পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের ৩০টি রুট দিয়ে প্রবেশ করছে অবৈধ অস্ত্র। বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ি, আমের ঝুড়ি, মাছের নৌকা ও গরুসহ নিত্য নতুন কৌশলে অবৈধ অস্ত্র আসছে। ছোটখাটো অস্ত্রের পাশাপাশি আসছে অত্যাধুনিক অস্ত্রও। চোরাচালানী চক্র ভারত ও মিয়ানমার থেকে ৩০ হাজার টাকার অস্ত্র এনে লাখ টাকায় বিক্রি করছে। রয়েছে কম দামের অস্ত্রও।
রাজধানীসহ সারাদেশে অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার সাথে ১২৮টি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি বাড়তে পারে। ছোট অস্ত্রগুলো ধরা পড়লেও অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধারের সংখ্যা খুবই কম। এসব অবৈধ অস্ত্রের পেছনে আন্তর্জাতিক মাফিয়া ও চোরাচালানীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কাজ করছে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন এসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তের চিহ্নিত অবৈধ অস্ত্রের রুটগুলো বন্ধ করতে না পারায় দেশের অভ্যন্তরে এর মজুদ বাড়ছে। এছাড়া যেসব বিদেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিরই বিশেষ সিরিয়াল নম্বর রয়েছে। সেই সমস্ত নম্বরের সূত্র ধরেও অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কাছ থেকে কেনা ডিলারের নাম-ঠিকানা, এমনকি খুচরা ক্রেতাদের সকল তথ্যও জানা সম্ভব।
সূত্র জানায়, নামীদামী ব্র্যান্ডের অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে একমাত্র বৈধ অস্ত্রের ডিলাররাই কিনতে পারেন। সেসব ডিলারের কাছ থেকে যারা অস্ত্র কেনেন, তাদেরও নাম-পরিচয়সহ বৈধ কাগজপত্র থাকে। এর ব্যতিক্রম যেখানে হয়, মূলত সেখান থেকেই অস্ত্র অবৈধভাবে চোরাকারবারিদের হাতে যায়। এসব বিষয়ে ব্যাপকভাবে তদন্ত করা হলে অস্ত্র চোরাকারবারিদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস) সহেলী ফেরদৌস দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ অত্যন্ত তৎপর। দেশের যেখানেই হোক না কেন অবৈধ অস্ত্রের তথ্য পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। প্রতি মাসেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন বাহিনীর পক্ষে এককভাবে অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সচেতন সকল নাগরিকের এগিয়ে আসা। শুধু অবৈধ অস্ত্রধারী নয়, সব ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের সম্পর্কে পুলিশকে সাধারণ নাগরিকদের তথ্য প্রদান করা উচিত। এ ক্ষেত্রে পুলিশ তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, দেশে কমপক্ষে ৩ লাখ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বিভিন্ন পর্যায়ের সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ক্যাডারদের হাতে রয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা। আর ৩০ ভাগ অস্ত্র ব্যবহার করে আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীরা। অবশিষ্ট ১০ ভাগ চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য অপরাধের কাজে ব্যবহার করছে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, স্থল ও জলপথের ৩০ রুটে দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছে। অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান ঢুকছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। চট্টগ্রামের ৯টি রুট দিয়ে অস্ত্রের চালান আসছে। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে অস্ত্র নিয়ে আসার জন্য সন্ত্রাসীরা একাধিক রুট ব্যবহার করছে। যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা উপজেলার ২৪০ কিলোমিটারজুড়ে ভারতীয় সীমান্ত। শার্শার বেনাপোল স্থলবন্দর, চৌগাছা উপজেলার শাহজাদপুর, হিজলা, আন্দুলিয়া, মান্দারতলা, বেনাপোলের সীমান্তের গোগা, কায়বা, শিকারপুর ও দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্রসহ বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য দেশে ঢুকছে।
সাতক্ষীরা সদরের কুশখালী ও গাজীপুর ঘাট দিয়ে সাধারণত চোরাচালান হয়ে অস্ত্র আসছে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ভোলা নদী হয়ে এবং মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা দিয়ে বলেশ্বরী নদীপথে অবৈধ অস্ত্র হাত বদল হয়। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, দিনাজপুরের হিলি, কুড়িগ্রামের দুর্গাপুর ও নাগেশ্বরী, খাগড়াছরির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গার বরকল ও বাঘাইছড়ি, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসছে। সিলেটের তামাবিল ও কুমিল্লা সীমান্ত দিয়েও আসছে অবৈধ অস্ত্র।
অবৈধ ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, ইতালির তৈরি ‘পেট্রো বেরেটা’, আমেরিকার ‘স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন’ স্পেনের ‘অ্যাস্ট্রা আনকেটা’র এবং ভারতের তৈরি পিস্তল ও রিভলবার। আছে অস্ট্রিয়ার গ্লোক পিস্তল-১৭, ভোলকেনিক ভলিশনাল রিপিটার, ওয়ালথার পিপি, পিপিকে/এস পিস্তল ও ফ্রান্সের বাউনিং হাইপাওয়ার সন্ত্রাসীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া আমেরিকার স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন ব্র্যান্ডের কয়েকটি মডেলের রিভলবার-পিস্তল এদেশের সন্ত্রাসীরা বর্তমানে বেশি ব্যবহার করছে। এর বাইরে রয়েছে ভারতীয় পিস্তল ও রিভলবার।
সূত্র জানায়, পিট্রো বেরেটাসহ বিদেশি ওইসব অত্যাধুনিক অস্ত্রের মূল্য বৈধভাবে ৭০০ থেকে ১ হাজার মার্কিন ডলার। এসব অস্ত্র বর্তমানে অবৈধভাবে কেনাবেচা হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। ছয় মাস আগেও বিক্রি হতো ৩ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায়। ভারতীয় পিস্তল বেচাকেনা হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। মাস ছয়েক আগে ভারতীয় পিস্তলের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক কর্মকর্তা বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ এড়াতে অস্ত্র চোরাকাচালানীরা মহিলাদের স্পর্শকাতর স্থানে বিশেষভাবে রেখে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে সরবরাহ করছে। এছাড়া পেঁপে ও তরমুজের মধ্যে অস্ত্র রেখে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া হচ্ছে। এমনকি কাঁচা তরকারির গাড়ি, শিশুদের স্কুলব্যাগ, বাসের সিটের নিচসহ নানা কৌশলে অস্ত্র বহন করা হচ্ছে। অস্ত্র বহনের জন্য রয়েছে নারী ও পুরুষের বিশেষ সিন্ডিকেট। জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৫২টি অস্ত্র জব্দ করেছে বিজিবি। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, জব্দ করা অস্ত্রের মধ্যে ৩৪টি পিস্তল-রিভলবার এবং অন্যান্য অস্ত্র রয়েছে ১৮টি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।