Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মি’রাজের অলৌকিক ঘটনাবলী

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

যখন ইসলামের সবচেয়ে নাজুক ও সঙ্কটপূর্ণ যুগ সমাপ্ত হওয়ার পথে ছিল এবং হিজরতের পর হতে শান্তি ও নিরাপত্তার এক নতুন যুগের শুভ সূচনা অত্যাসন্ন ছিল, তখন সেই বরকতময় রাতের আগমন ঘটল এবং সে মোবারক রাতে সৌভাগ্যের সে সময় এগিয়ে এলো, যা মহাশূন্যের বাগানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। যার মাঝে আল্লাহর দরবার হতে নির্দিষ্ট আহকামের বিধিবদ্ধ হওয়ায় এবং তা কাজে পরিণত করার নির্দেশাবলী ছিল। তাই জান্নাতের দারোগা রিদওয়ানকে হুকুম দেয়া হলো যেন আজ অদৃশ্য জগতের মেহমান খানাকে নতুন সাজ-সরঞ্জামে সুসজ্জিত করা হয়। আজ বিশ্ব প্রত্যক্ষকারী মেহমান হয়ে আসবেন। রুহুল আমিনকে হুকুম দেয়া হলো, বিদ্যুৎ হতে দ্রুতগামী, আলো হতে অধিক চঞ্চল যানবাহন, যা লাহুত জগতের মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত, হেরেমে ইব্রাহীমে (কাবা) যেন তা নিয়ে উপস্থিত হন। কার্যকর উপাদানসমূহকে নির্দেশ দেয়া হল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের যাবতীয় বস্তুভিত্তিক নিয়ম-নীতি যেন কিছুক্ষণের জন্য নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয় এবং স্থান-কাল, ভ্রমণ, একামত, দর্শন, শ্রবণ ও বাক্য বিন্যাসের সকল সহজাত নিয়মাবলী যেন উঠিয়ে নেয়া হয়।
মি’রাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) খানায়ে কাবাতেই ছিলেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যা আমরা হযরত আবু জার (রা.)-এর বর্ণনার মাঝে দেখতে পাই। হযরত আবু জার (রা.)-এর বর্ণনায় আছে যে, ‘আমি মক্কাতে ছিলাম এবং আমার গৃহের ছাদ খুলে গেল এবং হযরত জিব্রীল আগমন করলেন।’ আমাদের মতে, এই হাদীসের সহীহ বিশ্লেষণ হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) খানায়ে কাবাতেই আরাম গ্রহণ করতে ছিলেন কিন্তু তার প্রত্যক্ষ দর্শন তাঁকে তাঁর গৃহে সমুপস্থিত করেছিল তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যেন তার গৃহের ছাদ খসে পড়েছে এবং তখনই হযরত জিব্রীল (আ.) অবতরণ করেছিলেন। সজাগ এবং নিদ্রার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলেন, তিনি দেখলেন তাঁর গৃহের ছাদ খুলে গেছে। হযরত জিব্রীল (আ.) নাজিল হয়েছেন। তাঁর সাথে কতিপয় ফেরেশতাও রয়েছেন। প্রথমে তিনি তাকে জমজম কূপের নিকট নিয়ে গেলেন এবং সেখানে তাঁর সীনা মোবারক চাক করলেন। পবিত্র কলবকে বের করে জমজমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। তারপর ঈমান ও হেকমতপূর্ণ একটি স্বর্ণের তস্তরী আনা হল। জিব্রীল সে তস্তরী হতে ঈমান ও হেকমতের খাজানা তুলে নিয়ে তাঁর সীনা মোবারকে রেখে দিলেন এবং তা পূর্ববৎ করে দিলেন।
এরপর গর্দভ হতে বড় এবং খচ্চর হতে ছোট সাদা রংয়ের একটি লম্বা জানোয়ার বোরাক আনা হলো। যার দ্রতগামিতার হাল ছিল এই যে, চোখের দৃষ্টির প্রান্তসীমায় তাঁর কদম পড়তে ছিল। মোসনাদে আহমদ, তিরমিজী ও ইবনে জারীর তাবারীতে আছে, যখন তিনি বোরাকের উপর আরোহণ করতে ইচ্ছা করলেন, তখন তা নতুন-কুর্দন শুরু করে দিল। জিব্রীল জিজ্ঞেস করলেন, এমন করছ কেন? তোমার পীঠে আল্লাহর প্রিয় হাবীব মোহাম্মদ (সা.) হতে অধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত ও মর্যাদাশীল কেউ আরোহণ করেননি। এ কথা শুনে বোরাক ঘর্মাক্ত হয়ে গেল। ইবনে জারীরের বর্ণনা সম্পর্কে হাফেজ ইবনে কাসীর