পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকারী পদক্ষেপ নানাভাবে বিতর্কিতও হচ্ছে। বিশেষত: বারংবার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, বছরের পর বছর ধরে এডহকভিত্তিক রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে অনেক বেশী দামে বিদ্যুত কেনার বোঝা জনগণের উপর চাপানোর মত বিষয়গুলো নি:সন্দেহে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা আপাতত পুরণ হলেও গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন এবং নতুন গ্যাসক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ বৃদ্ধির তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। গৃহস্থালীতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় আবাসন খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সুযোগে সরকারী-বেসরকারী এলপি গ্যাসের ব্যবসা রমরমা বাজার হয়ে উঠেছে। নিতান্ত বাধ্য হয়েই লাখ লাখ মানুষ এখন গৃহস্থালীতে এলএনজি গ্যাস সিলিন্ডারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। দেশে উত্তোলিত গ্যাসের মধ্যে এলপিজি এবং আবাসন খাতে গ্যাসের ব্যবহারের হার শতকরা ১০ ভাগের বেশী নয়। তবে এ খাতে রাজস্ব আদায়ের হার অনেক বেশী হলেও আবাসিক এবং এলপিজি খাতে মানামাত্রিক মুনাফাবাজি ও প্রতারনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এদিকে অস্বাভাবিক উচ্চ হারে এলপিজি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ, অন্যদিকে সিলিন্ডারে নির্দ্দিষ্ট ওজনের এলপি গ্যাসের সাথে পানি ভরে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকায় এলপিজি গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে এলপিজি গ্যাসের ব্যবসা বেসরকারীভাবে উন্মক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাজারে যে সব এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে তার ওজন, গুনগত মান এবং মূল্য নির্ধারণে কোন রকম কর্তৃপক্ষীয় নজরদারী না থাকায় সংশ্লিষ্ট উৎপাদক, সরবরাহকারী এবং বিক্রেতারা যথেচ্ছ মনোপলি চালিয়ে যাচ্ছে। একেকটি ১২ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার ক্ষেত্র বিশেষে ২ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত পানিতে ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে। বড় সিলিন্ডারেও গ্যাসের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় পানি ভরে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে কোম্পানীর এজেন্টরা। এলপিজি ডিলাররা মূল্য নির্ধারণেও কোন একক গাইডলাইন মানছেনা। শুধু চট্টগ্রাম অঞ্চলেই নয়, সারাদেশে প্রায় অভিন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ রান্নাবান্নার কাজে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য ৮০০ টাকা থেকে ১০১৫ টাকা বা তার বেশী। যেখানে ৭০০ টাকা দিয়ে পাইপলাইনের গ্রাহকরা আনলিমিটেড গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে, সেখানে হাজার টাকা খরচ করে কেনা ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারে দুই সপ্তাহও পার করতে পারছেনা গ্রাহকরা। গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার পর সিলিন্ডারে ৩ থেকে ৫ কেজি পানি অবশিষ্ট থাকলেও ক্রেতারা টাকা ফেরত পাচ্ছেনা।
দেশীয় গ্যাসের মজুদ কমে আসার প্রেক্ষাপটে আমাদের গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতেই হবে। অপচয় রোধে সিলিন্ডারে এলপি গ্যাসের সরবরাহ একটি উত্তম উপায় হিসেবে বিবেচিত হলেও এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবসায়িক মনোপলি ও প্রতারনারোধে কার্যকর উদ্যোগ ও নজরদারী প্রয়োজন। আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীরা ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রতারিত হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেনা। আগামী সপ্তাহের শেষেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। সঙ্গতকারণেই এ মাসে এলপি গ্যাসের চাহিদা ও বেচাবিক্রিও বেশী হবে। অন্যান্য পণ্যমূল্যের মত রমজান মাসে যেন এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কোন সিন্ডিকেটেড কারসাজি না হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। শুধু রমজান মাসেই নয়, এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের মান, গ্যাসের বদলে পানি এবং মূল্য নির্ধারনে ব্যবসায়ীদের যথেচ্ছার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সরকারী উদ্যোগ প্রয়োজন। ভেজাল খাদ্য ও ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রমের পাশাপাশি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের ওজন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পানি বা ভেজাল তদারকির বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। দেশীয় সম্পদ গ্যাস ব্যবহারে সাধারণ মানুষের অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বৈষম্য ও অনৈতিক মুনাফাবাজির লাগাম টানতে হবে। গ্যাস সরবরাহে অপচয়, দুর্নীতি, এলপি গ্যাসে প্রতারনা ও অতিমাত্রায় মুনাফাবাজি রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের সম্ভাব্য গ্যাসক্ষেত্র গুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানীকৃত এলএনজির উপর নির্ভরশীলতা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। অপচয়-দুর্নীতি এবং প্রতারনার বিরুদ্ধে নজরদারী ও জবাবদিহিতা বাড়িয়ে গ্রাহক-ভোক্তাদের বাড়তি ব্যয় থেকে রক্ষা করা অসম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।