Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইনকিলাব এগিয়ে যাবেই

সা কি র আ হ ম দ | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বত্রিশ বছর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার জন্য কম সময় নয়। ১৯৮৬ সালে জন্ম নেয়া সেই শিশু আজ তেত্রিশ বছরে পা দিয়েছে। জন্ম নিয়েই একেবারে কম সময়ের মধ্যে সংবাদপত্র জগতে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়েছিল যে বাংলা দৈনিকটি তার নাম ইনকিলাব। বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে অনেক জাতীয় দৈনিক পত্রিকাই জন্ম নিয়েছে। এখনো নতুন নতুন নামে দৈনিক পত্রিকার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এর মধ্যে দেশ ও জনগণের পক্ষে কথা বলে পাঠকদের প্রিয় হয়েছে ইনকিলাব।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ (এইচএম) এরশাদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী দেশের ক্ষমতা দখল করে। সংবাদপত্রের উপর নেমে আসে কড়াকড়ি। কি লেখা যাবে এবং যাবে না সে বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় নিয়মিত ধারণা দেয়া শুরু করে। এরশাদের সামরিক শাসনের সময় দৈনিক পত্রিকাগুলো স্বাধীনভাবে লেখালেখি করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সাংবাদিক না হয়েও স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্য যিনি এগিয়ে আসেন তিনি হলেন আলহাজ মাওলানা এম.এ. মান্নান (রহ.)।
এরশাদ সরকারের ধর্ম এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী হওয়ার পরও এম.এ. মান্নান একটি বাংলা জাতীয় দৈনিক পত্রিকার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। দৈনিক ইনকিলাব নামে পত্রিকার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে রাজধানীর বনানীতে অফিস চালু করা হয়। বনানী ১০ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে অস্থায়ীভাবে ইনকিলাবের অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। আরেকটি অফিস বসে বনানী ৪ নম্বর সড়কে এম.এ. মান্নান সাহেবের বাসার একটি ফ্লোরে। সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এএমএম বাহাউদ্দীন। আর সে সময় ইনকিলাব ভবন নির্মাণ শুরু হয় ২/১, আর কে মিশন রোডে। অর্থাৎ তিনটি পৃথক জায়গায় শুরু হয় দৈনিক ইনকিলাবের কার্যক্রম। একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার কাজকর্ম পৃথক তিনটি স্থান থেকে হচ্ছে। এই বিষয়টি সে সময় যারাই শুনেছিলেন তাদের কথা ছিল, ‘এভাবে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করা সম্ভব নয়’।
১৯৮৬ সালের এপ্রিলের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে সাংবাদিকরা কাজে যোগদান করেন। নিয়মিত অফিস করলেও পত্রিকা কবে প্রকাশিত হবে সে বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না। তবে প্রতিদিন অ্যাসাইনমেন্ট করে অফিসে গিয়ে রিপোর্ট লিখে জমা দেয়া নিয়ম ছিল। এপ্রিলের পর মে মাস শুরু হলেও দুই সপ্তাহ একইভাবে কাজ করতে হয়েছে।
মে মাসের ২০ তারিখের পর পত্রিকার ডামি বের হওয়া শুরু হয়। অফিসে গিয়ে পত্রিকা হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ পেলেও বাইরে নিয়ে যাওয়া একেবারে নিষেধ ছিল। একদিকে পত্রিকার ডামি বের হচ্ছে, অপরদিকে গোটা দেশে শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা। মধ্য জুনে পর্দা উঠবে মেক্সিকো-১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের। এমন অবস্থায় জুনের ১ তারিখ সন্ধ্যার পর বার্তা সম্পাদক সুলতান আহমেদ বললেন, ‘সবাই প্রস্তুত হোন। জুনের ৪ তারিখ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা বাজারে যাবে’।