লিখেছেন, এর কোন কোন শব্দে দুর্বলতার ও অস্পষ্টতা আছে। এর বর্ণনা সম্পর্কে তিরমিজী লিখেছেন, এর বর্ণনাটি গরীব বা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপর আরোহণ করে বাইতুল মুকাদ্দাস গমন করলেন এবং বোরাকটিকে সেই কড়ার সাথে বাঁধলেন যেখানে অন্যান্য আম্বিয়াগণ নিজেদের সওয়ারী বেঁধে ছিলেন। তারপর বাইতুল মুকাদ্দাসে গমন করে সেখানে দু’ রাকায়াত নামাজ আদায় করলেন। বের হওয়ার পর জিব্রীল সরাব এবং দুধের দুটি পেয়ালা তার সামনে পেশ করলে তিনি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলেন। জিব্রীল বললেন, আপনি ফিতরাত ও সহজাত স্বভাবকে পছন্দ করেছেন। যদি শরাবের পেয়ালা গ্রহণ করতেন তাহলে আপনার উম্মত গোমরাহ হয়ে যেত। তারপর জিব্রীল (আ.) তাঁকে নিয়ে প্রথম আকাশের দিকে উঠলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি দ্বাররক্ষীকে ডাকলেন। তিনি বললেন, কে? জিব্রীল নিজের নাম প্রকাশ করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে আর কে আছেন? উত্তর দিলেন, মোহাম্মদ (সা.)। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, তবে কি তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে? উত্তর দিলেন, হাঁ। এ কথা শুনে ফেরেশতা দরজা খুলে দিলেন এবং মারহাবা বলে খোশ আমদেদ জানালেন। তারপর বললেন, এ সংবাদ শুনে আকাশবাসীরা খুশী হবেন। আল্লাহপাক দুনিয়াবাসীদের সাথে যা কিছু করছেন, তৎসম্পর্কে আসমানবাসীদের অবহিত না করা পর্যন্ত তারা কিছুই জানতে পারে না। তারপর তিনি আকাশে প্রবেশ করতেই একজন বৃদ্ধ লোককে দেখতে পেলেন যার ডানদিকে ও বামদিকে অসংখ্য প্রাণশক্তি ছিল। তিনি যখন ডানদিকে নজর করেন, তখন হাসেন এবং যখন বামদিকে নজর করেন তখন কাঁদেন। তিনি তাকে দেখে বললেন, মারহাবা। হে পূণ্যবান নবী ও পূণ্যবান সন্তান! তিনি জিব্রীলকে জিজ্ঞেস করলেন, এ বৃদ্ধটি কে? জিব্রীল বললেন, তিনি আপনার পিতা হযরত আদম (আ.)। তার ডানদিকে ও বামদিকে যে প্রাণ শক্তিগুলো রয়েছে সেগুলো তার সন্তানাদির দেহ। এর মাঝে ডান-দিকেরগুলো জান্নাতী এবং বামদিকেরগুলো দোযখী। এ জন্য ডানদিকে তাকালে তিনি আনন্দিত হন এবং বাম দিকে তাকালে ব্যথিত হন। এই আকাশে তিনি সম্মুখভাগে দুটো নদী দেখতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলে হযরত জিব্রীল বললেন, এগুলো হচ্ছে নীল ও ফোরাতের প্রবাহ। তারপর প্রবাহিত অন্য একটি নদী তাঁর নজরে পড়ল। যার মাঝে মতি ও জবরজদ পাথরের নির্মিত একটি মহল ছিল এবং তার অঙ্গন ছিল মেশক দ্বারা পরিপূর্ণ। জিব্রীল বললেন, ‘এটা নহরে কাউসার যা নির্দিষ্টভাবে আল্লাহপাক আপনার জন্য রেখেছেন।’ এমনিভাবে তিনি প্রত্যেক আকাশ অতিক্রম করলেন এবং দ্বাররক্ষী ফেরেশতাগণ একই রকম প্রশ্নাবলী জিব্রীলকে জিজ্ঞেস করলেন এবং প্রত্যেক আকাশেই কোন না কোন পয়গাম্বরের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। দ্বিতীয় আকাশে হযরত ইয়া হইয়া এবং ঈসা (আ.)-এর সাথে মোলাকাত হলো। তারা ছিলেন উভয়ে খালাত ভাই। তৃতীয় আকাশে হযরত ইউসুফের সাথে দেখা হলো। তাকে সৌন্দর্যের একটি অংশ প্রদান করা হয়েছিল। চতুর্থ আকাশে হযরত ইদ্রিস (আ.)-এর সাথে মোলাকাত হয় যার সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে আল্লাহর পাক বলেছেন, ‘আমি তাকে একটি বুলন্দ মোকামে উঠিয়ে নিয়েছি’। পঞ্চম আকাশে হযরত হারূনের সাথে মিলিত হলেন এবং সকলেই তাঁকে পূণ্যবান পয়গাম্বর এবং পূণ্যবান ভ্রাতা বলে অভ্যর্থনা জানালেন। ষষ্ঠ আকাশে হযরত মুসা (আ.)