২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
২০০০ সালের শুরুতে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল মাত্র এক হাজারের মতো। চাইলেও সর্বসাধারণের জন্য সুচিকিৎসা ছিল অনিশ্চিত। পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবে দাঁত বা মুখের রোগ নিয়ে মানুষ অনেকটা নিরুপায় হয়ে, অপচিকিৎসার দৈরাত্মে সুচিকিৎসায়ও আস্থা হারিয়ে ফেলত। সেই ধারাবাহিকতা কিন্তু এখানো রয়ে গেছে, আমাদের মধ্যে অনেকেই দাঁতে ব্যথা, মাঢ়ি দিয়ে রক্ত পড়া, মুখের মধ্যকার ঘা নিয়ে অবহেলা করছে অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সাময়িক উপশমের জন্য ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ সেবন, সর্বশেষে তুলনামূলক কম খরচে যাচাই-বাছাই ছাড়া অনুমোদনবিহীন চিকিৎসাকেন্দ্রের আশ্রয় নিচ্ছে। অন্যদিকে হার্ট, কিডনি, লিভার, মস্তিষ্ক, চোখ বা হাড়ের কোনো রোগে আমরা অতি সতর্কতার সাথে সাধ্যমতো ভালো চিকিৎসা নিতে সচেষ্ট হই। মুখের রোগে অবহেলার কারণ হিসেবে স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাবকেই দায়ী করা যায়। অবহেলিত মুখের রোগ থেকে হতে পারে নানা ধরনের জটিলতা, তাই মুখের সঠিক যত্নের কোনো বিকল্প নেই।
অবহেলিত মুখের রোগ :
মুখের রোগ পুষে রাখলে খাবার গ্রহণের সমস্যা থেকে অপুষ্টি, মুখের আকৃতি নষ্ট হওয়া, ব্যক্তিত্বহানি, কাজে অনীহা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, এক দাঁত থেকে অন্যা দাঁতে সংক্রমণ, দাঁতের গোড়ায় সিস্ট, পুঁজ, টিউমার, দাঁত নড়ে পড়ে যাওয়া, অসহনীয় ব্যথা, তালু, জিহ্বা, মাঢ়ি, চোয়ালের ভেতরের অংশে বিভিন্ন ঘা, মুখে বিব্রতকর দুর্গন্ধ, লাডউইগস এনজাইনা থেকে শ্বাস বন্ধে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
মুখ ও শরীরের সম্পর্ক :
আমাদের স্পষ্টভাবেই জানতে হবে, মুখগহ্বর হচ্ছে শরীরের প্রবেশদ্বার। চিকিৎসা গবেষকগণ নানা গবেষণার মাধ্যমে তথ্য দিচ্ছেন যে, দীর্ঘমেয়াদী মুখগহ্বরের রোগ সহজেই রক্ত প্রবাহে মিশে শরীরের যে কোনো অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে হার্ট সংক্রমণ, মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে বাধার মাধ্যমে স্ট্রোক, ডায়াবেটিক রোগীদের ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস করে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ানোসহ গর্ভবতী মেয়েদের অপরিণত গর্ভপাত, হাড় ক্ষয়। অন্যদিকে শরীরের অনেক রোগের প্রাথমিক উপসর্গ মুখে দেখা যেতে পারে যেমন- বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব, রক্ত স্বল্পতা, হরমনের তারতম্যতা, ব্লাড ক্যান্সার থেকে শুরু করে রক্তে কোনো রোগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, লিভার বা কিডনি রোগ, গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি, হার্টের ব্যথা, চোয়ালে অনুভব থেকে মরণ ব্যাধি এইড্স পর্যন্ত।
ক্যান্সার :
মুখের ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কিছুদিন আগে মাত্র ২৬ বছর বয়সী এক মেয়ের মুখে ক্যান্সার চিহ্নিত করি। জর্দা, ধূমপান, মদ্যপান, বিশেষ ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, অতিরিক্ত রোদে থাকা ইত্যাদির পাশাপাশি ভাঙা বা এলোমেলো দাঁত থেকে মুখে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত বা ঘা-কে দায়ী করা হয় ক্যান্সারের জন্য। মুখের যে কোনো ঘা, ব্যথা থাকুক আর নাই থাকুক, ১০ দিনের বেশি রয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। গবেষকগণ দীর্ঘমেয়াদী মাঢ়ি রোগের সাথে অগ্নাশয়ে ক্যান্সারের যোগসূত্র ক্ষতিয়ে দেখছেন।
অনুমোদনহীন চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে সম্ভাব্য জটিলতা :
অসতর্কতা থেকে বিডিএস (ব্যাচেলর অফ ডেন্টাল সার্জারি) ডিগ্রি ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসকের পূর্ণ জ্ঞানের অভাবে নানা সমস্যা হতে পারে। যেমন- রক্তবাহী রোগের (হেপাটাইটিস, এইডস্, টিবি) সংক্রমণ, শরীরের অন্যান্য কোনো রোগ থেকে জটিলতা, কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মুখের স্নায়ু বা রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত, গ্যাস্ট্রিক আলসার, এনাফাইলেকটিক শক।
চাইলেই কোনো সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণে কখনই ডেন্টাল চিকিৎসক হওয়া সম্ভব নয়। উপযুক্ত যাচাই বাছাই করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল ডাক্তারদের চিকিৎসা প্রদানের অনুমতি দেয় আর প্রত্যেক চিকিৎসককে রেজিস্ট্রিশন নম্বরও প্রদান করে। দেশে এখন দশ হাজারের বেশি ডেন্টাল চিকিৎসক আছেন, যার মধ্যে অনেকেরই রয়েছে নির্দিষ্ট বিষয়ে উচ্চরত ডিগ্রী। উন্নত বিশ্বে উদ্ভাবিত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন সহজেই দেশের চিকিৎসকগণের আয়ত্তে। তাই গর্ব করে বলা যেতে পারে দেশে মুখগহ্বরের চিকিৎসা এখন অনেকটাই উন্নত বিশের সমমানের।
করণীয় :
নিয়মিত ও সঠিক নিয়মে দাঁত ও মুখগহ্বর পরিষ্কার রাখতে হবে, দাঁতের গঠনানুযায়ী প্রয়োজনে ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শে মুখ পরিস্কারের সঠিক নিয়ম জেনে নিতে হবে।
মিষ্টিজাতীয় খাদ্য থেকে সরে এসে দেশীয় মৌসুমি ফলমুল, শাকসবজি, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, দুধ, দইসহ বেশি করে আঁশ জাতীয় খাদ্যে উৎসাহিত হতে হবে। শারীরিক অসুস্থতা, অর্থনৈতিক সমস্যা, চিকিৎসা পদ্ধতির জটিলতা, সময় সাপেক্ষতা ইত্যাদি সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে ছয় মাস অন্তর অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শে সারা বিশ্ব জোরালো তাগিদ দেয়।
-ডা. মো: আসফুজ্জোহা রাজ
রাজ ডেন্টাল সেন্টার
রাজ ডেন্টাল ওয়ার্ল্ড
ফোন : ০১৯১১৩৮৭২৯১
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।