Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হালদায় রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দক্ষিণ এশিয়ায় মিঠাপানির মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে। এ মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ বা কার্পজাতীয় মাছ। এসব মাছ বিগত দশ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার ডিম ছেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলেরা প্রায় ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে জেলেদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। সংগৃহীত এ ডিম থেকে রেণু ও পোনা উৎপাদন করে সারা দেশে পুকুর ও জলাশয়ে চাষ হবে এবং এতে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ আহরিত হবে। এবার রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রকৃতি অনুকূলে থাকার পাশাপাশি জনসচেতনতা, দূষণ রোধ এবং সরকারের কার্যকর উদ্যোগ কাজে দিয়েছে। এ ব্যাপারে হালদা ও কর্ণফুলী নদী বিশেষজ্ঞ, হালদা নদী রক্ষা কামিটির সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেছেন, এবার মা মাছ যে হারে ডিম ছেড়েছে তা বিগত দশ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। তিনি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, ২০১৭ সালে ডিম সংগ্রহ হয়েছিল মাত্র ১৬৮০ কেজি, অন্যদিকে ২০১৬ সালে হয়েছিল ৭৩৫ কেজি। এবারের সংগৃহীত ডিম থেকে ৩৭৮ কেজি রেণু তৈরি হবে এবং প্রতি কেজি রেণু থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ পোনা হবে। পোনার মূল্য হবে প্রায় চার কোটি টাকা। এই পোনা দেশের পুকুর, দিঘী ও জলাশয়ে চাষের জন্য ছড়িয়ে পড়বে। সেই পোনা থেকেই রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ মাছ উৎপাদিত হবে। অর্থনীতিতে যুক্ত হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। বলা বাহুল্য, এবার হালদায় মা মাছ রেকর্ড পরিমাণ যে ডিম ছেড়েছে, তা আল্লাহর রহমত।
বিশ্বে মিঠাপানির মাছ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বলা যায়, দেশের চাহিদা মিটিয়ে মাছ রপ্তানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে উঠছে। পোশাক শিল্প, চামড়া শিল্প, ওষুধ শিল্পের পর মৎস খাতটি ক্রমেই প্রসিদ্ধ খাতে পরিণত হচ্ছে। চিংড়ি ও ইলিশ রপ্তানি হয়। পর্যায়ক্রমে রুই, কাতল, মৃগেল জাতীয় মাছও ব্যাপক হারে রপ্তানি করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশা করা যায়। মৎস্য সম্পদে দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে হালদা নদীর প্রধানতম ভূমিকা রয়েছে। নদীটিকে যদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং এর স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রাখা যায়, তবে এ থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকার মাছের জোগান আসবে, তাতে সন্দেহ নেই। অথচ বিগত কয়েক বছর ধরে মাছের প্রধানতম উৎস হিসেবে পরিচিত এই নদীটি করুণ পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়। দখল, দূষণ, রাবার ড্যাম নির্মাণ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থেকে শুরু করে হেন কোনো অনাচার নেই যা নদীটিকে নিয়ে করা হয়নি। এর গতিপথও বদলে দেয়া হয়। এ নিয়ে যেমন পত্র-পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, তেমনি দেশের সচেতন মানুষ হালদা রক্ষার আন্দোলন করেছে। বলা যায়, এসব লেখালেখি ও মানুষের সচেতনতায় সরকারকে হালদা রক্ষায় উদ্যোগী করে তুলেছে। সরকার রাবার ড্যাম নিচু করা, বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ এবং নদীর সাত্তার ঘাট থেকে মদুনা ঘাট পর্যন্ত মা মাছ শিকার নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। হালদা নদী রক্ষা কমিটিসহ সচেতন মানুষের কার্যক্রমও কাজে দিয়েছে। যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা কার্যকর হলে যে সুফল পাওয়া যায়, তা এবার নদীটি থেকে রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ থেকে প্রমাণিত হয়েছে। এবার প্রথম দফায় এই ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলেরা আশা করছে, প্রকৃতি ঠিক থাকলে আগামী পূর্ণিমা তিথিতে আবারও মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। যদি তাই হয়, তবে তা বিগত দশ বছরের মধ্যে ব্যতিক্রম ঘটনার জন্ম দেবে। এতে হালদা আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে এবং প্রতি বছরই এর মৎস্য উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
হালদার এই সাফল্য নিশ্চিতভাবেই দেশের জন্য স্বস্তিদায়ক। এ নদী শুধু মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতেই নয়, হাজার হাজার জেলের কর্মসংস্থানেরও মূল ক্ষেত্র। নদীটির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ এবং পরিবেশ রক্ষা করে মা মাছের ডিম ছাড়ার যে উপযুক্ত ও কার্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে, এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। তবে এই সাফল্য ধরে রাখতে সবসময় নদীটির যতœ নিতে হবে। কোনোভাবেই যাতে দখল, দূষণ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কবলে না পড়ে তার জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীটিকে হেরিটেজ হিসেবে গণ্য করে এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। কারণ এ ধরণের মিঠাপানির মাছের প্রজনন ক্ষেত্র বিশ্বে খুব বেশি নেই। কাজেই নদীটি রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সবসময় আন্তরিক থাকতে হবে। উল্লেখ করা দরকার, সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু ও পোনা উৎপাদন করে যেসব স্থানে চাষ করা হবে, সেখানেও যতেœর প্রয়োজন। পুকুর, দীঘি, জলাশয়ে যাতে পোনা যথাযথভাবে বড় হয়ে পূর্ণাঙ্গ মাছে পরিণত হতে পারে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকতে হবে। তাহলেই মৎস্য উৎপাদনে প্রকৃত সাফল্য আসবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেকর্ড পরিমাণ
আরও পড়ুন