Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের আধিপত্যবাদী পরিকল্পনায় সার্কের সম্ভাবনা আটকে রয়েছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৮, ৮:৪৬ পিএম

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলকে বদলে দেয়ার সম্ভাবনা সার্কের রয়েছে। পারস্পরিক অনাস্থা এবং অসহযোগিতার কারণে এই সম্ভাবনাকে নষ্ট হতে দেয়া ঠিক হবে না। সার্কের উচিত একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মতো সক্রিয় থাকা যেখানে কার্যকরী শক্তি হবে মূলনীতি, কৌশলগত পদক্ষেপ, এবং আইনের শাসনের মতো বিষয়গুলো। সোজা কথায় ভারতের আধিপত্যবাদী পরিকল্পনা আর উদাসীনতায় আটকে রয়েছে সার্কের সম্ভাবনা। প্রধান যে সমস্যায় ভুগছে সার্ক, সেটা হলো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আস্থার সঙ্কট। রাজনৈতিক মতপার্থক্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের জন্য কাজ করার পথে বাধা তৈরি করছে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য এবং সহিংসতা ছাড়াও অর্থনৈতিক বিষয়টিও এখানে সমস্যা তৈরি করেছে। সার্কের প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতার কারণ লুকিয়ে আছে ভারতের আধিপত্যবাদী পরিকল্পনা এবং পাকিস্তান ও এ অঞ্চলের অন্যান্য ছোট দেশগুলোর প্রতি তাদের উদাসীন আচরণের মধ্যে। অর্থনৈতিক সমন্বয় এবং সহযোগিতা করার জন্য যে অর্থনৈতিক শক্তি দরকার, ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের সেটা এখনও অর্জন হয়নি। সার্কে ভারত পাকিস্তান ইস্যু সবসময় প্রাধান্য বিস্তার করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সার্কভুক্ত দেশগুলো এমনকি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীও হতে পারেনি। তাদের নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। সার্কের কেন্দ্রে রয়েছে ভারত (ভৌগলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রেও রয়েছে ভারত)। স্থল ও নৌসীমা মিলিয়ে ভারতের সাথে সার্কভুক্ত সব দেশের সীমানা রয়েছে। ভারত আর সার্কভুক্ত দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তাই এই সম্পর্কের শেষ কথা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সার্ক যে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না, এর জন্য মূলত দায়ী করা হয় ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধকে। এই সব অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক বিবাদের সমাধান না হওয়ার কারণেই আঞ্চলিক জোটটি থেকে উপকার নিতে পারছে না সদস্য দেশগুলো। যদিও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের ঘাটতি, অবকাঠামো সঙ্কট, টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনসহ অভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এই জোটের কথা ভাবা হয়েছিল, কিন্তু সার্ক বাস্তবে কার্যকর হতে পারেনি এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাফল্যের পেছেন ফ্রান্স ও জার্মানির বড় ভূমিকা রয়েছে, যারা বাস্তবে পরস্পরের ঘোরতর শত্রæ। কিন্তু সার্কের ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের শত্রæতা ভুলে এগিয়ে আসতে পারেনি। সার্ক সনদে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ রাখা হয়নি কারণ এর ফলে সার্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। শুল্ক ও অশুল্ক বাধাও সার্কের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে দেয়নি। বিশেষ করে পাকিস্তান ভারতকে এমএফএন স্ট্যাটাস দেয়নি। তাই তাদের অনেক পণ্য নেগেটিভ তালিকায় পড়ে গেছে। শ্রীলংকার তামিল ইস্যু, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংঘাত, নেপালের অস্থিতিশীল ধারা, কাশ্মীর ইস্যু এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ আঞ্চলিক সমস্যাগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে জঙ্গিবাদ, যেগুলো আঞ্চলিক উন্নয়নের গলা চিপে ধরেছে। অর্থায়ন, গবেষণা এবং প্রযুক্তির অভাবের কারণে বাণিজ্যের বিকাশ এবং মনিটরিং ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইইউ এবং আসিয়ানসহ আঞ্চলিক ফোরামগুলোর সাথে মুক্ত ও সুবিধামূলক বাণিজ্য ব্যবস্থাপনারও চেষ্টা করতে পারে সার্ক। তাছাড়া সার্কের সনদে সাধারণ মানুষের পর্যায়ে পৌঁছানোর যে নীতির ঘোষণা রয়েছে, সেটির প্রতিও মনোযোগী থাকা উচিত তাদের। দক্ষিণ এশিয়ান মানুষের শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধ কমিয়ে আনার জন্য আন্তরিক এবং টেকসই পদক্ষেপ নিলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সার্ক শুধু আস্থা তৈরির ফোরাম নয়, বরং মতবিরোধ কমিয়ে আনার জন্যও এটা জরুরি। একই সাথে সার্কের সনদ বাস্তবায়নের জন্য এটা একটা আন্তরিক পরিবেশও তৈরি করতে পারে। অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের দিকে সার্কের মনোযোগ দেয়া উচিত। এছাড়া বিজ্ঞান গবেষণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিনিময় কর্মসূচি, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানো যেতে পারে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সেটা ভূমিকা রাখবে। সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সার্ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