বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বরষা মওসুম শুরু হতে না হতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে টাঙ্গাইলের যমুনা নদী ও অভ্যন্তরীণ নদী গুলোর তীরবর্তী এলাকায়। ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী তীরের অধিবাসীরা। গেলবারের বন্যায় নদী গর্ভে সর্বস্ব হারানো অসংখ্য পরিবার সাহায্য না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং পাহাড়ি ঢলে ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে যমুনা, ধলেশ্বরী, লৌহজং, ঝিনাই, এলংজানী, লাঙ্গলিয়া নদীসহ অভ্যন্তরীণ নদী গুলোর পানি। ফলে নদী তীরের বসতভিটাসহ ধান, পাট ও বাদাম ক্ষেত নদীতে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধ কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের কোন কার্যকর ভূমিকা না থাকায় এবং ক্ষতিগ্রস্থ্যদের কোন সরকারি সাহায্য না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ভুক্তভোগীরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা দিলেন দায়িত্ব এড়ানো জবাব। গত বুধবার টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতি ও ভূঞাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গেলবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং ভাঙনের হুমকিতে থাকা পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত বছর সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দেয় কালিহাতি ও ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী এলাকায়। কালিহাতীর বেলটিয়া এলাকায় ভাঙনের ফলে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর গাইড বাঁধ হুমকির মুখে পড়ে। সরেজমিন গত বুধবার ওইসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন রোধে তেমন কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ভাঙন কবলিত স্থানের পাশে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন ও মাটি কাটার বেকু দেখা যায়। পাশে বিশাল মাটির স্তূপ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল স্থানীয় হযরত চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য আব্দুল হাই, সালাম চাকলাদারসহ সরকার দলীয় প্রভাবশালী লোকজন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে যমুনা নদীর বালি, মাটির ব্যবসা করছে। এছাড়াও কালিহাতীর চাড়াণ-লক্ষ্মীবাসা সড়কের রামেশ্বর কামার্থী এলাকায় একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গত বছর ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্থ্য হয় শত শত একর ফসল। এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় একাধিকবার বাঁধটি মেরামত করা হলেও এ বছর আবারও ভেঙে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে।
কালিহাতীর গরিলাবাড়ী গ্রামের মো. আশরাফুল আলম বলেন, গত বছর এই এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। শত শত ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে চলে যায়। হুমকির মুখে পড়ে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর গাইড বাধ। ওই সময় বিবিএ কর্তৃপক্ষ কিছু জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালালেও তেমন কোন কাজে আসেনি। এবছরও ভাঙন রোধে আগাম কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বরষার শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বেলটিয়া গ্রামের সূর্যবানু বলেন, গত বছর যমুনা নদীতে ঘর-বাড়ি সবই চলে গেছে। এখন এক ছেলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছি। এ বছর এই বসতভিটাও চলে যাবে মনে হচ্ছে। সাহায্য হিসেবে এই অসহায় পরিবারকে এক বস্তা চাল আর কিছু টাকা দিয়েছিল একটি সংগঠন।
আলীপুর গ্রামের সত্তুরোর্ধ্ব আব্দুল মান্নান বলেন, ভাঙনের কবলে পড়ে এ পর্যন্ত এগারবার ঘর-বাড়ি সরাতে হয়েছে। তেত্রিশ বিঘার পুরো কৃষি জমি এখন যমুনার গর্ভে। এই ভাঙনের বিভীষিকা থেকে পরিত্রাণ নেই।
অপরদিকে ভূঞাপুরের অর্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী, নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা বেশি ভাঙন ও বন্যা কবলিত হয়। গত বছর টাঙ্গাইল-তারাকান্দি সড়কের পিংনা এলাকায় সড়কটি ধ্বসে গেলে সার কারখানার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে সার সরবরাহ বিঘিœত হয়। ওই সময় সেনাবাহিনী দিয়ে বাঁধটি পূণঃ নির্মাণ করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এ বছরও ওই সড়কের কয়েকটি স্থান নদীর তীরে থাকায় যে কোন সময় ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এসব সমস্যা মোকাবেলায় প্রশাসনিকভাবে তেমন কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করলেন এলাকাবাসী।
এছাড়াও টাঙ্গাইল সদরের কাতুলী, হুগড়া, মগড়া এবং নাগরপুর উপজেলার শাহজানী, তেবাড়িয়া, ভাদ্রা ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রামের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
মুঠোফোনে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজ বললেন দায়িত্ব এড়ানো কথা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর গাইড বাঁধটি মেরামতের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটি (বিবিএ) কর্তৃপক্ষের। ঝুঁকিপূর্ণ ও ভাঙন কবলিত স্থানগুলোতে ভাঙন রোধে কোন আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অফিসে আসেন সাক্ষাতে কথা বলা যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।