-এর সাথে মোলাকাত হলো। মারহাবা হে পূণ্যবান পয়গাম্বর এবং পূণ্যবান ভ্রাতা বলে তিনি তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন সামনে অগ্রসর হলেন তখন হযরত মুসা কেঁদে উঠলেন। আওয়াজ আসল, হে মুসা। এ কান্নার কারণ কি? মুসা বললেন, হে বারে ইলাহী। আমার পরবর্তীকালে এই নওজোয়ানকে আপনি প্রেরণ করেছেন। আমার উম্মতের চেয়ে তাঁর উম্মত অধিক সংখ্যক জান্নাতে প্রবেশ করবে এই জন্যই আমি কাঁদছি। তারপর তিনি সপ্তম আকাশে প্রবেশ করলে হযরত ইব্রাহীম (আ.) মারহাবা হে পূণ্যবান পয়গাম্বর ও পূণ্যবান সন্তান বলে অভ্যর্থনা জানালেন। জিব্রীল বললেন, ‘তিনি আপনার পিতা ইব্রাহীম।’ হযরত ইব্রাহীম বায়তুল মামুরে (আবাদগৃহ) ঠেস দিয়ে বসেছিলেন যার মাঝে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে। তারপর তাঁকে জান্নাতে পরিভ্রমণ করানো হলো। এর গম্বুজ ছিল মতির তৈরি এবং জমিন ছিল মেশকে পরিপূর্ণ। তারপর তিনি ঐ মোকামে পৌঁছলেন যেখানে কুদরতী কলমের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তিনি সিদরাতুল মুন্তাহা (প্রান্তসীমার বরই বৃক্ষ) পর্যন্ত পৌঁছলেন। এ বৃক্ষের উপর আল্লাহর নির্দেশের শান প্রতিবিম্বিত হচ্ছিল এবং শানে রাব্বানী তাকে আচ্ছাদিত করার পর তার আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে সৌন্দর্যের এমন এক মূর্ত বিকাশ ঘটেছিল যা কোনও ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এর মাঝে রং-বেরং-এর এমন সব নুরের তাজাল্লী নজরে পড়ল, যা কোনভাবে প্রকাশ করা যায় না। এটা ঐ মোকাম যেখানে থেকে উপরের বস্তুগুলো জমিনে অবতরণ করে এবং জমিনের বস্তুগুলো উত্থিত হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করে। এখানে উপস্থিত হওয়ার পর হযরত জিব্রীল আমিন স্বীয় আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে উপস্থিত হলেন। তারপর প্রচ্ছন্ন অবিনশ্বরের সাক্ষী স্বীয় চেহারার পর্দা হটিয়ে দিলেন এবং নির্জন স্থানে গোপন ভেদ প্রকাশের পয়গামসমূহ প্রদান করা হলো। যেগুলোর সাবলীলতা ও পবিত্রতাকে ভাষার বাঁধনে উপস্থাপিত করা যায় না। অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ) স্বীয় বান্দাহর প্রতি যা কিছু প্রত্যাদেশ করার ছিল তা প্রত্যর্পণ করলেন।
তখন তিনি আল্লাহর দরবার হতে তিনটি উপহার লাভ কররেন। সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যার মাঝে ইসলামের আকায়েদ ও ঈমানের পরিপূর্ণতা এবং দূরবর্তী বিপদসমূহের বিলোপ সাধনের বেশারত রয়েছে। তারপর বিশেষ রহমতের সংবাদ শুনানো হলো যে, উম্মতে মুহাম্মদীর মাঝে যে ব্যক্তি শিরকের সাথে সম্পৃক্ত হবে না সে ক্ষমা এবং অনুকম্পার দ্বারা সৌভাগ্যশীল হবে। তারপর ঘোষণা আসল যে, আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ উপটোকনসহ প্রত্যাবর্তন করলেন এবং হযরত মুসা (আ.)-এর নিকটে উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর দরবার হতে কি নির্দেশাবলী প্রদান করা হয়েছে? উত্তর করলেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। মুসা বললেন, আমি বনী ইস্রাঈলদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। আপনার উম্মতগণ এ বোঝা বহন করতে পারবে না। সুতরাং আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করে আরজ করুন, হে বারে ইলাহী! আমার উম্মত নেহায়েত কমজোর এবং দুর্বল। হুকুম হলো: দশ ওয়াক্ত নামাজ মাফ করা হলো। তারপর তিনি প্রত্যাবর্তন করলে হযরত মুসা দ্বিতীয়বার আরজ নিবেদন করার পরামর্শ দিলেন। এতে করে আরও দশ ওয়াক্ত মাফ করা হলো। এমনিভাবে তিনি হযরত মুসা (আ.)