পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ১৩৫টি সিন্ডিকেট : সন্ত্রাসীদের কাছে মজুদ আছে লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্রও
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের গ্রামে-গঞ্জেও মিলছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়ি। টাকা হলে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র।
দেশের স্থল ও নৌ-পথে সীমান্তের ওপাড় থেকে প্রতিনিয়ত আসছে লাখ লাখ টাকার অস্ত্রের চালান। লেবুর বস্তা, শাক-সবজি ভর্তি ট্রাক, চালের বস্তা এবং ফলের বক্সে ভর্তি করে, বিভিন্ন ট্রাক, পিকাপ, বাস ও ট্রেনে আসছে অস্ত্রের চালান। কখনো কখনো কুরিয়ার সার্ভিসেও আসছে অবৈধ অস্ত্র। মাঝে মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করলেও বেশিরভাগই রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও গড়ে তুলছেন অস্ত্রের মজুদ। আন্ডারওয়ার্ল্ডে বিদেশি ব্র্যান্ডের এসব আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। চাহিদা মেটাতে দেশের প্রায় ৫৭ সীমান্ত রুট দিয়ে নিয়মিত ঢুকছে বিপুল সংখ্যক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। সেই সাথে সাগর পথেও অবৈধ অস্ত্রের চালান আসছে। শুধু তাই নয়, ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীরাও বিভিন্নভাবে প্রভাব কাটিয়ে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছে। ফলে প্রায় আড়াই হাজার বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স এখন সন্ত্রাসীদের হাতে। এমনটি জানিয়েছেন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালীন বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স নেন। গুলশানে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। বিগত সরকারের আমলে একটি শটগান ও একটি রিভলবারের লাইসেন্স পেয়েছেন চঞ্চল। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের অন্তত দেড় ডজন মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রামের লালখান বাজার ওয়ার্ড যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের নাম পুলিশের খাতায় আছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা আছে ২০টি। এক-এগারোর সময় পালিয়ে গিয়েছিলেন দুবাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবার ফিরে আসেন দেশে। বীরদর্পে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন অস্ত্র হাতে নিয়ে। দিদারুল লাইমলাইটে আসেন হেফাজতে ইসলামকে ঘায়েল করতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি চালানোর পর। পরদিন তাঁর সেই অ্যাকশনের ছবি প্রকাশিত হয় বিভিন্ন দৈনিকে। পুলিশ বলছে, দিদারুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দিদারুল দাবি করে আসছেন, এ সরকারের আমলেই তিনি শটগানের লাইসেন্স পেয়েছেন।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দিদারুল ও চঞ্চলের মতো সারা দেশে দুই সহস্রাধিক দাগি সন্ত্রাসী দলীয় পরিচয় কাজে লাগিয়ে অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও একাধিক সন্ত্রাসী লাইসেন্স পেয়েছিল।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বৈধ অস্ত্রের অপব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় লাইসেন্স দেওয়াসহ অস্ত্র ব্যবস্থাপনা কড়াকড়ি করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। পরে একটি নতুন নীতিমালা তৈরি করা হয়। নীতিমালা সংশোধন করার পরও অনেক অযোগ্য লোক অস্ত্রের লাইসেন্স পাচ্ছে। বিশেষ করে অপরাধীরা দলীয় পরিচয় কাজে লাগিয়ে সহজেই অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে নিচ্ছে। ২০১৫ ও ১৬ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রে লাইসেন্স পেয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ৭ হাজার ১০০ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। লাইসেন্সপ্রাপ্তদের মধ্যে দুই সহস্রাধিক দাগি সন্ত্রাসী। বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যাকা- থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকা- চালানো হচ্ছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লাইসেন্স নেয়ার সময় যে ঠিকানা দেওয়া হচ্ছে, ওই ঠিকানারও হদিস মিলছে না।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এমন তথ্য জানিয়েছেন। অত্যাধুনিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এখন যেন হাতে হাতে। কেবল আন্ডারওয়ার্ল্ডের ক্যাডার কিংবা পেশাদার সন্ত্রাসী নয়, বিদেশি নামি-দামি ব্র্যান্ডের আগ্নেয়াস্ত্র এখন দেশের সবধরনের সন্ত্রাসীদের হাতে।
