পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কোটা প্রথা সংস্কারের দাবীতে শিক্ষার্থী ও চাকুরী প্রার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পুলিশি হামলা ও সংর্ঘষে রক্তাক্ত হয়েছে। তবে রবিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড, মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের সরকারী বাসভবনে যে ন্যাক্কার জনক হামলা ও তান্ডব চালানো হয়েছে, তা নজিরবিহীন। শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধি আন্দোলনের গতিপ্রকৃতির সাথে এ হামলার কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কালো মুখোশধারি ও হেলমেট পরিহিত হামলাকারীরা ভিসির বাসভবনের প্রধান ফটক ভেঙ্গে বাসায় ঢুকে গ্যারেজে থাকা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, বাসার আসবাবপত্র ভেঙ্গে লন্ডভন্ড করে, আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে। এ ঘটনা অত্যন্ত দু:খজনক ও নিন্দনীয়। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সারাদেশে প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী ও চাকুরীপ্রার্থীদের কোটা প্রথা সংস্কারের দাবী সংগত কারণেই সাধারণ মানুষ এবং বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পেয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, সরকারের তরফ থেকে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবী পূর্নমূল্যায়ণের প্রাথমিক আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবী আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন যতই দিন গড়াচ্ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা ততই এর সাথে জড়িত সম্পৃক্ত হচ্ছে। গত শনি ও রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসলে তা ছাত্র-গণআন্দোলনের মত রূপ গ্রহণ করে।
কোটাপ্রথা সংস্কার বা এ জাতীয় ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বা ভিসির কোন ভ‚মিকা নেই। কোটা প্রথা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলনকারীরা ভিসির কাছে কোন দাবী জানায়নি। অতএব মধ্যরাতে ভিসির বাসার হামলার সাথে আন্দোলনকারীদের সম্পৃক্ততার বাহ্যত কোন যৌক্তিক কারণ নেই। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর আক্তারুজ্জামানও তার বাসায় হামলার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা জড়িত থাকতে পারেনা বলে মন্তব্য করেছেন। তবে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ কর্মীরাও আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলন দমনে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের মাত্রা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করতেই ভিসির বাসভবনে নাশকতা সৃষ্টি করার মত ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে আন্দোলন সমর্থকরা দাবী করেছেন। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শত শত পুলিশ এবং ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দখলে থাকলেও ভিসির বাসভবনে ঘন্টাধিককাল ধরে হামলা চালিয়ে মুখোশধারিরা কিভাবে পার পেয়ে গেল তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে থাকা আন্দোলনরত হাজার হাজার শিক্ষাথীর মধ্যে কাউকে মুখোশ বা হেলমেট পরিহিত দেখা যায়নি। মধ্যরাতে কালো মুখোশ পরা যে ব্যক্তিরা ভিসির ভবনে হামলা চালিয়েছে তাদের তৎপরতাকে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। উপজাতীয়সহ সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠিকে এগিয়ে নিতে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে যে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল, তা ছিল সময়ের দাবী। তবে সে প্রথা ক্রমে বিস্তৃত হয়ে আজকে যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে তা বৈষম্য নিরসন ও সমাজ প্রগতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পদ্ধতিতে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। কোটার নামে মেধাবীদের বঞ্চিত রেখে সামাজিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, স্বল্পন্নোত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রাথমিক মান অর্জনে সক্ষম হয়েছে, তখন আমাদের সামনে রাজনৈতিকÑঅর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান ও আগামীর প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার দায়িত্ব মূলত সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর। সরকার যতই আত্মতুষ্টিমূলক ফিরিস্তি তুলে ধরুক, সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা এবং মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন মেসেজ দিচ্ছে। এমনকি বিশ্বব্যাংকের মত সংস্থাও বাংলাদেশ সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির দাবীর সাথে ভিন্নমত পোষন করছে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা ও লুটপাট চলছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ না থাকায় দেশে আশানুরূপ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান না হওয়ায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এহেন পরিস্থিতিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের আন্দোলনকে কোন রাজনৈতিক মোড়কে দেখার সুযোগ নেই। রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, সংঘাতময় সামাজিক পরিবেশ জিইয়ে রেখে অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে একটি রাজনৈতি সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া অপরিহার্য। কোটা ব্যবস্থা পুর্নমূল্যায়নে সরকারের আশ্বাস যথাযথভাবে কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থী ও চাকুরীপ্রার্থীদের আন্দোলনকে পুলিশ দিয়ে নির্মূল করার চেষ্টা এবং মধ্যরাতে ভিসির বাসভবনে হামলা, ভাঙ্গচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাক, তাদেরকে চিহ্নিত করে দ্রæত বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবে পুলিশি হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।