Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ বাড়ছে

সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর হাতে সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ৮:৪৬ পিএম

পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ তাদের নানান অপকর্ম দিনদিন বেড়েই চলেছে। পাহাড়ে ৩টি আঞ্চলিক সংগঠনের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর হাতে সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। মাঝে মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর সমন্বয়ে মাঝে মধ্যে অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হলেও এদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না । ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এলাকায় শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাঙালীরা ওই সব সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসীদের কাছে এ ধরনের জিম্মি হয়ে রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের একাধিক সূত্র জানায়, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা নতুন করে আরো বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সংগ্রহ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও একই ধরনের সন্ত্রাসী-কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইউপিডিএফ, জেএসএস (সন্তু) এবং জেএসএস(সংস্কার) নামে তিন উপজাতি সশস্ত্র সংগঠন। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মানুষের কাছ থেকে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে জোর জবরদস্তি করে চাঁদাও আদায় করে যাচ্ছে। পাহাড়ের কোথায় কখন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কার ওপর হামলে পড়বে তা নিয়ে সার্বক্ষণিক উৎকণ্ঠায় থাকতে হচ্ছে পাহাড়ি-বাঙালি শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোকে। সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ৪ নভেম্বর রাঙামাটির সাজেকে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযান চালিয়ে ইউপিডিএফ-এর চারটি আস্তানা ধ্বংস করে। এ সময় ওই আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক, ও সামরিক পোশাক উদ্ধার করা হয়। ৪ নভেম্বর শনিবার ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত টানা ১৫ ঘণ্টা এ অভিযান চলে। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে, দু’টি বন্দুক, ১টি পিস্তল, পিস্তলের দুই রাউন্ড তাজা গুলি, বন্দুকের গুলির খালি খোসা ৪টি, একটি পরিপূর্ণ বোমা, প্লাস্টিক বোমা ৫শ গ্রাম, বোমা বানানোর সরঞ্জামাদি, বিপুল পরিমাণ কমব্যাট পোশাক ও কমব্যাট ট্রাউজারসহ বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম। নিরাপত্তাবাহিনীর সূত্র হতে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাঘাইহাট সেনা জোন হতে দু’টি টহল দল সাজেকের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান। নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরে তাদের চারটি আস্তানা তল্লাশি চালিয়ে এ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে সন্ত্রাসীদের চারটি আস্তানা ধ্বংস করা হয়। সূত্র আরো জানান, সন্ত্রাসীদের আস্তানাগুলো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হওয়ায় জানমালের ক্ষতির আশঙ্কায় নিরাপত্তাবাহিনীর কৌশলে অভিযান চালাতে হয়। গত ১৮ অক্টোবর খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে চাঁদাবাজি করতে আসা ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদেরকে নিজ বাড়িতে গোপনে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করায় উক্ত এলাকায় বসবাসকারী প্রফুল্ল ত্রিপুরার ছেলে নিরীহ কৃষক জীবন ত্রিপুরা (৩২)। পরে তাকে গুলি করে গুরুতর আহত করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। এ সময় জীবন ত্রিপুরা হাতে ও বুকে গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দে পাড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এদিকে ২০ অক্টোবর চাঁদাবাজির এলাকা ভাগ এবং অন্যান্য আন্তঃদলীয় কোন্দলের জের ধরে জেএসএস (এমএন) গ্রুপের নেতা সমায়ুন চাকমাকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যা করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কমলছড়ি ভুয়াছড়ির খ্রিষ্টান পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা শুধু হত্যা বা চাঁদা আদায় করেই ক্ষান্ত নেই, তারা পাহাড়ে পৈশাচিক কায়দায় নারী নির্যাতনও চালাচ্ছে। পাহাড়ি মেয়েরা বাঙালি ছেলেদের বিয়ে করলে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে তোয়াক্কা না করে এসব মেয়েদের ধরে নিয়ে নিজেরাই শাস্তির নামে নারীদের গণধর্ষণ করছে। সেই সাথে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও চালায় ভয়াবহ নির্যাতন। পাহাড়ের নারী অধিকার সংগঠনগুলোকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এছাড়া পাহাড়ের শান্তি বিনষ্টকারী এই ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ নানান অপকর্মের পাশাপাশি তারা বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষত ফেসবুকে নামে-বেনামে বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ বা আইডি খুলে সরকার, সেনাবাহিনী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদের নিয়ে নানান মিথ্যাচার, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান করে আসছে। সূত্র জানায়, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কারণে পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও শান্তিতে নেই কেউ। পার্বত্য অঞ্চলে স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালে মাত্র ৪৮ কিলোমিটার রাস্তা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য অঞ্চলে নির্মাণ করেছে ১৬০০কিলোমিটার রাস্তা। এ রাস্তায় অসংখ্য ব্রিজ ও কালভার্ট। পার্বত্য জেলার অধিবাসীরা জানান, পার্বত্যাঞ্চলে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীকে ছয়টি স্থায়ী সেনানিবাসে প্রত্যাবর্তন, সামাজিক উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৩ পার্বত্য জেলায় ৪১ হাজার ৮৪৭ জনকে বয়স্ক ভাতা, ২২ হাজার ৪১০ জনকে বিধবা ভাতা, ৭ হাজার ৩১১ জনকে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা এবং ৯৮১ জন প্রতিবন্ধীকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে ১ হাজার ৪৬টি সমিতির মাধ্যমে ৫২ হাজার ১৭২ জন সদস্যের দারিদ্র্য বিমোচন তথা জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬২৩টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আগে যেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ ছিল না সেখানে নির্মিত হয়েছে ১টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১টি মেডিকেল কলেজ। হাইস্কুল ও কলেজের সংখ্যা যেখানে ছিল মাত্র ১১টি সেটা এখন ৪৭৯টি। প্রায় প্রতিটি পাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। শিক্ষার হার ২ ভাগ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪৪ দশমিক ৬২ ভাগে পৌঁছেছে। যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষার হার ৫৯ দশমিক ৮২ ভাগ সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার ৭৩ ভাগ। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের শিক্ষার হার ২৩ ভাগ । সংশ্লিষ্টরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১টি থেকে ৩টি করা হয়েছে, হাসপাতালের সংখ্যা ৩টি থেকে ২৫টিতে উন্নীত হয়েছে। যেখানে কোনো খেলার মাঠ ছিলো না সেখানে ৫টি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। কলকারখানা, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ১৯৩টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৩৮২টিতে উন্নীত হয়েছে। ফলে সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এককালের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রভূত উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