অবৈধ অস্ত্র নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টার’ এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় ১৩৫টি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়। সীমান্তপথে ভারত ও মিয়ানমার থেকে এসব রুটে সহজেই বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে অস্ত্রের চালান। মিয়ানমার থেকে উখিয়া ও টেকনাফ হয়ে অস্ত্রের চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র আনতে মাছের ট্রলারসহ নানা কৌশল ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা। সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা অর্থের লোভে অনায়াসে অস্ত্র বহন করছে। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের বিভিন্ন রুট দিয়ে মাছের ট্রলারে অস্ত্রের চালান ঢুকছে।
এছাড়া চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র তৈরি করা হয়। কম দাম ও সহজলভ্য হওয়ায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় এসব অস্ত্রের চাহিদা বেশি। এর মধ্যে দেশি এলজি, পিস্তল, পাইপগান, বন্দুক্য। আসছে একে-৪৭, এম সিক্সটিন।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ অস্ত্রের দাম বেড়ে গেছে। ভারতীয় অস্ত্রের দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার এবং ইউরোপীয় অস্ত্রের দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, আন্ডারওয়ার্ল্ডে ভারতীয় ছোট অস্ত্রের চাহিদা ছিল এক সময় ব্যাপক। তবে বর্তমানে ইউরোপ থেকে বেশিরভাগ অস্ত্র আসছে বাংলাদেশে। রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তের চিহ্নিত অস্ত্র চালানের প্রবেশপথগুলো বন্ধ করতে না পারায় দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ বাড়ছে। এছাড়া যেসব বিদেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিরই বিশেষ সিরিয়াল নম্বর আছে। সেই সমস্ত নাম্বারের সূত্র ধরেও অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং তাদের থেকে কেনা ডিলারের নাম-ঠিকানা, এমনকি খুচরা ক্রেতাদের সকল তথ্যও জানা যাবে। এসব বিষয়ে ব্যাপকভাবে তদন্ত করা হলে অস্ত্র চোরাকারবারীদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট শনাক্ত করা সম্ভব হবে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমনভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না। আর তাই অস্ত্র চোরাকারবারীর মূল হোতারা থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, দেশে কি পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান কারো কছে নেই। তবে ধারণা করা হয়, প্রায় সাড়ে ৫ লাখ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে মজুদ রয়েছে। এর একটি অংশ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা একশ্রেণীর নেতাকর্মীর হাতে রয়েছে। শুধু ছোট ছোট অস্ত্র নয়, বড় ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রও সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ ব্যবহার করে থাকে রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা, ৩০ ভাগ অস্ত্র আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীরা। প্রায় ১০ ভাগ অস্ত্র চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য অপরাধের কাজে ব্যবহার করছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, অবৈধ অস্ত্রের পেছনে আন্তর্জাতিক মাফিয়া ও চোরাচালানিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কাজ করছে। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র পাচার বন্ধে বিজিবির মুখ্য ভূমিকা পালন করার কথা। তবে সেভাবে তাদের তৎপরতা চোখে পড়ে না।
বিজিবির একটি সূত্র মতে, গত প্রায় সাত বছরে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ২৭০ বিদেশী পিস্তল ও রিভলবার সীমান্ত থেকে জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, স্থানীয় প্রশাসন অস্ত্র পাচার বন্ধে ভূমিকা পালন না করায় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অস্ত্র প্রবেশের হার বেড়ে গেছে। তাদের মতে, প্রায় ১০ হাজার পেশাদার সন্ত্রাসীর হাতে লাইসেন্স করা অত্যাধুনিক ৯ এমএম পিস্তল রয়েছে বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রতিদিন কী পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র দেশে আসছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্রের পরিমাণের সঠিক কোনো হালনাগাদ তথ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে নেই। তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকাও নেই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ঢাকাসহ সারা দেশে তিন শতাধিক অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গায়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্রের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই বিদেশি। ইউরোপের দামি অস্ত্রের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও অবৈধ অস্ত্র আসছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।