-এর পরামর্শক্রমে কয়েকবার আল্লাহর দরবারে আরজ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অবশিষ্ট রইল। হযরত মুসা এবারও পরামর্শ দিলেন যে, আরও কম করার দরখাস্ত পেশ করুন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর দরবারে পুনর্বার আরজ করতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এমন সময় ঘোষণা করা হলো, হে মুহাম্মদ (সা.), আমার হুকুমের কোনই পরিবর্তন নেই, নামাজ পাঁচ ওয়াক্তই থাকবে কিন্তু প্রত্যেক ওয়াক্তের নেকীর বিনিময় দশগুণ করা হবে। ফলে পাঁচবারের মাঝেই পঞ্চাশ ওয়াক্তের ছাওয়াব পাওয়া যাবে। এই ঘোষণা সর্বত্র জারী করা হলো।
তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) আকাশ হতে অবতরণ করে জমিনে তশরীফ আনলেন এবং বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, এখানে আম্বিয়াগণ সমবেত হয়েছেন। হযরত মুসা এবং হযরত ইব্রাহীম (আ.) নামাজ আদায়ে রত ছিলেন। তিনি পয়গাম্বরদের মাঝে কারো কারো আকার-আকৃতি বর্ণনা করেছিলেন, হযরত মুসা সম্পর্কে বলেছিলেন যে, তিনি ছিলেন দীর্ঘাবয়বধারী এবং লোহিতভ রংয়ের এবং তার অগোছালো প্রলম্বিত চুলের গোছা ছিল। মনে হচ্ছিল, তিনি যেন আজদে শানুহ গোত্রের লোক। হযরত ঈসার দেহাবয়ব ছিল মধ্যমাকৃতির এবং গায়ের রং ছিল লাল-সাদা মিশানো। মাথার চুল ছিল সোজা এবং লম্বা। মনে হচ্ছিল, তিনি যেন এই মাত্র গোসল করে এসেছেন। উরওয়াহ বিন মাসুদ সাকাফী সাহাবীর সাথে তাঁর আকৃতির মিল ছিলো। আর হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর আকৃতি ছিল, তোমাদের এই পয়গাম্বরেরই মতো। মোট কথা ইত্যবসরে নামাজের সময় (সম্ভবত ফজরের নামাজ) উপস্থিত হলো। সারয়ারে আম্বিয়া (সা.) ইমামতের দায়িত্ব পালন করলেন। মুসনাদে আহমদ এবং ইবনে ইসহাকের কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, আকাশে গমন করার পূর্বেই বায়তুল মুকাদ্দাসে অন্যান্য আম্বিয়াগণ তাঁর পিছনে নামাজ আদায় করেছিলেন। কিন্তু সহীহ বুখারীতে এর উল্লেখ নেই এবং সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু পূর্বাপর দিক নির্দেশনা থেকে বুঝা যায় যে, এটা ছিল প্রত্যাবর্তন কালেরই ঘটনা। হাফেজ ইবনে কাসীর এটাকেই সহীহ বলে লিখেছেন। (তফসীরে সূরা আসরা) আমরা তাঁরই অনুসরণ করছি। তিরমিজী এবং মুসনাদে ইবনে হাম্বলে হযরত হোযাইফা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি এ অভিমত পোষণ করতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মি’রাজে গমন ও প্রত্যাবর্তনকালে নামাজই আদায় করেননি। কিন্তু সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বিপরীতে কেউ তার অভিমতকে গ্রহণ করেনি।
নামাজ হতে ফারেগ হওয়ার পর আওয়াজ আসল, হে মুহাম্মদ (সা.)! ইনি হচ্ছেন দোযখের দারোগা। তাকে সালাম করুন। তিনি মোড় ঘুরে দেখলেন। সঙ্গে সঙ্গে দোজখের দারোগা তাঁকে সালাম করলেন। সহীহ বুখারীতে হযরত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত আছে, শবে মি’রাজে দাজ্জালকেও দেখান হয়েছিল। (সৃষ্টির প্রারম্ভ অধ্যায়) এ সকল অধিষ্ঠান অতিক্রম করার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে হারাম (কা’বা)-এ নিজেকে প্রত্যুষে সজাগ পেলেন। এ সকল ঘটনাবলী সহীহ বুখারী এবং মুসলিমের বিভিন্ন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত আছে। আমরা এগুলোকে পর্যায়ক্রমে সুসজ্জিত করেছি মাত্র।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন