Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : বৃহত্তর চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। প্রতিদিন র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে মহানগর ও জেলার কোথাও না কোথাও ধরা পড়ছে আগ্নেয়াস্ত্র। ডাকাতের কাছেও মিলছে ভয়ঙ্কর যুদ্ধাস্ত্র। রাজনৈতিক সহিসংতা থেকে শুরু করে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, পাড়ায়- মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার সর্বত্রই ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে।
দেশী অস্ত্রের পাশপাশি সন্ত্রাসীদের ভা-ারে অত্যাধুনিক বিদেশী অস্ত্রের মজুদও গড়ে উঠছে। কক্সবাজারের মহেষখালীসহ বিভিন্ন পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে দেশী অস্ত্র। সীমান্ত পথে আসছে বিদেশী অস্ত্র। এসব অস্ত্র সিন্ডিকেটের হাত হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর কাছে চলে যাচ্ছে। পেশাদার অপরাধী, রাজনৈতিক দলের ক্যাডার মাস্তানদের পাশপাশি উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের হাতেও যাচ্ছে এসব অস্ত্র।
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের গোপন অস্ত্রভা-ার সমৃদ্ধ করছে। চলমান ইউপি নির্বাচনকে ঘিরেও অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে অস্ত্রবাজির ঘটনাও ঘটেছে। মাঝে মধ্যে কিছু অস্ত্র ধরা পড়লেও বেশির ভাগ অস্ত্র, গোলাবারুদ অপরাধীদের গোপন আস্তানায় অক্ষত থেকে যাচ্ছে। এতে করে অপরাধীরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
রোববার গভীর রাতে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন শাহ আমানত সেতু এলাকায় দেশী অস্ত্রের ম্যাগাজিনসহ মো: আরাফাত করিম (২২) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুর জানান, কক্সবাজার থেকে আসা ইউনিক পরিবহনের একটি বাস থেকে নেমে দুই যুবক শাহ আমানত সেতু এলাকায় অপেক্ষা করছিল। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় বাকলিয়া থানার এসআই আবদুর রাজ্জাক চ্যালেঞ্জ করেন।
ভয়ঙ্কর যুদ্ধাস্ত্র এম-১৬ রাইফেল ও বিপুল সংখ্যক গুলিসহ এক রইশ্যা ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আব্দুর রশিদ ওরফে রইশ্যা (৪১) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের সদস্য। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া পালোয়ানপাড়ায়। রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ জানান, শুক্রবার গভীর রাতে লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকা থেকে আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে রাউজান নিয়ে এসে নিজ বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি এম-১৬ রাইফেল, ১০১ রাউন্ড গুলি, দুইটি এক নলা বন্দুক ও তিনটি বন্দুকের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। ওসি কেফায়েত জানান, রশিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ নগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। ডাকাতির কাজেও সে এসব ভয়ঙ্কর অস্ত্র ব্যবহার করত।
শনিবার গভীর রাতে নগরীর বায়েজিদ ও অক্সিজেন এলাকা থেকে ডাকাতির অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত মো: তাজউদ্দিন নুরু (৩৮) ও তার সহযোগী আব্দুল কাদেরের (৪০) কাছ থেকে একটি দেশীয় তৈরি এলজি উদ্ধার করা হয়। পুলিশি অভিযানে প্রতিদিনই অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী ধরা পড়ছে। আবার অস্ত্র বেচাকেনা করার সময়ও ধরা পড়ছে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। এ কারণে অস্ত্র ধরা পড়ছে। গত এক বছরে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি একে-২২ রাইফেলসহ বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়।
অস্ত্র উদ্ধারের পরও অবৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার কমছে না। গত শনিবার নগরীর মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিক কাউকে গ্রেফতার করেনি। চকবাজার থানার ওসি গুলির ঘটনা তদন্ত করছেন বলে জানান।
সম্প্রতি নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে প্রিমিয়ার ভার্সিটির ছাত্র ছাত্রলীগ নেতা সোহেল হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার দাবিতে ছাত্রলীগের একটি সমাবেশেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায়ও থানার ওসি বলেছেন, বেশি মানুষের ভিড়ে গুলি হওয়ায় তিনি অস্ত্রধারীদের চিনতে পারেননি। আর এ কারণে তাদের গ্রেফতারও করা যায়নি। মহানগরীতে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনায় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে।
ছিনতাই, চাঁদাবাজির ঘটনাতেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই হচ্ছে। মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ও গামছা পার্টির সদস্যরাও অস্ত্র ব্যবহার করছে। ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছে ভয়ানক যুদ্ধাস্ত্র। নগরীর সদরঘাটে গত বছর ছিনতাইয়ের সময় গ্রেনেড ও একে-২২ রাইফেল ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় ছিনতাইয়ের শিকার ব্যবসায়ী ও নিজেদের গ্রেনেড বিস্ফোরণে ২ সন্ত্রাসী নিহত হয়। পরে ওই ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মোজাহেদীন বাংলাদেশ- জেএমবির কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা ওই ছিনতাইয়ের দায় স্বীকার করে। গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করে ডিবি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