২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের একটি কান। কান আমাদের শব্দ শুনতে, ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। মানবদেহের কানকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুবিধার জন্য তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ এবং অন্ত:কর্ণ। কান দিয়ে পূঁজ/পানি পড়া সাধারনত মধ্যকর্ণের রোগ। কান পাকা যেহেতু মধ্যকর্ণের সংক্রমণ, তাই এতে কানের পর্দা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে অনেক সময় বহিঃকর্ণের কিছু প্রদাহের কারনেও কানে পুঁজ/পানি হতে পারে। এই কান দিয়ে পূঁজ/পানি পড়া খুবই অপ্রীতিকর এবং যে কোন বয়সে দেখা দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রধানত শিশুদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়। আর শহরবাসীর তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে এই রোগটি বেশি দেখা যায়। এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে দারিদ্র্যতা, অপুষ্টি, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্য শিক্ষার অভাব ইত্যাদি।
কান পাকা রোগ কেন হয়?:
★ আমাদের সবারই ইউস্টেশিয়ান টিউব নামক একটা টিউব আছে যার এক মাথা থাকে মধ্য কর্ণে এবং আরেক মাথা থাকে নাকের পেছনে ন্যাজোফেরিংস নামক স্থানে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই টিউবটা থাকে খাটো, অপ্রশস্ত এবং একদম সোজাসুজি। তাই মায়েরা শিশুদেরকে বুকের দুধ অথবা বোতলের দুধ/তরল মাথার দিকটা একটু উঁচু না করে ফ্লাট/কাত অবস্থায় খাওয়ালে তখন এই দুধ/তরল কিছুটা হলেও মধ্য কর্ণে চলে যায় এই টিউব দিয়ে। পরবর্তীতে যা থেকে মধ্য কর্ণে ইনফেকশন হয়ে কান পাকা রোগ সৃষ্টি হয়।
★যেসব বাচ্চাদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে, আপার রেসপিরেটরী ট্রাক্ট ইনফেকশন বেশি হয়, টনসিলে ইনফেকশন হয়, ঘন ঘন সর্দি থেকে সাইনোসাইটিস হয়, এডিনয়েড বেশ বড় থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ইউস্টেশিয়ান টিউবের নরমাল কর্মক্ষমতা কমে গিয়ে টিউবের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। এসব কারণে প্রথম দিকে হঠাৎ করে কানে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়, জ্বর থাকে, এরপর কানের পর্দা ফুটো হয়ে পানি বেরিয়ে আসে। ঐ সময় ঠিকমতো এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেলে পর্দার ছিদ্রটি স্থায়ী হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কানে ইনফেকশন হবার কারণে কান দিয়ে পানি/পুঁজ আসে। বড়দের ক্ষেত্রেও এসব সমস্যায় দীর্ঘদিন ভূগলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
★কানে আঘাত জনিত কারণে পর্দা ছিদ্র হয়ে গেলে এবং এর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করানো হলে পরবর্তীতে ঠান্ডাজনিত কারণে সর্দি/কাশি/গলা ব্যথা হলে কানের পর্দা দুর্বল হয়ে কান দিয়ে পূঁজ/পানি আসতে পারে।
লক্ষণ :
১) কান দিয়ে পূঁজ বের হওয়া। এই তরল দুর্গন্ধযুক্ত বা দুর্গন্ধহীন হতে পারে। অনেক সময় পূঁজ রক্তমিশ্রিত থাকতে পারে। কান পাকা রোগের মধ্যে কয়েকটি ধরন আছে, যেখানে কান কিছুদিন শুকনা থাকে আবার কিছুদিন পরপর ভেজা পাকে অর্থাৎ পানি বা পুঁজ বের হয়। আবার আরেক ধরনের কান পাকা রোগ আছে, যেখানে কান কখনোই শুকায় না।
২) কানে কম শোনা ও বন্ধ বন্ধ অনুভূতি লাগা, এমনকি সারাক্ষণ অস্বস্তি বোধ হওয়া।
৩) কানে বা মাথার ভিতরে শো শো শব্দ হওয়া, মাথা ঘুরানো, ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
৪) হঠাৎ প্রদাহের ফলে অনেকের কানে তীব্র ব্যথা সহ জ্বর আসতে পারে।
চিকিৎসা :
কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে প্রচুর পরিমাণে পূঁজ পড়া সহ কান পাকার অন্যান্য লক্ষণ নিয়ে আসলে- রোগীকে সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক, কানের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ, বয়সভেদে নাকের ড্রপ এবং অ্যান্টিহিসটামিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। এবং অবশ্য পালনীয় কিছু নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়; যেমন: ডুব দিয়ে গোসল না করা, সাতাঁর না কাটা। গোসলের সময় ইয়ারপ্লাগ অথবা নারিকেল তেল ভেজা তুলা কানে দিয়ে গোসল করা। ঠান্ডা পরিহার করা, ফ্রিজের পানি, আইসক্রিম না খাওয়া। অযথা কান খোচানো বা পরিষ্কার না করা। কানের ভিতর মোরগের পাখনা, কঁচুর ডগা, ম্যাচের কাটি, কলমের মুখ ইত্যাদি ঢুকিয়ে পরিষ্কার করা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়।
এরপর রোগীকে দুই সপ্তাহ পরে আসতে বলা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এই চিকিৎসা দ্বারা। সেইসঙ্গে কানের পর্দার ছিদ্রও বন্ধ হয়ে যায়। যদি পর্দার ছিদ্রটা বড় হয় এবং যদি বারবার পুঁজ পড়ে, তাহলে কিন্তু ওষুধে কাজ হয় না অনেক সময়। সেই ক্ষেত্রে আমরা ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করি। ওষুধ চালিয়ে যাই। যদি ৬ মাসের মধ্যে তার পর্দাটা জোড়া না লাগে, কানে কম শোনে, তাহলে আমরা একটা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাইক্রো সার্জারি করে পর্দা জোড়া লাগিয়ে দেই। তবে সেক্ষেত্রে তার আগেই কান শুকনো থাকতে হবে। তবে মারাত্মক ধরনের কান পাকা রোগে অপারেশনই হচ্ছে প্রকৃত চিকিত্সা। অনেক ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য মারাত্মক ধরণের কান পাকা রোগের অপারেশন করতে হয়।
কানের ইনফেকশন শুরু হলে প্রথম দিকে যদি চিকিৎসা করানো হয় তাহলে কান পাকা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু কানের ভেতর কোথায় কি হয়ে এই কান পাকাটা হয়েছে সেটা না জেনে যদি কেউ অন্ধভাবে চিকিৎসা করতে থাকে তাহলে সেটার ফল ভালো হবে না। তাই সচেতন থাকি-সুস্থ্য থাকি।
সময়মত চিকিৎসা না করালে কি হতে পারে:- কানের পর্দায় স্থায়ী ছিদ্র হয়ে থাকবে, কানে কম শুনতে পারে ও মাস্টয়ডাইটিস নামক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয়।
ডাঃ মোঃ আব্দুল হাফিজ শাফী
নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন ,
রেজিস্ট্রার, নাক-কান-গলা বিভাগ,
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।