পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩৯ বছরের দাবি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃত্বে আদায়
ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেন
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) এর নাম এখনো দেশের আলেম সমাজ, পীর মাশায়েখ ও মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে মাদরাসা শিক্ষার মান এবং শিক্ষকদের মর্যাদা বেড়েছে। মাদরাসার শিক্ষকরা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া রুপসা থেকে পাথুরিয়া দেশের যেখানেই আলেম সমাজ ও মাদরাসার শিক্ষকরা সমাবেত হন; মাহফিল করেন সেখানেই মাওলানা এম এ মান্নানের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করতে দেখা যায়। মাদরাসা শিক্ষার প্রসার, মাওলানা মান্নান, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এই তিন শব্দ যেন একই সুত্রে গাঁথা।
স্বতন্ত্র মাদরাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার প্রথম দাবি তোলা হয় ১৯৭৬ সালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে মাদরাসা শিক্ষকদের অনুষ্ঠানে। দাবি তোলেন অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, সাবেক মন্ত্রী, দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ)। ৮০’র দশকে বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার সম্মেলনসমূহ বিশেষ করে ১৯৮৫ সালের রমনা গ্রীণে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক সম্মেলনে প্রধান দাবিই ছিল মাদরাসা অধিদপ্তরের। ৭৬’র পর থেকে প্রতিটি সরকারের কাছে অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানিয়ে আসলেও সাড়া দেয়নি কোন সরকারই। দীর্ঘ প্রায় ৩৯ বছর ধরে সেই দাবি আদায়ে অবিরাম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। মাওলানা এম এ মান্নান (রহঃ) ১৯৭৬ সালে যে দাবি প্রথম উত্থাপন করেছিলেন; তাঁর সেই সংগঠনই দীর্ঘ প্রচেষ্টা এবং ধারাবাহিকতায় বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের সুদৃঢ় নেতৃত্বের ওই দাবী সরকার বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্ব সারাদেশের মাদরাসা শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে সাধারণ এবং মাদরাসা শিক্ষার কার্যক্রম একই সাথে পরিচালিত হয়ে আসছিল। সেখানে পদ্ধতিগত নানা দিক এবং সুযোগ-সুবিধায় মাদরাসা শিক্ষকরা ছিলেন অনেকটা বঞ্চিত ও অবহেলিত। অধিদপ্তরের প্রশাসনিক পদেও সুযোগ পেতেন না মাদরাসার শিক্ষকরা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের কাজ করতেও নানা সময় হয়রানির অভিযোগ ছিল তাদের। শিক্ষকদের অভিযোগ, অবহেলা দূর করতে এবং স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে উচ্চ পদে মাদরাসা শিক্ষকদের নিয়োগের কথা চিন্তা করেই মাদরাসা শিক্ষার জন্য পৃথক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য জোরালো ভূমিকা নেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদরাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের ঘোষণা দেয়। শিক্ষানীতি ২০১০-এ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। শিক্ষানীতিতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে দ্রæত ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠাসহ মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বেশকিছু দাবি জানান জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেন। গত ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অধিদপ্তরের বিষয়ে জোর দাবি জানান। জমিয়াত সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে দাবির যৌক্তিকতা এবং আলেম-ওলামাদের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এর ফলে সরকার মাদরাসা শিক্ষার জন্য পৃথক একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবির সমর্থনে সরকার মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে মাদরাসা শিক্ষাকে তার গৌরব ও মর্যাদা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালের ৫ জুলাই অধিদপ্তেেরর যাত্রা শুরু হওয়ার পর জনবল নিয়োগ করা হয়েছে।
সরকার অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এর কার্যক্রমকে গতিশীল করতে নিয়েছে নানা উদ্যোগও। অধিদপ্তরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য হাতে নিয়েছে ১২টি প্রকল্প। ইতোমধ্যে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৭ হাজার ৬১৮টি মাদরাসায় এক লাখ ৪৭ হাজার ৮০০ শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও (বেতন) দেয়া হচ্ছে। এক হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ী মাদরাসায় ৪ হাজার ৫২৯জন শিক্ষককে প্রদান করা হচ্ছে অনুদান। শিক্ষকদের বিষয়ভিক্তিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে দুই হাজার ৫১৮জন শিক্ষককে। মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের জন্য গাইড বইয়ের ব্যবহার বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এছাড়া ইস্টাবিøশম্যান্ট অব মাদরাসা এডুকেশনাল ম্যানেজম্যান্ট এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (মমিস) সাপোর্ট ইন দ্যা ডিরেক্টর অব মাদরাসা এডুকেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ইস্টাবিøশম্যান্ট অব মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ফর মাদরাসা প্রকল্পও চলমান। ইবতেদায়ী পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে উপবৃত্তি প্রদান এবং মাধ্যমিক হতে কামিল পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদানের জন্য ডিপিপি তৈরি করে পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। বিজ্ঞান ল্যাব ও লঙ্গুয়েজ ল্যাবসহ ১০০টি মাদরাসায় দ্বিতল বিশিষ্ট ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ডিপিপি এবং ১৫ হাজার মাদরাসায় ফিডিং প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে প্রেরণ করেছে মাদরাসা অধিদপ্তর। সাধারণ শিক্ষা ধারার ন্যায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ৬৭টি টি মাদরাসায় অনার্স চালু এবং ৩৫টি মডেল মাদরাসা স্থাপন করা হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তিতে মাদরাসায় শিক্ষায় শিক্ষিতদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে ৩১টি মাদরাসায় ল্যাব স্থাপন এবং ৬৫৩টিতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন, এই অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার খুব অল্পদিন হলেও ইতোমধ্যে আমরা মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, তাদের এমপিও প্রদান, ইবতেদায়ী শিক্ষকদের অনুদান দিয়েছি। সারাদেশে ৩১টি মাদরাসায় ল্যাব প্রতিষ্ঠা, ৬৫৩টি মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ইবতেদায়ীতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে উপবৃত্তি প্রদান এবং মাধ্যমিক হতে কামিল শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞান ল্যাব ও লঙ্গুয়েজ ল্যাবসহ ১০০টি মাদরাসায় দ্বিতল বিশিষ্ট ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ডিপিপি এবং ১৫ হাজার মাদরাসায় ফিডিং প্রকল্পের ডিপিপি কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আরও কিছু প্রকল্প প্রস্তাবাধীন রয়েছে যা খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন হবে। তিনি আরও জানান, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তার কাছে শিক্ষকসহ অধিদপ্তরে যারা কাজ নিয়ে আসবেন তারা যাতে সহজে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য কর্মকর্তার রুমের দরজা খোলা থাকে।
সরেজমিনে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে মহাপরিচালকের কথার সত্যতাও পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক থেকে শুরু করে সকল কর্মকর্তার রুমের দরজা সব সময় খোলা দেখা যায়। যে কোন ব্যক্তি যে কোন কর্মকর্তার রুমে প্রবেশ করতেও কোন রকম বাধা পেতে দেখা যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।