পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগনের ভোটে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও সরকারী কাজের মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। মূলত জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধার উপরই তাদের সেবার মান ও সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করে। ঔপনিবেশিক আমলে গড়ে ওঠা আমাদের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কখনো স্বাধীন দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উপরন্তু বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে গড়ে ওঠা আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্রমশ রাজনৈতিক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা প্রভাবের কারণে অবক্ষয়ের শিকার হয়ে শৃঙ্খলা, মান ও দক্ষতা খুইয়েছে। বর্তমানে প্রশাসনিক ক্যাডারে মেধা ও দক্ষতার অভাব এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের কেউ কেউ এ বিষয়ে এখন উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং বেসরকারী শিল্পদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির গতিশীলতা বজায় থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষনা সংস্থা এবং সিপিডিসহ দেশি-বিদেশী সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যবসায়িক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ইত্যাদি সূচকে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। উপযুক্ত মেধা, মননশীলতা,কর্মদক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের নীতিনির্ধারকরা। জনপ্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দফতরের অদক্ষতা ও ব্যর্থতার দায়ভার চুড়ান্ত বিচারে সরকারের উপর বর্তায়।
সরকারের প্রতিটি বিভাগেই গতিমন্থরতা, অদক্ষতা ও মেধাহীনতার বহি:প্রকাশ প্রকটভাবে লক্ষ্যনীয়। অর্থবছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে কোন গতি আসেনা। দু’দিন আগে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের আর মাত্র দু’ মাস বাকি থাকলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) প্রায় অর্ধেক এখনো বাকি রয়ে গেছে। এটি শুধুমাত্র টাকা খরচের হিসাব। দেড়লক্ষাধিক কোটি টাকার এডিপি’র মধ্যে ১০ মাসে খরচ হয়েছে ৮২ হাজার কোটি টাকা। শেষ দুই মাসে প্রকল্প বাস্তবায়নে অবশিষ্ট টাকা খরচের প্রতিযোগিতায় নেমে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয়, দুর্নীতি ও ক্ষতি অবধারিত, এবং এটা প্রতিবছরই হচ্ছে শুধুমাত্র অসৎ, মেধাহীন ও অদক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কারণে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অসৎ, অদক্ষ ও মেধাহীনদের নিয়োগ ও পদায়ণের পেছনে রয়েছে সরকারের নীতি নির্ধারকদের রাজনৈতিক পক্ষপাত। যে দলই ক্ষমতায় আসে সে দলই প্রশাসনের মেধাবী, দক্ষ, অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে দলীয় আনুগত্যের নিরিখে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ ও অদক্ষদের নিয়োগ ও পদন্নোতি দিয়ে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও গতিশীলতাকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে। এমনকি বিশেষ জনগুরুত্বপূর্ণ ও সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের ফাইলও সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে উপস্থাপন ও নিস্পত্তি করতে না পারায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন ব্যহত হচ্ছে, একইভাবে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশের মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেনা। রাজনৈতিক আনুগত্যের নিরীখে প্রশাসনে নিয়োগ ও পদায়ণ সরকারের প্রকল্প এবং দেশের উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রায় এক দশক ধরে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকা সত্বেও জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা, গতিশীলতা আসেনি। সরকারের সংশ্লিষ্টদের জন্য এটি দু:খজনক ব্যর্থতা। অভিজ্ঞ সাবেক আমলাদের অনেকে মনে করেন, ছিয়ানব্বই সালে সরকারবিরোধি আন্দোলনে প্রশাসনের একশ্রেণীর আমলার প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান এবং জনতার মঞ্চ গঠনের মধ্য দিয়ে জনপ্রশাসনের রাজনীতিকরণ প্রকট হয়ে উঠে। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক আমলা এইচটি ইমাম জনপ্রশাসন দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তারপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নিয়োগ বরং অবনতিই হয়েছে। নিয়োগ ও পদায়ণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব সর্বব্যাপী রূপ নিয়েছে। জনপ্রশাসনে বিরোধি দলের মতাদর্শী এবং নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের অনেকেই বছরের পর বছর ধরে ওএসডি, পদন্নোতিবঞ্চিত অথবা অগুরুত্বপূর্ণ পদে পড়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। মেধাবীদের বঞ্চিত করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণেও প্রশাসনে এক ধরনের হতাশাজনিত গতিহীনতা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে দেশে-বিদেশে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও এসব প্রশিক্ষণ যে তেমন কোন কাজে আসছেনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং জনপ্রশাসনের বর্তমান অবস্থা থেকে তা বোঝা যায়। শুধু জনপ্রশাসনই নয়, পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ এবং ক‚টনৈতিক দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদেরও অদক্ষতা ও ব্যর্থতার ছাপ নানা ক্ষেত্রে স্পষ্ট। শুধু উচ্চাভিলাষি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবেনা, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ধরনের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও গতিশীলতা প্রয়োজন তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করার স্বার্থে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের রাজনীতি নিরপেক্ষ, ন্যায়ানুগ ও পেশাদার ভ‚মিকা প্রয়োজন। সকল ক্ষেত্রে মেধাবী ও যোগ্যদের প্রাধান্য দিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক পক্ষপাত দূর করার স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।