পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে সন্ত্রাসীদের কাছে
১২টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত, অনুসন্ধানে গোয়েন্দারা
সাখাওয়াত হোসেন : বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বেড়েই চলেছে। মোটা টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের হাতে বৈধ অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের অনেকেই। রাজধানীসহ সারাদেশে বৈধ অস্ত্র বিক্রির দোকানের মধ্যে কমপক্ষে এক ডজন রয়েছে যেগুলো সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক রেখেছে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা ১২টি দোকান চিহ্নিত করে অনুসন্ধানে নেমেছে।
পুলিশের সূত্র বলছে, রাজধানীতে ১২টি দোকানের ৬টি হচ্ছে খোদ রাজধানীতে। অপর ৬টি রয়েছে বিভিন্ন জেলা শহরে। স¤প্রতি পুলিশের হাতে আটক তিনজন জিজ্ঞাসাবাদে বিদেশ থেকে আমদানি করা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রির কথা স্বীকার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বিক্রির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। আর এমন দুর্বলতায় পুরো ফায়দা তুলে নিচ্ছে বৈধ অস্ত্র বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীরা।
সূত্র আরও জানায়, সারাদেশে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ জন। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ২০ জন। বিভিন্ন জেলা শহরে যারা বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী তাদের কেউ কেউ জেলা প্রশাসনের দুর্বল মনিটরিংয়ের সুযোগে সন্ত্রাসীদের সাথে হাত মিলিয়ে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করছে। আমদানি করা একটি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের কাগজপত্রকে ব্যবহার করে একাধিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি চলছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের সন্ত্রাসী ও দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থি দলের সদস্য এবং সুন্দরবনের দস্যুরাও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কেনার জন্য কথিত ওইসব বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হয়। সিটিটিসি’র স্পেশাল অ্যাকশন গ্রæপ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করে নজরদারিতে রেখেছে। এদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিটিটিসি’র প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসার আড়ালে অনেকেই অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচা করছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। যারা সন্ত্রাসীদের কাছে বৈধ অস্ত্র বিক্রি করছে তারা কোনো প্রমাণ রাখছে না। বিক্রির পর পরই অস্ত্র কয়েক হাত ঘুরে চলে যায় পেশাদার সন্ত্রাসীদের কাছে। বৈধ অস্ত্র ব্যবসার আড়ালে অবৈধ কারবারের সন্ধান মিলে চলতি বছরের এপ্রিলে। রংপুরে সরকার আর্মস কোম্পানির মালিক আনোয়ার হোসেন বাবু অবৈধভাবে দুটি অস্ত্র বিক্রি করতে ঢাকার গাবতলীতে আসলে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রæপ এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বাবু স্বীকার করে রাজশাহীর এক বৈধ আর্মস ডিলার ও রংপুরের এক নারীর কাছ থেকে অস্ত্র দুটি সংগ্রহ করেছিল। পরে সেগুলো অবৈধভাবে বিক্রির চেষ্টা করছিল। বাবুর তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ মে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ডা. জাহিদুল আলম কাদিরকে দুটি পিস্তল ও ৮ রাউন্ট গুলিসহ গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
গত ৩ জুন ওই ডাক্তারের স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে একটি বিদেশি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর ৭ জুন ময়মনসিংহে জাহিদুলের বাসা থেকে ১২টি অস্ত্র এবং এক হাজার ৬১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পরই বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার সম্পর্কে থলের বেড়াল বের হতে শুরু করে।
গত ১১ জুন মহাখালী থেকে মোহাম্মদ আলী বাবুল ওরফে বাবুল মিয়াকে গ্র্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১২৫ রাউন্ড গুলি। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বীকার করে তার বাসায় অনেকগুলো অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। ঈদ-উল-ফিতরের দু’দিন আগে ময়মনসিংহের চুরখাই এলাকায় বাবুলের বাসা থেকে আরও ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও এক হাজার ১৮৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। বাবুলকে গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের পর দায়ের করা মামলার তদন্তের শুরুতেই বেশ কিছু তথ্য পুলিশের হাতে চলে আসে। সূত্র জানায়, তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের বাংলাদেশ আর্মস কোম্পানি, রাজশাহীর কে আহমেদ আর্মস কোম্পানি ও খুলনার আলবার্ট আর্মস স্টোরের মালিককে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে ২০১২ সালে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে অবৈধ অস্ত্র ও গুলিসহ বিএম শাহাবুদ্দিন ওরফে খোকন ও সৈয়দ আসাদুল আব্বাস নামে দু’জন ধরা পড়ে। শাহাবুদ্দিন খুলনার বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ী ও অস্ত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শাহাবুদ্দিন অ্যান্ড সন্সের মালিক। আর সৈয়দ আসাদুল আব্বাস পুরনো ঢাকায় বৈধ অস্ত্রের দোকান সাঈদ অ্যান্ড সন্সের মালিক। তাদের কাছ থেকেই সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়া ৯টি বৈধ অস্ত্রের সন্ধান পায় পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র জানায়, অস্ত্রবহনকারী ব্যক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন নিয়ে বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই ব্যবসায়ী তার স্টক রেজিস্টারে তা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করে না। ওই বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী এসব অস্ত্র কাগজপত্র ছাড়াই অপর জেলার আর্মস ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে। এসব অস্ত্র রেজিস্টারে লিপিবিদ্ধ না করার ফলে কয়েক হাত বদল হয়ে চলে যায় সরাসরি সন্ত্রাসীদের হাতে। এক্ষেত্রে অস্ত্রের দাম হয়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।