Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শঙ্কা বিএনপির

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৮, ১১:১৬ পিএম | আপডেট : ১২:০৩ এএম, ২৫ জুন, ২০১৮

খুলনা সিটি করপোরেশনে এক নতুন মডেলের নির্বাচন দেখেছে বিএনপি। সেখানে বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে কর্মী শূণ্য কেন্দ্রে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা জাল ভোটের উৎসব করেছে বলে দলটির নেতারা অভিযোগ করে আসছেন। একদিন পরেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
এখানেও আওয়ামী লীগ একই কৌশলে জয়ী হতে চাইবে বলে মনে করছেন তারা। নির্বাচনের আগে বিএনপি এজেন্টদের ধরপাকড়, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হয়রানী, প্রচার-প্রচারণায় বাধার কারণে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তবে ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি বড় ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন। গাজীপুর বিএনপির নেতারা বলেছেন, এখন এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে আমাদের নেতা-কর্মীদের গণহারে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। বাসায় বাসায় পুলিশ গিয়ে হয়রানি করছে। এ সময় নেতা-কর্মীরা সাহস পাচ্ছেন না। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরে ভোটের প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বিএনপির প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে সরকারি দল। আর ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্ট এবং দলীয় নেতাকর্মীদের আটক, বাসায় বাসায় গিয়ে হয়রানি ও হুমকি-ধামকি দিয়ে তাতে সহযোগিতা করছে পুলিশ প্রশাসন। যারা নিরপেক্ষ থাকার কথা সেই পুলিশ ও প্রশাসনও এখন নির্বাচনে বিএনপি প্রতিপক্ষের মতো আচরণ করছে। প্রতিদিনই কোন না কোন বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করা হচ্ছে। প্রচারণা চালালে নেতাকর্মীদের হুমকী দেয়া হচ্ছে। এতো কিছুর পরও ধানের শীষের জনপ্রিয়তা দেখে সরকারি দল ‘খুলনা মডেলের’ কারচুপি ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন সরকারি দল ও পুলিশের যে আচরণ আমরা গাজীপুরে দেখছি তাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা কিংবা তারা তাদের নিজের ভোট পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারবে কিনা তা নিয়েও আছে সংশয়ে।
সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা সেই আশঙ্কা থেকে গতকাল নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার কমিশনারের সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও বরকত উল্লাহ বুলু। সেখানে তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী হিসেবে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের প্রত্যাহার চান।
গাজীপুরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, তার নির্বাচনের অন্যতম এজেন্ট ও টঙ্গী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভেন্ডরের বাসায় গত দুই রাতে ডিবি পুলিশ গিয়েছিল। বাসন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় হামলা হয়েছে। তাঁর বাড়ির দরজা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিনেই ১৫ জনের মতো নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে খুলনার পুলিশ আনা হয়েছে। কিছুদিন আগে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে ম্যাকানিজম ব্যবহার করে জিতেছে আওয়ামী লীগ, এখানেও তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের আটকে রাখার চক্রান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় আটকে রেখে তাঁদের কোনো কিছু করতে দেওয়া হবে না। তাঁদের নির্বাচন থেকে কীভাবে বাইরে রাখা যায়, সে চেষ্টা হচ্ছে।
তবে খুলনায় সরকারি দলের ভোট কারচুপির কৌশল মাথায় রেখে তা প্রতিহত করারও চিন্তা করছে বিএনপি। খুলনা সিটি নির্বাচনের সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে গাজীপুরে বিজয় ছিনিয়ে আনতে চায় দলটি। এজন্য পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। বিএনপির নীতি নির্ধারকেরা বলছেন, খুলনায় ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে কর্মীশূন্য থাকাটাই তাদের বড় ভুল। এসব বিষয় মাথায় রেখে বিএনপির পরিকল্পনা হলো, মাঠে থাকা। ভোটের আগের রাতে কেন্দ্র পাহারা, ভোটের দিনে নেতা-কর্মীদের উপস্থিত রাখা, ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ভোটের দিন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি বুথেই এজেন্ট উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় তারা। একই সঙ্গে মামলা নেই এমন নেতা-কর্মীদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক এড. আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, গাজীপুরে সরকার খুলনার মডেলে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে। তবে ভুলে গেলে চলবে না খুলনা আর গাজীপুরের পরিবেশ এক না। যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। সুষ্ঠু ভোটের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বিএনপি তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছে।
গাজীপুর বিএনপির সভাপতি ও হাসান উদ্দিন সরকারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন ‘সরকারি দলের হাজারো চাপের ভেতরেও ভোটের শেষ পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীরা থাকবে। খুলনার মতো প্রহসনের চেষ্টা করা হলে গাজীপুরবাসী রুখে দাঁড়াবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নিশ্চিত ভরাডুবি জেনেই গাজীপুরে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি এবং বিরোধী দলের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, বাড়িবাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, গাজীপুরেও তারা খুলনা মার্কা নির্বাচনের জন্যই পুলিশকে দিয়ে ধানের শীষের সমর্থক ভোটারদের এলাকা ছাড়া করে সিটি করপোরেশন এলাকা শ্মশানভূমিতে পরিণত করছে। আর এগুলোর দিকে চোখ বন্ধ থাকা দায়িত্বহীন নির্বাচন কমিশন হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে।####

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপির


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