পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আষাঢ়ে পাহাড় ধসে। বৈশাখেই আষাঢ়ে বৃষ্টি। তাই এবার আগে ভাগেই পাহাড় ধসের আভাস পাচ্ছি। ফি বছরই পাবত্য জেলাগুলোতে বৃষ্টি বাদলার দিনে পাহাড় ধসে মানুষ মরে। এদেশে এটা যেন চিরন্তন সত্য। প্রতি বছরের অভিজ্ঞতার আলোকেই দৃঢ়ভাবে এমন মন্তব্য আমার। এবার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির এলাকায় ছেঁটে কেঁটে একাকার করা হয়েছে! পাহাড়ের উপর যে ধকল গেছে, তাতে প্রকৃতি বড় ধরনের প্রতিশোধ নেবে বলেই মনে হচ্ছে। যাই হক, মানুষ মারা যাক এটা কারই কাম্য নয়। পাহাড় না ধসুক; মানুষ না মরুক এটাই কামনা করি।
আমরা বরাবরই দেখে আসছি, পাহাড় ধসে মানুষ মরলে, তদন্ত কমিটি হয়, তদন্ত কমিটির সুপারিশ পেশ হয়, কিন্তু তা কখনই আর বাস্তবায়ন হয় না। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর ৩৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। কিন্তু গত ১১ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ সুনির্দিষ্ট নীতিমালার বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছায় পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু এ সহজ কাজটা কে করবে? পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের কম খরচে আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রথম থেকেই উঠে এসেছে। এরপরও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। ছিন্নমূল মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় তারা কম খরচে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই অবৈধভাবে এসব ঘর তৈরি করছেন। যেহেতু এটার সাথে একটি গভীর আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া জড়িত, সেজন্য চাইলেও তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটলেই নীতি নির্ধারক পর্যায়ে ক’দিন হম্বিতম্বি হয়। পরে অনেক ক্ষেত্রেই তা স্তিমিত হয়ে যায়। এজন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং সেই নীতিমালা বাস্তবায়নে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে আসা উচিত। পার্বত্য জেলার পাহাড়গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের বর্ষা মৌসুমের আগে উচ্ছেদ বা সরিয়ে নিতে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিলেও তার বাস্তবায়ন কতটা হবে তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান রয়েছে। পাহাড়ের অবৈধ বসতি কেন সরে না? নানা কারণ আছে। আইন প্রয়োগ না হওয়া, প্রশাসনের গাফিলতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অন্যতম কারন। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর সবাই নড়ে চড়ে বসেছিলো। তখন মনে হয়েছে আইনের প্রয়োগ হবে। কষ্টের কথা’ ঐ ঘটনার পর তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ দিয়েছে তা ১১ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ পর বিভিন্ন সময় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বছর ঘটছে। টনক নড়ছে না। যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে তারা ছিন্নমূল ও অসহায়। জীবিকার তাগিদে কম খরচে ওইসব ঘরে বসবাস করছে। আবার তাদেরকে নিয়ে একটি পক্ষ ব্যবসা করছে। সরকারি পাহাড়সহ অন্য পাহাড়গুলোতে মাস্তানি বা প্রভাব খাটিয়ে প্রথমে তারা নিজেরা টাকা খরচ করে ঘর বানিয়ে ওইসব ঘরে ছিন্নমূল মানুষদের নিকট ভাড়া দিচ্ছে। প্রশাসন জানে এসব। চোখের সামনেই তা ঘটে। অজ্ঞাত কারনে তাঁরা চুপ থাকে। আর এই নীরবতাই মানুষের জীবন কেড়ে নিতে সহায়তা করে।
সুপারিশ তো আছে, পাহাড় দখলমুক্ত করে বনায়ন করা, ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের স্থায়ী পুনর্বাসন করা, পাহাড় কাটা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া এবং পাহাড় ইজারা ও দখল বন্ধ করা। এর কোনটাই কি হয়েছে? এছাড়া পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, মামলা দায়ের, নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ, বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ, পাহাড়ের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা তৈরির অনুমোদন না দেওয়া, ৫ কিলোমিটারের মধ্যে হাউজিং প্রকল্প না করা। এসব সুপারিশের কোনটা বাস্তবায়ন করেছে প্রশাসন? এসব বাস্তব সম্মত সুপারিশ বাস্তবায়ন না করেই বারবার লোক দেখানো অস্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এবারও তাই দেখছি। জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় পাহাড় ধসের আশংকার খবর ছাপছে। কে শোনে কার কথা। পাহাড়ে অবৈধ বসতি আছেই। পাহাড় হস্তারকরা পাহাড় কাঁটছেই, ছাঁটছেই। তা হলে কেন পাহাড় ধসবে না? আমাদের পাহাড়গুলো যে কোন মুল্যে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে প্রকৃতির ভারসম্য নষ্ট হবে। প্রকৃতি নিষ্ঠুর আচরন করবে। পাহাড় রক্ষা এবং ঝুঁকিতে থাকা মানুষের বিষয়ে তাহলে করণীয় কী! স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে না পারলে কাঙ্খিত ফল আসবে বলে মনে হয় না। তবে এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সরকারকে সফলভাবে তা সম্পন্ন করতে হবে।