বনানীর ১০ নম্বর সড়কের বাসায় কাজ শেষে পত্রিকা ছাপার জন্য প্রতি রাতে একটি লাল জীপের গন্তব্য ছিল ২/১, আর কে মিশন রোড। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোন কিছুতে এই জীপের চাকা একটি বারের জন্য থামেনি। প্রতি রাতে বনানী ১০ নম্বর সড়কের অস্থায়ী অফিস থেকে জীপটি ২/১, আর কে মিশন রোডে ঠিক সময়ে এসে পৌঁছাতো। সে সময়কার অন্যান্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকরা নতুন একটি পত্রিকা হাতে নিয়ে দেখার জন্য আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষায় ছিলেন।
প্রথম দিন ৪ জুনের পত্রিকা হাতে নিয়ে কোনো পাঠকই পিছন দিকে ফিরে তাকায়নি। সবাই ইনকিলাবকে দেশ ও জনগণের পক্ষে কথা বলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্বাগত জানিয়েছিলেন। শিক্ষা জীবন শেষে ইনকিলাবের জন্ম থেকেই সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন সাংবাদিকদের নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। সম্পাদকের পরিষ্কার কথা ছিল, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থে যতই হুমকি ও ভয়ভীতি আসুক ইনকিলাব তার পথে এগিয়ে যাবেই। কারো রক্তচক্ষুর কাছে মাথানত করবে না।’
ইনকিলাবের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সম্পাদক রিপোর্ট লেখার ব্যাপারে বিপ্লব ঘটানো শুরু করেন। তখনকার দৈনিক পত্রিকাগুলো দৈনন্দিন ঘটনা, সভা-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন, সড়ক দুর্ঘটনা ও অপরাধ বিষয়ক রিপোর্টের বাইরে তেমন একটা বিশেষ প্রতিবেদন দেখা যেত না। তাছাড়া থাকতো রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন ঘটনার রিপোর্ট। সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন রিপোর্টারদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করার সময় দেশ ও বিদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফিং করতেন। তবে বিশেষ প্রতিবেদন লেখার ব্যাপারে বিষয় নির্ধারণ করাসহ কিভাবে লিখতে হবে এবং কি কি তথ্য থাকা প্রয়োজন সেসব বলে দিতেন।
বিশেষ প্রতিবেদন ছাড়া ইনকিলাব প্রকাশিত হয়েছে এমন একটি দিন নেই। বড় কোনো ঘটনা ছাড়া পত্রিকার প্রধান শিরোনামের জায়গার দখল নিয়েছিল বিশেষ প্রতিবেদন। সম্পাদকের নেতৃত্বে সেই যে পথচলা শুরু হয়েছিল তা অব্যাহত রয়েছে। ইনকিলাব বত্রিশ পেরিয়ে তেত্রিশে পা দিয়েও বিরামহীনভাবে সামনের দিকেই ছুটে চলেছে। তার এভাবে চলার সঙ্গে শুরুতে যারা ছিলেন তাদের অনেকই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আগামীতেও একইভাবে ইনকিলাব পরিবারের সদস্যরা এক এক করে বিদায় নেবেন। আর এটাই নিয়তি।
দৈনিক ইনকিলাব জন্মের পর শিশু অবস্থায় সংবাদপত্র জগতে নিজের নামের অর্থ বিপ্লব প্রমাণ করতে সত্যিই বিপ্লব ঘটিয়েছিল। বছরের চাকা ঘুরে ৪ জুন আসে এবং চলেও যায়। সময়ের পরিবর্তন হয়। কিন্তু দেশ ও জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্য ইনকিলাবের কোনো পরিবর্তন নেই। এরশাদ সরকার দুই দফা ইনকিলাবের প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েও সম্পাদককে বাগে নিতে পারেনি। তিনি আপোষ না করে ইনকিলাবের নীতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে লড়াই করেছিলেন। সম্পাদকের নেতৃত্বে ইনকিলাব তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞার কথা সরকারকে জানিয়ে দেয়। আর সে লড়াইয়ে সরকার পত্রিকা প্রকাশনার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল।



 

Show all comments
  • মোঃ শামছুল আলম ৪ মার্চ, ২০১৯, ৬:৫৩ পিএম says : 0
    ধন্যবাদ ভাই আপনাদের অপেক্ষায় বসে আছি আমরা জীবনেে শেষ আশা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইনকিলাব

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন