পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবী মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা সন্তুষ্ট হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাদার অফ এডুকেশন’ উপাধিতে ভূষিত করে আন্দোলন স্থগিত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়, কোটা বিষয়ক ইস্যুটির সমাধান হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা পরবর্তী কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক কোটা বিরোধী আন্দোলনের তিন যুগ্ম-আহ্বায়ককে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং প্রচ্ছন্নভাবে তাদের হুমকি দেয়াসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানির মতো ঘটনাগুলো আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে বলেও পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখানো এবং হল থেকে অনেককে বের করে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এবং ছাত্রলীগ নেত্রীর নির্যাতনের প্রতিবাদ করে এখন আতঙ্কে রয়েছে কবি সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ ছাত্রীরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক ছাত্রীর মোবাইল চেক করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগে কর্তৃপক্ষ হল থেকে বের করে দিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আট ছাত্রীকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে দাবী করেছে সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের এক যুগ্ম আহ্বায়ক। অন্যদিকে একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হল প্রশাসন ২০ ছাত্রীকে হল ত্যাগে বাধ্য করে। জানা যায়, রাতে হলের ফ্লোরে ফ্লোরে হাউস টিউটররা পাহারা বসান। মূলত যে ২৬ ছাত্রী ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, প্রথমে তাদের বিচার করছে হল প্রশাসন।
একটি বিষয় মীমাংসিত হওয়ার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের এভাবে হয়রানি ও হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা দুঃখজনক। এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত কর্মকান্ড নতুন করে যে সমস্যা সৃষ্টি করবে, তাতে সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে হল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার নিয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদে নেমেছে। পাশাপাশি তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাংচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা চার মামলা প্রত্যাহারের জন্য সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। আন্দোলনকারী নেতারা আশঙ্কা করছে, এসব মামলার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হতে পারে। তাদের এ আশঙ্কা অমূলক নয়। বিগত কয়েক বছরের ইতিহাসে দেখা গেছে, যেসব মামলায় অজ্ঞাতদের আসামী করা হয়, তা বিরোধীমত ও পথের লোকজন কিংবা নিরীহদের ফাঁসানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। কোটাবিরোধীদের ক্ষেত্রে যে এ অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ শঙ্কা থেকেই তারা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতীয়মাণ হয়, কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ হয়রানি ও হুমকির মুখে রয়েছে। এ ধরনের আচরণ তাদের ওপর এক ধরনের প্রতিশোধ নেয়ার শামিল। অথচ যে দাবী প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন, তা প্রত্যেকেরই মেনে নেয়া উচিত। এ নিয়ে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা বা হল থেকে বের করে দেয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একটি আন্দোলনে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়। তবে তা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বাঞ্চনীয়। তা না করে গড়পড়তা দায়ী করার মাধ্যমে হল থেকে বহিষ্কার ও হয়রানি করা যুক্তিযুক্ত নয়। বলা বাহুল্য, এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। এমনিতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশের উদ্ধত আচরণ ও অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে, তার উপর যদি কোটাবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হয়, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গণের সার্বিক পরিস্থিতি পুনরায় অশান্ত হয়ে উঠতে পারে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন কোনো দলীয় বিষয় ছিল না। এ আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। তাদের দাবী যৌক্তিক বিধায় সরকার তা মেনে নিয়েছে। পরবর্তীতে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের একের পর এক যেসব হয়রানিমূলক ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে, তাকে দুর্ভাগ্যজনক ও উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বুঝতে হবে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা আমাদেরই সন্তান। ভয়-ভীতি নয়, তাদের প্রতি সদয় আচরণ করা উচিত ও সঙ্গত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে খুবই সংবেদনশীলতার সাথে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। কারো পক্ষ নিয়ে বা বিদ্বেষমূলক মনোভাব নিয়ে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের বিষয়টি নিরপেক্ষ ও অভিভাবকসুলভ আচরণের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। কর্তৃপক্ষের আচরণে যাতে এটা প্রতীয়মাণ না হয় যে, সে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে এ কাজ করছে। আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় যথাযথ সহৃদয়তা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।