প্রতি বছরই লাশের ভারে পাহাড় কাঁদে। নগরীতে ২০০৭ সালের ১১ জুলাই শিশু, নারীসহ ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরের বছর লালখান বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৯ ও ২০১০ সালে মারা যান ১৫ জন। ২০১১ সালের জুলাই মাসে টাইগারপাস এলাকায় পাহাড় ধসে ১৭ জনের মুত্যু হয়। একই বছর আগস্টে বিশ্বব্যাংক কলোনিতে ২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৩ সালে মারা যায় ৫ জন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ থানাধীন আমিন কলোনিতে পাহাড় ধসে তিনজনের মৃত্যু হয়। এর দুই মাস পর ২১ সেপ্টেম্বর একই থানাধীন মাঝিরঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মা মেয়ের মৃত্যু ঘটে। ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই মারা যায় ৫ শিশুসহ ৬ জন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে মারা যায় আরো ১৭ জন। মানুষ মরে কিন্তু সে কান্না প্রশাসন শুনতে পায় না কখনো। পেলে পাহাড়ের মানুষ হয়তো নিরাপদ থাকতো।
এ যাবৎ পাহাড় ধস এবং প্রবল বর্ষণে পার্বত্যাঞ্চলে যে মৃত্যুর মিছিল আমরা দেখেছি তার পেছনে প্রশাসনিক গাফিলতিই মুখ্য বলে মনে হয়। সেখানে সতর্কবার্তা হিসেবে মাইকিং করলেও ভুক্তভোগীদের বিকল্প কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় এ দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। অবশ্য এ বছর পাহাড়ে বসবাসরতদের জন্য স্বল্প হলেও বিকল্প বসবাসের অস্থায়ি ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। এ জন্য তাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে থাকার ব্যবস্থা করলেই হবে না থাকানোর ব্যবস্থাও করতে হবে। পাহাড়ের পাদদদেশে বসবাসকারীদের ৫ ভাগও এখনও নিরাপদে সরে আসেনি। এনিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দিন হম্বিতম্বি করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। পাহাড়কে নন্যতমও নিরাপদ করা যায়নি এখনও।
নিয়তির জালেই যেন পাহাড়ের মানুষের জীবন বন্দি। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে মৃত্যুকূপ থেকে পাহাড়ের মানুষকে রক্ষা করা হবে, এটাই প্রত্যাশা। প্রতি বছরই আমরা চাপা লাশ দেখে আহ! উহ! করছি তো করছিই। সেই কান্নার আওয়াজ যেন কিছুতেই ঢুকছে না দায়িত্বশীলদের কর্ণকুহরে। প্রতিরোধযোগ্য হলেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এজন্য অশিক্ষিত-অসচেতন মানুষ যত না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তাই উপহার হিসেবে লাশের পর লাশ পাচ্ছি আমরা। পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় চাপা পড়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা বেশ পুরনো। যারা লেখালিখি করেন তারা তাদের লিখনির মাধ্যমে সতর্ক করে থাকেন। হরদম হচ্ছে লেখালেখি। গুরুত্বের সঙ্গে তা ছাপছেও জাতীয় এবং আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো। কে শোনে কার কথা! তাই যা হওয়ার তাই হয়। সৃষ্টিকর্তা খোদ দৃষ্টি দিলে হয়তো পাহাড় চাপা পড়ে আর মানুষ প্রাণ হারাবে না। গত কয়েক বছরে পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড়ের নিচে দখল আর বসতি এত বেড়েছে যে, এ নিয়ে আর শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। পাহাড়ের নিচের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। তারা এখনো আছে বেশ বহালতবিয়তে।
পাহাড়ি ভূমিধসের পর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ, বিশেষজ্ঞদের নানা বক্তব্য ও উদ্যোগ লক্ষণীয়। বিশেষ করে সরকারের নানা উদ্যোগের পর সংশ্লিষ্ট অনেকেই আশ্বস্ত হয় এই ভেবে’ ভবিষ্যতে এমন করুণ পরিণতি আর হবে না। এসব উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম ছিল একটি টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে পাহাড় ধসের কারণ ও প্রতিকারের বিষয়ে মতামত গ্রহণ এবং সার্বক্ষনিক তদারকি করা। সেই সঙ্গে অনিরাপদ বসতি সরিয়ে ফেলা। ওই বিষয়টি নিয়ে আমারও কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। আমরা সুস্পষ্ট মতামত দিয়েছিলাম। অন্যদিকে সরকার গঠিত এক কমিটি ৫ বছর আগে পাহাড়ি ভূমিধসের সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখসহ সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা পেশও করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য’ এর অধিকাংশই মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি জরিপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করার সুপারিশ ছিল, যা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তেমনিভাবে বাস্তবায়িত হয়নি পাহাড়ের পাদদেশে বিপদসংকুল অবস্থায় বসবাসকারী বস্তিবাসীদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসনের কর্মসূচি। বাস্তবায়িত হয়নি পাহাড় কাটার আশঙ্কা কিংবা বন উজাড়ের ঘটনা। পাহাড় হন্তারকদের পাহাড় কাটা থেকে বিরত করা যায়নি। অন্যদিকে প্রশাসন, সিটি করপোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর লোভাতুর হস্ত গুটিয়ে না নেয়ায় অশিক্ষিত এ জনগোষ্ঠী টুপাইস দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস অব্যাহত রাখে।
