনা আগের চেয়ে কমে আসতে পারে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর এমন আশ্বাসে মানুষ কতটা আস্থা রেখেছিল তার খতিয়ান পাওয়া হয়তো সহজ নয়। তবে মন্ত্রীর আশ্বাস ও ট্রাফিক বিভাগের কথিত নানা উদ্যোগের পরও এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে যাতায়াতের সময় সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যায় অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী ছিল। এর মানে হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের গৃহিত উদ্যোগগুলো কোনো কাজে আসেনি। এহেন বাস্তবতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। গত সোমবা মন্ত্রীপরিষদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর ৬টি নির্দেশনা নীতিমালা আকারে গৃহিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে এখন থেকে মহাসড়কে গাড়ীচালকদের জন্য একটানা সর্বোচ্চ ৫ ঘন্টা গাড়ী চলনার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। মহাসড়কে দূরপাল্লার গাড়ীতে বিকল্প ড্রাইভারের ব্যবস্থা রাখা, মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগার তৈরী করা, সিটবেল্ট বাঁধা, ট্রাফিক সিগনাল ও আইন মানতে বাধ্য করা, রাস্তা পারাপারে নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা এবং চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণহানী ঘটেছে। এমনকি ঈদের ছুটির পর ফেরার পথেও একেকদিন ৪০-৫০জন নিহত ও শতশত যাত্রী আহত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ঈদ যাত্রার আগেই সংশ্লিষ্টদের নানা প্রতিশ্রæতির পরও সড়ক দুর্ঘটনায় এমন প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বিঘœ প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের শুরুতেই দুর্ঘটনা রোধে উল্লেখিত নির্দেশনাসমুহ প্রকাশ করেন। দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প ড্রাইভার রাখা এবং মহাসড়কে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার রাখার মত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো আমাদের বাস্তবতায় নতুন হলেও এসব নির্দেশনার বেশীরভাগই আমাদের ট্রাফিক আইনে বিদ্যমান আছে। এসব আইন কেউ মানেনা, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ট্রাফিক বিভাগও আইন মানতে চালক-মালিকদের বাধ্য করেনা বলেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগ, হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএসহ সড়ক পরিবহন সেক্টরের স্টেকহোল্ডারদের কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধন, গাড়ীর ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করাসহ সামগ্রিক কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র নতুন আইন বা নীতিমালা দিয়ে অবস্থার পরিবর্তন আশা করা যায়না। বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।
সড়কের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনা হবেনা, ঈদের আগে এমনটিই জানিয়েছিলেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দেশের হাজার হাজার কিলোমিটার সড়ক মহাসড়কের বেহালদশার কারণে রাস্তায় যানজট, দুর্ঘটনাসহ নানাবিধ বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছে সড়কপথের লাখ লাখ যাত্রী। সড়কপথের নিরাপত্তা গণপরিবহনে শৃঙ্খলা বিধান করা নি:সন্দেহে একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি অর্থের মানদন্ডে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে যানজটের কারণে শুধুমাত্র রাজধানীতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮০ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। দুই বছর আগে প্রকাশিত এক গবেষনা রিপোর্টে বলা হয়েছে, যানজটের কারনে বছরে দেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমান এক লক্ষ কোটি টাকা। তবে সড়কপথের নিরাপত্তাহীনতা ও যানজটের পরোক্ষ সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমান অপরিমেয়। সড়কপথের অবকাঠামো ও গণপরিবহনকে ঘিরে বছরে হাজার কোটি টাকার সরকারী প্রকল্প, বেসরকারী বিনিয়োগে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা জিইয়ে রেখে এবং শত শত কোটি টাকার ঘুষ ও চাঁদাবাজির সুযোগ অবারিত রেখে শুধুমাত্র নির্দেশনা বা নীতিমালা দিয়ে সড়কপথের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে তদন্ত কমিটি ও জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশমালা প্রকাশিত হলেও সে সব সুপারিশ বাস্তবায়নে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। মানুষ এবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাসমুহ বাস্তবায়ন, সড়ক-মহাসড়কের বেহালদশা দূর করার পাশাপাশি যানজট ও দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণগুলো দূর করার বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক দুর্ঘটনা


আরও
আরও পড়ুন