এখনই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা না হলে পাহাড়ের দুর্ঘটনা অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পত্রিকান্তে পড়েছি’ চট্টগ্রাম নগরীর মতিঝর্ণার জিলাপির পাহাড়, টাংকির পাহাড়, গণপূর্ত অধিদফতরের পাহাড়, বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বস্তি। উত্তর দিকে টাঙ্কির পাহাড়, একে খানের পাহাড় হয়ে দক্ষিণ দিকে জিলাপির পাহাড়, বাটালি পাহাড় হয়ে সোজা পশ্চিম দিকে টাইগার পাস রেলওয়ে কলোনি পর্যন্ত প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বস্তিটি ছড়িয়ে আছে। মতিঝর্ণার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বাঘঘোনা এলাকার মুছার পাহাড়। প্রায় ৯০ ফুট উঁচু পাহাড়টির পাদদেশে বসতি গড়ে উঠেছে। মুছার পাহাড় ছাড়াও ফয়’স লেকে কনকর্ড পুনর্বাসনের নামে গড়ে তুলছে মৃত্যু উপত্যকা। পাহাড়গুলোর মধ্যখানে মৃত্যু ও ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ১০ হাজার লোক বাস করছে। অতিবর্ষণে যে কোন সময় এ ধরনের পাহাড় ধসে মানুষের জীবন্ত কবর হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও সিটি করপোরেশন বা সিডিএ বস্তিগুলো উচ্ছেদে তৎপর নয়। ফয়’স লেক ছাড়াও কুসুমবাগ আবাসিক এলাকা, দক্ষিণ পাহাড়তলির সেকান্দরপাড়া, কাইচ্যাঘোনা, লেবুবাগান প্রভৃতি এলাকায় আরও প্রায় হাজারো মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। ধারণা করা হচ্ছে, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ এ স্থানগুলোতে প্রায় অর্ধলাখ লোক বাস করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের গবেষণায় দেখা যায়, মহানগরীর ৬৫টি স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসতি রয়েছে। এসব স্থানে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড় ধস ছাড়াও ভূমিকম্পেও ধসে পড়তে পারে। পাহাড় কাটার ফলেই প্রতি বছর পাহাড় ধসে মানুষ মারা যাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও কতিপয় মাস্তান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় পাহাড়ের পাদদেশের জায়গা দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও নিম্নআয়ের মানুষ বসবাস করায় মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে পাহাড় ধসে মৃত্যু ঠেকাতে ১৬ দফা সুপারিশ দেয়া হয়েছে। এসব সুপারিশ অনুসরণ করা হলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বরাবরই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেয়া হবে বলে হম্বিতম্বি করে। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। সিটি করপোরেশনের লোকজন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে নীরব থাকছে বলে এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। ১৬ দফা সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোথ পাহাড়ের মালিক (রেলওয়ে, ওয়াসা, গণপূর্ত) লিজ দেয়ার বিভিন্ন শর্ত খতিয়ে দেখবে এবং শর্ত না মানা হলে তা বাস্তবায়ন করবে। রেলওয়ে, গণপূর্ত ও ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বির”দ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
একের পর এক পাহাড় চাপা পড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় পাহাড় ব্যবস্থাপনায় আমাদের অক্ষমতাকেই প্রকাশ করছে। বিগত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজারসহ অন্যান্য পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসে প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর আমরা পত্রিকা মারফত জেনেছি। ফি বছর ধরে ভয়াবহ নিশ্চিত দুর্ঘটনায় এমন করুণ মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যায় না। এর আগে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়েছিল। এ টিম মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাহাড়ি ভূমিধসের আশঙ্কার ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কিন্তু সে টিমের হদিস আছে কি? তবে এসব সুপারিশের অধিকাংশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ব্যর্থ হলেও পাহাড়ি ভূমিধসে চাপাপড়া লাশ উদ্ধার কিংবা লাশের মিছিলে ছুটে গিয়ে সরকারি দায়িত্বশীলদের অতিমাত্রায় লম্ফঝম্ফ ও প্রতিশ্রুতির কোন অন্ত থাকে না। বিষয়টি এখন অনেকটা হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই এখন সময় এসেছে প্রতিশ্রুতি ও লম্ফঝম্ফ বন্ধ করে কিছু কাজ করে দেখানোর। দয়া করে নিরাপদে পাহাড়ি বস্তিবাসীদের জীবন রক্ষা করুন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করুন; এ ধরনের দায়িত্বহীনতার কারণে মৃত্যুর দায়-দায়িত্ব আপনাদের ওপরেই বর্তায়। আপনারা এসব জানমাল রক্ষায় আর দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেবেন না। পাহাড়ে বসবাসকারী অসচেতন অশিক্ষিত মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আপনারাই রক্ষা করতে পারেন। আর তা করবেন এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিষ্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।